একুশে মিডিয়া:
গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম না কমালে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে প্রতিনিধির এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। গত ৭ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন এবং ২৭ জুন বাজেট সংসদে অনুমোদন দেওয়া হয়। বাজেট সমাপনী অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতে গৃহীত বেশকিছু সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরেন।
অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের জন্য নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবাকে অধিকতর সহজলভ্য করার লক্ষ্যে ইন্টারনেট সেবার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসায়ী পর্যায়ে কম্পিউটার ও এর যন্ত্রাংশের ওপর পূর্বের ধারাবাহিকতায় মূসক অব্যাহতি প্রদান করার প্রস্তাব করছি। দেশীয় মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর বর্তমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বহাল রেখে এ শিল্পের অধিকতর বিকাশের লক্ষ্যে সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য শুধুমাত্র স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশের অতিরিক্ত ভ্যাট অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব করছি। বেসিস ও ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের আলোকে সোশ্যাল মিডিয়া ও ভার্চুয়াল বিজনেস সেবা এবং তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবার সংজ্ঞা সংশোধন করে যুগোপযোগী করার প্রস্তাব করছি।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বেসিসের এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বাজেটে ইন্টারনেটের ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানে ইন্টারনেটের ভ্যাট প্রত্যাহার নিয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী এই আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে মোস্তাফা জব্বার অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, গত বছর ডিসেম্বরে ডিজিটাল ওয়াল্ডের সমাপনীতে বেসিস সভাপতি হিসেবে দাবি করেছিলাম। আমি আবারও দাবি করছি, ‘বাংলাদেশের মানুষের একটা প্রত্যাশা আছে আপনার কাছে। আপনি জানিয়েছেন, এ বছর অবসর নেবেন। তার মানে হচ্ছে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটই হচ্ছে আপনার শেষ বাজেট। এই বাজেটে আপনার কাছে প্রত্যাশা করি ইন্টারনেটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আপনি প্রত্যাহার করে নেবেন।’
অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেন, ‘এনবিআর হিসাব করে দেখাবে কত টাকা লোকসান হবে। কিন্তু আপনার যদি ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব কম হয় বিপরীতে প্রতিদান পাবেন হাজার কোটি টাকার বেশি।’
এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা আপনাদের প্রয়োজন জানিয়ে দিয়েছেন এবং সে ব্যাপারে আমি একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেওয়ার ইচ্ছা ও আশা করছি। সুতরাং সেদিক দিয়ে আপনাদের অসন্তুষ্ট হওয়ার কোনো কারণ নেই’।
জনগণকে অধিকতর সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রী বাজেট পূর্ব প্রতিশ্রতি বাজেটে প্রতিফলন ঘটালেও ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের নির্দেশনা প্রতিপালন করছেনা। নিয়ম অনুয়ায়ী জাতীয় সংসদে বাজেট অনুমোদনের পর ১ জুলাই থেকে নতুন বাজেট কার্যকর হয়ে থাকে। ইন্টারনেট সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাজেটের ভুল ব্যাখ্যা করে গ্রাহকদের জন্য সরকারের দেওয়া সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে।
সূত্র জানায়, ইন্টারনেট ব্যাবহারের জন্য নিয়ম অনুয়ায়ী ১৫ শতাংশ ভ্যাট গ্রাহকের কাছ থেকে আদায়ের বিধান ছিল। বাজেটে ১০ শতাংশ ভ্যাট কমানোর ঘোষণা দেওয়ায় গ্রাহকদের ওপর থেকে প্রায় ৬৬ শতাংশ ভ্যাট কমার কথা কিন্তু ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আগের রেটেই গ্রাহকদের কাছে ইন্টারনেট সেবা বিক্রি করছে। দুই বছর আগে যখন মোবাইল সেবার ওপর সরকার সম্পূরক কর আরোপ করার দুই ঘণ্টার মধ্যে তা কার্যকর করে। অথচ ১ জুলাই থেকে নতুন বাজেট কার্যকর হয়েছে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারে বাজেট ঘোষণা অনুসরণ করছে না।
ইন্টারনেট সেবাদানকারীদের যুক্তি হচ্ছে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ইন্টারনেট সেবার ওপর থেকে ভ্যাট আদায় কমানো হলে তাদের ব্যবসায়ীক খরচ ১০ থেকে ১২ শতাংশ বেড়ে যাবে। বিষয়টি বিবেচনার সরকারের কাছে তারা আবেদন জানিয়েছে। তাদের আবেদন সুরাহা হলেই বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, গ্রাহক পর্যায়ে ভ্যাট কমানো হয়েছে। এটা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। কেউ যদি সরকারি নির্দেশ অমান্য করে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
No comments:
Post a Comment