একুশে মিডিয়া ডটকম :
বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদফতর, পরমাণু শক্তি কমিশন (এক্সরে) ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন না নিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা করা আইনত দন্ডনীয় । হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তারদের দেখাশুনা করেন বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, এসব প্রতিষ্ঠানকে ফাঁকি দিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর প্রবর্তক মোড়ে রোগীদের চিকিৎসা ও অপারেশন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সেন্ট্রাল সিটি হাসপাতাল নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিক। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির মালিকের বিরুদ্ধে অঅড়াই বছরের বাড়ি ভাড়া বকেয়ার অভিযোগ উঠেছে। চারতলা ভবন ভাড়া নিয়ে হাসপাতালের যাবতীয় কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও দীর্ঘ সময় তিনি ভাড়া পরিশোধ করেননি ।
জানা গেছে, পরিবেশ ছাড়পত্র নিতে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে জাল চুক্তিপত্র তৈরি করে পরিবেশ অধিদপ্তরে দাখিল করেছেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. রেজাউল ইসলাম। এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর গত ৬ জুন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের একটি দল পরিদর্শন করে ছাড়পত্র ছাড়া হাসপাতাল পরিচালনা এবং অনুমোদনের জন্য জাল দলিল দাখিলের প্রমাণ পান। তাই কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
এদিকে গত ৩১ মে স্বাস্থ্য পরিচালকের অফিসের একটি দল হাসপাতাল পরিদর্শন করে অনুমোদন ছাড়া হাসপাতাল পরিচালনার প্রমাণ পাওয়ায় ডা. রেজাউলের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে নোটিশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. এমএ মজিবুল হক। এতে বলা হয়েছে, দ্য মেডিক্যাল প্রাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ অর্ডিন্যান্স ১৯৮২ লঙ্ঘন করা হয়েছে, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অবৈধভাবে হাসপাতাল পরিচালনার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের শুনানিতে উপস্থিত থাকতে ডা. রেজাউলকে নির্দেশ দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
সরেজমিন পদির্শনে দেখা যায়, হাসপাতালে নিয়মিত রোগী ভর্তি করানো হচ্ছে। এমনকি জটিল রোগের অপারেশনের রোগীও ভর্তি হচ্ছে। এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে হাসপাতালের কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি।
জানা গেছে, বর্তমানে যেখানে সেন্ট্রাল সিটি হাসপাতালের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে, সেটির চারতলা ভবনের নকশার অনুমোদন দিয়েছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভবন মালিকের চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে চারতলার ছাদের ওপর আরও একতলা ভবন নির্মাণ করেছেন মালিককে না জানিয়ে। বিষয়টি সিডিএকে অবহিত করেছেন ভবনের মূল মালিক সৈয়দ মিয়া।
তিনি জানান, ২০১৫ সালে চারতলা ভবনটি ১০ লাখ টাকা জামানত ও মাসে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়ার চুক্তি হয় ডা. রেজাউল ইসলামের সঙ্গে। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী আমাকে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে না। ভাড়া চাইলে প্রশাসন ও প্রভাবশালী লোকদের ভয় দেখানো হয়। বর্তমানে ৩০ মাসের ভাড়া বাকি। কয়েক মাস আগে ডাকযোগে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পাঠালেও আমি গ্রহণ করিনি। চুক্তির শর্ত ভঙ্গ এবং ভবনের নকশা পরিবর্তন করায় আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।
লাইসেন্স ছাড়া হাসপাতাল পরিচালনার সুযোগ নেই জানিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. এমএ মজিবুল হক বলেন, বিষয়টি জানার পর আমরা কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছি। সন্তোষজনক উত্তর দিতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিটি সেন্ট্রাল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. রেজাউল ইসলাম প্রথমে হাসপাতালের লাইসেন্স রয়েছে বলে দাবি করেন। স্বাস্থ্য ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কারণ দর্শাও নোটিশ ও জেলা প্রশাসনের শুনানির বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, আসলে আমরা আবেদন করেছি। অনুমোদনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। চুক্তিপত্র জাল ও ভবনের কাঠামো পরিবর্তনের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আসলে এসব বিষয় ফোনে বুঝানো সম্ভব না।
অন্যদিকে যে ভবনে অনুমোদনহীন হাসপাতাল পরিচালনা করা হচ্ছে, ঐ ভবনের মালিক আবু সৈয়দ জানান, হাসপাতালের মালিক বিগত ত্রিশ মাসের ভাড়া আদায় না করে উল্টো ভাড়ার চুক্তিনামাকে নকল করে তাঁকে বিভিন্নভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। এমনকি ভাড়া নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি না করতে বিভিন্নজনের মাধ্যমে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। ভবন মালিক আরও জানান, আমার অনুমতি না নিয়ে হাসপাতালের মালিক ভবনের চারতলা ফ্লোরে আরও একটি অবৈধ ফ্লোর নির্মাণ করে বিভিন্ন ডাক্তারের নামে চেম্বার খুলে দিয়েছেন।
জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক বলেন, ছাড়াপত্রের জন্য আবেদনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। তবে ছাড়পত্র নেওয়ার আগে আইনগতভাবে হাসপাতালের কার্যক্রম চালাতে পারে না।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, লাইসেন্স ছাড়া হাসপাতাল পরিচালনা বেআইনি এবং অনৈতিক। জনগণের স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো ধরনের হেলা করার সুযোগ নেই। কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে তখন কেউ দায় নেবে না। লাইসেন্স ছাড়াও ডা. রেজাউল বাড়িভাড়ার চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছেন।
No comments:
Post a Comment