ইলেকট্রিক শক দেয়ার সময় আমি ভীষণভাবে কাঁপছিলাম, জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম!-একুশে মিডিয়া - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Tuesday 27 November 2018

ইলেকট্রিক শক দেয়ার সময় আমি ভীষণভাবে কাঁপছিলাম, জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম!-একুশে মিডিয়া


একুশে মিডিয়া, আন্তর্জাতিক রিপোর্টা:
মিহিরগুল তুরসুনের জন্ম চীনের উইঘুর প্রদেশে। প্রাথমিকের পাঠ চুকিয়ে মিশরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি পড়তে যান। সেখানেই প্রেম-বিয়ে। একে একে মা হন তিন সন্তানের। কিন্তু পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে নিজের তিন সন্তানকে নিয়ে ২০১৫ সালে চীনে ফেরেন মিহিরগুল। এরপরই বদলে যায় তার জীবন।
বাচ্চাদের থেকে আলাদা করে তাকে বন্দিশিবিরে নিয়ে যায় চীন সরকার। বিভিন্ন দফায় তাকে তিনবার আটক করা হয়। চালানো হয় নারকীয় অত্যাচার। মাকে না পেয়ে অযত্নে মারা যায় তার ছোট সন্তান। বাকি দুই সন্তানও এখন দুরারোগ্য অসুখের শিকার।
সোমবার ওয়াশিংটনে চীনের উইঘুর প্রদেশের মুসলিমদের ওপর দেশটির সরকারের এই বর্বরতার কথা শোনাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন মিহিরগুল তুরসুন। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবে পৃথিবীর ২৬টি দেশের ২৭০ জন গবেষক ও সমাজকর্মী উইঘুরদের ওপর অত্যাচার নিয়ে সারা পৃথিবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে যৌথ বিবৃতি দেন। সেখানেই আনা হয়েছিল মিহিরগুল তুরসুনকে।
মিহিরগুল বলেন, অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিল। আমি বারবার তাদের কাছে আমাকে মেরে ফেলতে অনুরোধ করেছি। ২০১৫ সালে দেশে ফেরার পর তাকে তিন মাসের জন্য বন্দিশিবিরে আটকে রাখা হয়েছিল। এই সময়ই মারা যায় তার ছোট সন্তান। শুধু তাই নয়, বাকি দুই সন্তানের ওপরও বিভিন্ন ডাক্তারি পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন মিহিরগুল।
দুই বছর পর আবারও বন্দিশিবিরে আটকে রাখা হয় তাকে। কয়েক মাস বন্দি রেখে অত্যাচার চালানোর পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। সাত মাস পর আবারও আটক করা হয়। এই দফায় তাকে তিন মাস বন্দিশিবিরে রাখা হয়েছিল।
মিহিরগুল জানান, বন্দিদশায় তাকে বিভিন্ন অজানা ওষুধ খেতে বাধ্য করা হতো। এই ওষুধ খেয়ে অনেক সময়ই জ্ঞান হারিয়ে ফেলতেন তিনি। আর যে রুমে তাকে রাখা হয়েছিল সেখানে তিন মাসের মধ্যে নয় নারী মারা যান।
ভুক্তভোগী এই নারী জানান, তাকে ক্যামেরার সামনে মলমূত্র ত্যাগ করতে হতো। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির স্তুতিতে গান করতে বাধ্য করা হতো বন্দিদের। মিহিরগুল বলেন, একদিন আমাকে ন্যাড়া করে হেলমেটের মতো কিছু একটা পরিয়ে একটা চেয়ারে বসানো হয়। ইলেকট্রিক শক দেয়ার সময় আমি ভীষণভাবে কাঁপছিলাম। যন্ত্রণা আমার শিরা আর ধমনীতে ছড়িয়ে পড়ছিল। তারপর আর কিছু মনে নেই। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। শুধু মনে আছে, আমি উইঘুর বলে ওরা আমাকে গালি দিচ্ছিল।
এই ধরনের বন্দিশিবির থাকা কথা অস্বীকার করেছে চীন সরকার। কিন্তু অপরাধীদের জন্য উইঘুর প্রদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মশালা থাকার কথা জানিয়েছে তারা। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার আড়ালেই বন্দিশিবির চালাচ্ছে বেইজিং।
উল্লেখ্য, উইঘুর প্রদেশের মুসলিমদের ওপর চীন সরকারের অত্যাচারের অভিযোগ এই প্রথম নয়।  চীনের বিভিন্ন বন্দিশিবিরে আনুমানিক ২০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের।
মিহিরগুল তার ওপর চালানো বর্বর নির্যাতনের বর্ণনা করে বলেন, ২০১৭ সালে তাকে যখন দ্বিতীয়বার আটক করে চীন সরকার, তখন তার ওপর বর্বর নির্যাতন চালানো হয়। টানা চারদিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ চারদিন তাকে একদম ঘুমাতে দেয়া হয়নি। মেডিকেল ট্রিটমেন্টের নামে যৌনাঙ্গে যন্ত্র ঢুকিয়ে নির্মম অত্যাচার চালানো হতো। তৃতীয়বার আটকের পর এ নির্যাতন আরও ভয়াবহ রূপ নেয়।
তবে একসময় সন্তানদের নিয়ে মিশর যাওয়ার অনুমতি পান মিহিরগুল। কায়রো পৌঁছেই মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ করে নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানান তিনি। পরে যুক্তরাষ্ট্র তাকে আশ্রয় দেয়। এখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় বসবাস করছেন। আনন্দবাজার সূত্র একুশে মিডিয়া রিপোর্ট।


একুশে মিডিয়া/এমএ

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages