একুশে মিডিয়া ডেস্ক:
টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রায় দুই যুগ আগে ডিপথেরিয়া রোগ নির্মূল করা হলেও কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ডিপথেরিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশে সর্বশেষ ডিপথেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির ফলে গত ৩৫ বছরে রোগটি ছিল একপ্রকার অজানা। তবে নতুন করে ফিরে এসেছে গত বছর।
কুতুপালং এমএসএফ ক্লিনিকে গত বছরের ১০ নভেম্বর প্রথম ডিপথেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়। এরপর শুধু বিস্তার বেড়েছে। কক্সবাজারে রোগটি ছড়িয়েছে রোহিঙ্গা শিবিরের বাইরেও।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গত ২৪ জুন পর্যন্ত হিসাবে, ডিপথেরিয়ার লক্ষণ আছে এমন প্রায় আট হাজার জনের তালিকা করা হয়েছে। প্রাণঘাতী এ ব্যাধিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৪২ জন। তাদের সবাই মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী।
ডিপথেরিয়া অত্যন্ত ছোঁয়াচে প্রকৃতির রোগ। সেই সঙ্গে সংক্রামকও। আক্রান্ত ব্যক্তির সান্নিধ্য এমনকি রোগীর জামাকাপড় বা ব্যবহৃত অন্যান্য বস্তুর সংস্পর্শে এলেও ডিপথেরিয়া ছড়াতে পারে। ব্যাধিটি প্রাণঘাতী রূপ ধারণ করতে পারে শিশুদের ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশে ডিপথেরিয়া ফিরে এসেছে রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে। হাম, যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়ার মতো মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধির টিকা তারা পায়নি। এসব রোগের জীবাণু সঙ্গে করেই বাংলাদেশে এসেছে তারা।
রোহিঙ্গারাই যে শুধু ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত তা নয়, তাদের মাধ্যমে রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ডিপথেরিয়ার লক্ষণসহ ৬৯ জন স্থানীয়কে চিহ্নিত করা হয়েছে। জুনের শেষ সপ্তাহেও আক্রান্ত হয়েছে তিনজন স্থানীয় বাসিন্দা। তবে স্থানীয়দের মধ্যে রোগটিতে মৃত্যুর ঘটনা এখন পর্যন্ত নেই।
স্বল্প জায়গায় গাদাগাদি করে থাকার কারণেই রোহিঙ্গাদের মধ্যে রোগটি দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। বর্ষা মৌসুমে তাদের মধ্যে রোগ-ব্যাধি আরো মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন মো. আবদুস সালাম বলেন, টিকা দেয়ার পর রোহিঙ্গা শিবিরে ডিপথেরিয়ার প্রকোপ কমেছে। সপ্তাহে সব দিন ডিপথেরিয়া রোগী শনাক্ত হয় না। রোহিঙ্গারা আগে কোনো ধরনের টিকা না নেয়ায় তাদের মধ্যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তবে এখন রোহিঙ্গারা নিয়মিত টিকার আওতায় আসায় ডিপথেরিয়া মহামারী আকার ধারণ করবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয়দের মধ্যেও ডিপথেরিয়া রোগী শনাক্ত হলেও তারা টিকার আওতায় থাকায় কেউ মারা যায়নি।
ডব্লিউএইচও, ইউনিসেফ ও প্যান আমেরিকান হেলথ অর্গানাইজেশনের (পিএএইচও) তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা ও স্থানীয় মিলে গত মাস পর্যন্ত ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত মানুষ পাওয়া গেছে ৭ হাজার ৮২৩ জন।
সাধারণত শিশুদের অন্যান্য রোগের টিকার সঙ্গে মিশ্রিত অবস্থায় চার ডোজে ডিপথেরিয়ার টিকা দেয়ার সুপারিশ রয়েছে। সাধারণত দুই, চার, ছয় ও আঠারো মাস বয়সে টিকার এ ডোজগুলো শরীরে প্রয়োগ করতে হয়। এছাড়া চার-ছয় বছর বয়সে আরেক দফায় বুস্টার ডোজ নিতে হয়।
এছাড়া প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ১৪-১৬ বছর বয়সের মধ্যে ধনুষ্টংকার বা ঘুংরি কাশির (পারটুসিস) টিকার সঙ্গে মিশ্রণ হিসেবে ডিপথেরিয়ার টিকার এক দফা বুস্টার ডোজ গ্রহণের নিয়ম রয়েছে। ডিপথেরিয়া থেকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি ১০ বছরে অন্তত একবার ডিপথেরিয়ার টিকা গ্রহণের নিয়ম রয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন দেশে ভ্রমণের আগে ভ্রমণকারীদের সর্বশেষ ১০ বছরের মধ্যে এ রোগের টিকা গ্রহণের নথিবদ্ধ প্রমাণ দেখাতে হয়।
শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের টিকার আওতায় আনার কারণে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ডিপথেরিয়া নিয়ন্ত্রণে আসছে বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর। তিনি বলেন, এখন কম রোগী পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয়দের মধ্যে ডিপথেরিয়া ছড়িয়ে পড়ার যে ভয়টা ছিল তা এখন নেই।
ডিপথেরিয়ার বাইরে অন্যান্য রোগেও মারাত্মকভাবে ভুগছে রোহিঙ্গারা। ডব্লিউএইচওর হিসাবে, ৩ জুন পর্যন্ত অজ্ঞাত জ্বরে ভোগা রোহিঙ্গার সংখ্যা ২ লাখ ২৭ হাজার ৯২৮। তীব্র শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ভুগছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৬৫১, ডায়রিয়ায় ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৫, রক্ত আমাশয়ে ৪৯ হাজার ৭১৪, ম্যালেরিয়ায় ১৯ হাজার ৭৬০ জন, জন্ডিসে ১২ হাজার ৮৪২, হাম বা রুবেলায় ২ হাজার ২৫৩ ও মামসে ভুগছে ১ হাজার ৩৭৪ জন রোহিঙ্গা। একুশে মিডিয়া।
No comments:
Post a Comment