একুশে মিডিয়া:
পাহাড়ের গুহায় আটকে পড়া ১২ জন কিশোর ফুটবলার এবং তাদের কোচের একটি নতুন ভিডিও বের হয়েছে। ওই ভিডিওতে তারা বলছেন যে, তাদের শারীরিক অবস্থা ভালো আছে।
ভিডিওতে তারা এক এক করে নিজেদের পরিচয় দেন, কখনো কখনো কিশোরদের হাসতে দেখা যায়। তারা আরও জিজ্ঞেস করছিল, খাবার কত তাড়াতাড়ি আসবে।
কিশোরদের গা গরম রাখার জন্য ফয়েলের কম্বল দেওয়া হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ওই কম্বল গায়ে জড়িয়ে তারা বসে আছেন। তাদের কারো কারো গায়ে আঁচড় লেগেছিল। একজন সামরিক ডাক্তার তাদের চিকিৎসা করেছেন।
উদ্ধারকারীরা নানা পরিকল্পনার কথা বিবেচনা করছেন, তবে থাই সেনাবাহিনী বলেছে এমনও হতে পারে যে, আটকা পড়া দলটিকে উদ্ধার করতে চার মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
এই কিশোররা যেন তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পারেন, সে জন্য গুহায় টেলিফোন লাইন বসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, তবে এখন পর্যন্ত এ চেষ্টা সফল হয়নি। তাদের উদ্ধার করার কোনো উপায় এখনো ঠিক হয়নি। উদ্ধারকারীরা এখনো নানা বিকল্প বিবেচনা করছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি সত্যি তাদের উদ্ধার করতে কয়েক মাস লেগে যায়, তাহলে মাটির প্রায় এক কিলোমিটার নিচে ওই অন্ধকার গুহায় এই বাচ্চারা কীভাবে এত দিন টিকে থাকবে?
আটকে পড়া দলটির কাছে ইতোমধ্যে খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু তাদের মনের ওপর এই গুহাবন্দী অবস্থার কী প্রভাব পড়বে?
অনেকের হয়তো মনে আছে, ২০১০ সালে চিলিতে একটি খনিতে ৩৩ জন শ্রমিক আটকা পড়েছিলেন, যাদেরকে ৬৯ দিন পরে পাহাড়ে সুড়ঙ্গ কেটে উদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু থাইল্যান্ডের ঘটনাটি তার তুলনায় ভিন্ন কারণ, আটকে পড়া একজন বাদে সবাই একেবারেই বাচ্চা ছেলে।
লন্ডনের শিশু মনোবিজ্ঞানী ড. আন্দ্রেয়া ডানিজ বলেন, ‘অবরুদ্ধ অবস্থায় তারা ভীত, অস্থির এবং মানসিকভাবে বিচলিত হয়ে উঠতে পারেন। এ ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে মন খুলে কথা বলা এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ তাদের মনোবল বাড়িয়ে দেবে।’
এ কথা ভেবেই গুহাটিতে টেলিফোন সংযোগ দেবার ব্যবস্থা করছে থাই কর্তৃপক্ষ। তার আগে পর্যন্ত দুজন করে ডুবুরি দলটিকে সঙ্গ দেবেন।
আলোর অভাব
আমেরিকার ভার্জিনিয়ার রিচমন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডোনেলসন আর. ফরসাইথ বলেন, ‘অবরুদ্ধ অবস্থায় একটা বড় চ্যালেঞ্জ হলো আলোর অভাব। গুহাটির ভেতরে দিন ও রাতের পার্থক্য বোঝার মতো আলো নেই, তাই মানুষের দেহ-ঘড়ির ছন্দ তখন নষ্ট হয়ে যায়।
এতে যে শুধু ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলে তা নয়, তাদের মানসিক অবস্থা, মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাস এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজও বিঘ্নিত হয়। অবশ্য যেহেতু তারা একটা দলে আছে, তাই হয়তো টিকে থাকার জন্য তাদের মধ্যে একটা ঐক্য গড়ে উঠবে।’
ফরসাইথ আরও বলেন, ‘তাদের মধ্যে পরস্পরকে দোষ দেওয়া, নৈরাশ্য, ক্রোধ বা নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা দেখা দিতে পারে। কিন্তু তাদের একটি দলে খেলার অভিজ্ঞতা তাদের ঐক্যের জন্য সহায়ক হতে পারে।’
এ কিশোরদের উদ্ধার করার পরেও তাদের মনের ওপর এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রয়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব পাবলিক হেলথের মনোবিজ্ঞানী প্রফেসর স্যান্ড্রো গালিয়া বলেন, ‘যে শিশুরা এই পর্যায়ের ট্রমা বা মানসিক বিপর্যয়ের শিকার হয়, তাদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে বিষণ্ণতা, দুশ্চিন্তা, মুড ডিজঅর্ডার বা হঠাৎ রেগে যাওয়ার মতো বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি আছে।’
সূত্র: বিবিসি বাংলা
No comments:
Post a Comment