ফাইল ফটো |
একুশে মিডিয়া, আন্তর্জাতিক রিপোর্ট:
একটি বড় অংশে গণ হারে ব্যাংক প্রতারণা! গ্রাহকদের অগোচরেই এটিএম থেকে তাদের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। প্রতারিত হয়েছেন দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাট, লেক গার্ডেন্স এলাকার কানাড়া ব্যাংকের বেশ কয়েক জন গ্রাহক। কী ভাবে প্রতারণা, তা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।
বালিগঞ্জ গার্ডেন রোডের বাসিন্দা অনিন্বিতা মুখার্জির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কানাড়া ব্যাংকের গোলপার্ক শাখায়। রবিবার তার মোবাইলে একটি মেসেজ আসে। দেখা যায়, তার অ্যাকাউন্ট থেকে ২০ হাজার টাকা কোনও এটিএম থেকে তোলা হয়েছে।
রীতিমত অবাক হয়ে যান তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি সঙ্গে সঙ্গে দেখি এটিএম কার্ড কোথায়। কার্ড আমার ব্যাগে।’ পরের দিনই তিনি ব্যাংকে যান। দেখা যায় শুধু ওই কুড়ি হাজার টাকা নয়, ওই একই দিনে আরও কুড়ি হাজার টাকা তার অ্যাকাউন্ট থেকে তোলা হয়েছে। অনিন্বিতা বলেন, ‘দ্বিতীয়বার টাকা তোলার কোনও এসএমএস-ও আসেনি আমার কাছে। ব্যাংকে গিয়ে দেখি, আমার মত আরও অনেকের ঠিক একই ভাবে টাকা লোপাট হয়ে গিয়েছে।’
ব্যাংকে অভিযোগ জানানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি অভিযোগ জানান গড়িয়াহাট থানায়। অনিন্বিতা বলেন, ‘আমি লালবাজারে ব্যাংক প্রতারণা শাখাতেও অভিযোগ জানিয়েছি।’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে প্রভাবশালী ভারতীয় পত্রিকা আনন্দবাজার।
আনন্দবাজারের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু অনিন্বিতা নন, একই রকম ভাবে প্রতারিত হয়েছেন গড়িয়াহাট, রবীন্দ্র সরোবর এবং লেক থানা এলাকার অনেক বাসিন্দা, যারা কানাড়া ব্যাংকের গ্রাহক।
ইতোমধ্যে শুধু গড়িয়াহাট এবং রবীন্দ্র সরোবর থানাতেই অভিযোগ দায়ের হয়েছে ৩৫টির বেশি। প্রত্যেকের ক্ষেত্রে একই ভাবে প্রতারণা। দশ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এবং সবার ক্ষেত্রেই এই টাকা কোনও এটিএম থেকে তোলা হয়েছে। সব কটি প্রতারণা বা টাকা তোলার ঘটনাই ঘটেছে গত শনিবার এবং রবিবার (২৮ এবং ২৯ জুলাই)।
কানাড়া ব্যঙ্ক সূত্রে খবর, তারা ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছেন। ব্যাংক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সুশোভন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এর আগে কলকাতায় না হলেও, এমন ঘটনা মুম্বইতে হয়েছে।’ তিনি দাবি করেন, এর পিছনে আছে কার্ড ক্লোনিং। তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘আমার সন্দেহ ওই এলাকার একাধিক বড় এটিএমে, যেখানে বেশি মানুষ টাকা তোলেন, সেখানে জালিয়াতরা স্কিমিং ডিভাইস ব্যবহার করেছে। আর সেই ডিভাইস ব্যবহার করেই তারা গ্রাহকদের কার্ডের তথ্য লোপাট করেছে। সেই তথ্য দিয়েই বানানো হয়েছে নতুন কার্ড এবং সেই কার্ড দিয়ে টাকা তোলা হয়েছে।’
সুশোভন বলেন, ‘এটিএম মেশিনের যেখানে গ্রাহক কার্ড সোয়াইপ করেন সেখানেই, কয়েক ইঞ্চি লম্বা এবং তিন-চার মিলিমিটার চওড়া একটা যন্ত্র গোপনে লাগিয়ে রাখে একটা চক্র। গ্রাহক কার্ড সোয়াইপ করা মাত্রই সেই কার্ডের ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ বা কার্ডের পেছনে কালো যে পট্টি রয়েছে, সেই স্ট্রিপের যাবতীয় তথ্য নকল হয়ে রেকর্ড হয় স্কিমিং ডিভাইসে।’
কানাড়া ব্যাংক সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের তদন্তেও এ রকমই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। তারা চারটি এটিএম কিয়স্ক ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করেছে। ওই এটিএমে ব্যবহৃত কয়েকশো কার্ডকে সাময়িক ভাবে ব্লক করা হয়েছে, যাতে তাঁদের কার্ডের তথ্য দিয়ে আর টাকা হাতাতে না পারে জালিয়াতরা। কলকাতা পুলিশের দক্ষিণ পূর্ব ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার কল্যান মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘আমরা এ রকম কিছু অভিযোগ পেয়েছি। থানা এবং সেই সঙ্গে কলকাতা পুলিশের ব্যাংক প্রতারণা শাখা তদন্ত করছে।’
কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, শুধু কানাড়া ব্যাংক নয়, এ রকম আরও কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের গ্রাহকরাও একই রকম অভিযোগ জানিয়েছেন। সেগুলি ঘটেছে কলেজ স্ট্রিট এলাকায়। সেগুলিরও তদন্ত চালাচ্ছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। একুশে মিডিয়া।’
No comments:
Post a Comment