যুক্তরাজ্য মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বিশেষ করে শিক্ষা খাতে আরো বেশি সহায়তা প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। গত বছরের আগস্ট মাস থেকে এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
যুক্তরাজ্যের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিষয়ক মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড এমপি এবং জেন্ডার সমতা বিষয়ক যুক্তরাজ্যের বিশেষ দূত জোয়ানা রোপার আজ এখানে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ আহ্বান জানান।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করতে ব্রিটিশ মন্ত্রী ও বিশেষ দূত তিন দিনের সফরে গত শুক্রবার ঢাকা আসেন।
ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, ‘শরণার্থীদের জন্য এই বর্ষা মৌসুম ও দীর্ঘ মেয়াদে শিক্ষা ও জীবিকার ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করা আরো জোরদার করতে আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্য এই সংকটে সর্বাধিক আর্থিক সহায়তা প্রদানকারী দেশগুলোর অন্যতম। গত সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাজ্য শরণার্থী ও স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সাহায্যার্থে ১২৯ মিলিয়ন অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এই সংকট উত্তরণে বার্মিজ কর্তৃপক্ষের ওপর গত ২৫ জুন ঘোষিত ইইউ নিষেধাজ্ঞার প্রতি আমাদের সমর্থনসহ তাদের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ও সংলাপ চালিয়ে যাবো।’
কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী-শিবির পরিদর্শনকালে ব্রিটিশ মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড ও বিশেষ দূত জোয়ানা রোপার রোহিঙ্গা পরিবার ও তাদের কমিউনিটি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যে নির্যাতন ভোগ করেছেন এবং বর্তমানে শরণার্থী-শিবিরে থাকতে গিয়ে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন সে সম্পর্কে অবগত হন।
তারা সরেজমিনে সাম্প্রতিক মৌসুমি বৃষ্টিতে শরণার্থী শিবিরের ক্ষয়ক্ষতি এবং রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় বাংলাদেশ সরকার ও ত্রাণ সংস্থাগুলোর কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
তারা শরণার্থী-শিবিরে ইউনিসেফের একটি শিশুবান্ধব স্থান পরিদর্শন করেন এবং শিশুদের সুরক্ষা ও শিক্ষা প্রদানে গৃহীত উদ্যোগ সম্পর্কে শোনেন।
তারা কমিউনিটি ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রও পরিদর্শন করেন এবং একটি সাইট ব্যবস্থাপনা টিমের সঙ্গে কথা বলে বৃষ্টি পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতির ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের অবদান সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন।
পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ আমি যা শুনলাম, তা সত্যিই হৃদয়বিদারক। ফলে আমার শরণার্থীদের জন্য কাজ করার এবং বার্মিজ কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ প্রয়োগের সংকল্প বহুগুণ বেড়ে গেল।’
গত বছরের আগস্ট মাস থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিজেদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে সাত লাখ ছয় হাজার ৩৬৪ জনের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এর আগেও তিন লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
ব্রিটিশ মন্ত্রী ও বিশেষ দূতের আজ এখানে সিনিয়র মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।
জোয়ানা রোপার বলেন, শরণার্থী-শিবিরে আমরা বার্মার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংসতার যে বিবরণ শুনলাম, তা আমাদের গভীরভাবে বিচলিত করে। তবে ক্যাম্পে নারী ও কন্যাশিশুদের সুরক্ষায় গৃহীত উদ্যোগ, রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা কেন্দ্র এবং এত অল্প বয়সে এমন দুর্ভোগ সহ্য করার পরও শিক্ষার প্রতি তাদের আগ্রহ দেখে খুবই অভিভূত হয়েছি। তিনি বলেন, ‘কন্যা শিশুদেরও শিক্ষা, নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে সমান অধিকার রয়েছে। আমাদের অবশ্যই প্রতিটি কন্যাশিশুর ১২ বছরের মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। রোহিঙ্গা কন্যা শিশুদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার বিষয়টিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
No comments:
Post a Comment