ফাইলফটো
একুশে মিডিয়া, বরিশাল রিপোর্ট:
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১ লাখ ৯ হাজার ৮০৩ ভোট পেয়ে বেসকারিভাবে জয় লাভ করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবত সাদিক আবদুল্লাহ। তার নিকটমত প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী পেয়েছে মাত্র ১৩ হাজার ৪১ ভোট। বরিশালের ১২৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০৭টি কেন্দ্রর ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগে বাকি ১৬টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। স্থগিত হওয়া কেন্দ্রগুলোতে মোট ভোটর সংখ্যা ৩২ হাজার ৯৩০।
আজ সোমবার ( ৩০ জুলাই) সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত নতুন মেয়র নির্বাচনে ভোট দেন বরিশালবাসী। এখানকার ভোটে বেশ কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। কয়েকটি স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। যার ফলে বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার মহানগর দলীয় কার্যালয়ে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
সকাল সাড়ে আটটায় নগরীর কাউনিয়া সৈয়দা মজিদুন্নেছো মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন সরোয়ার। পরে তিনি সাংবাদিকদের কাছে বরিশালে ৫০টি কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ করেন। সে সময়ই ভোট বর্জনেরও ইঙ্গিত দেন তিনি।
সকাল নয়টার দিকে বরিশাল সরকারি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবত। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি জিতবেন বলে সুনিশ্চিত।’ বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ আশাবাদী, নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত এবং বরিশালের মানুষ আমাদের সমর্থন করছে। আমরা শতভাগ আশাবাদী নৌকার বিজয়ে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ফলাফল যাই হোক আমি মেনে নেবো। সবাই তো আর জিতবে না। একজনই জিতবো। যিনি জিতবে তাকে সহযোগিতা করবো। নগরকে ভালভাবে গড়তে বিজয়ী প্রার্থীকে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।’
সোমবার সকাল আটটায় বরিশাল মহানগরীতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। যা বিরতিহীনভাবে চলে বিকাল চারটা পর্যন্ত। ভোট শুরুর অনেক আগে থেকেই এই নগরীর অনেক কেন্দ্রের সামনে ভিড় জমতে থাকে ভোটারদের। নারী-পুরুষরা আলাদা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন ভোটকেন্দ্র খোলার। তাদের মধ্যে উৎসবের আমেজও দেখা গেছে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে এই সিটির নির্বাচনে চোখ ১৬ কোটি মানুষের। শুধু দেশের মানুষের চোখই নয়; দেশি-বিদেশি তথা আন্তর্জাতিক মহলেরও হাজারো চোখ এই নির্বাচনের দিকে। নির্বাচনে কোন দল বিজয়ী হবে সেটা দেখার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন জাতিকে কেমন নির্বাচন উপহার দেয় সেটাই দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছে মানুষ।
নির্বাচনকে ঘিরে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে বরিশাল সিটি এলাকায়। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও রয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতীয় নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনকে তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এ ব্যাপারে ইসি সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। কিছু কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে আমরা সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছি।
ইসি সচিব জানান, গাজীপুরের মতো এই সিটিতেও ভোটগ্রহণ পরিস্থিতির তথ্য তাৎক্ষণিক জানার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে দুই ঘণ্টা পরপর প্রয়োজনীয় সার্বিক তথ্য কমিশন সচিবালয়কে জানিয়েছে। আমরাও তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিয়েছি।
তিন সিটির নির্বাচনী এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি সাধারণ ভোটকেন্দ্রে পুলিশ, আনসারসহ ২২ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে।
প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে পুলিশ, এপিবিএন, ও ব্যাটালিয়ান আনসারদের সমন্বয়ে মোবাইল টিম, প্রতি তিন ওয়ার্ডে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স, প্রতি সাধারণ ওয়ার্ডে র্যাবের একটি টিম, প্রতি দুইটি সাধারণ ওয়ার্ডে এক প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন ছিল।
মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ভোটগ্রহণের দিন এবং তার আগের দুইদিন ও পরের একদিনসহ মোট চারদিন মোতায়েন থাকবে। ভোটগ্রহণের পরের দুইদিন পর্যন্ত প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিতকরণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া নির্বাচনী অপরাধ বিচারার্থে আমলে নেয়ার জন্য প্রতি তিনটি ওয়ার্ডের জন্য একজন করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত আছেন।
এ ছাড়া নির্বাচনের নিরাপত্তায় ভোটগ্রহণের দুদিন আগে থেকে তিন সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে র্যাবের একটি টিম এবং প্রতি দুটি ওয়ার্ডে এক প্লাটুন করে ১৫ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়। এরা নির্বাচনের পরের দিন পর্যন্ত এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া আরও চার প্লাটুন করে বিজিবি রিজার্ভ রাখা হয়েছে।
বরিশাল সিটিতে ৩০ ওয়ার্ডে ১২৩ ভোটকেন্দ্রে কক্ষের সংখ্যা ৭৫০টি। এসব ভোটকেন্দ্রে ১২৩ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ৭৫০ কক্ষে সম-সংখ্যক সহকারি প্রিসাইডিং অফিসার এবং কক্ষে দুইজন করে ১৫০০ জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন।
এ সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন; যার মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ জন ও নারী ১ লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন। তবে, এ সিটিতে পুরুষ ভোটার বেশি। এ সিটিতে মেয়র পদে লড়ছেন ৬ জন মেয়র প্রার্থী।
প্রসঙ্গত, ভোটে কারচুপি, এজেন্টদের বের করে দেওয়া ও মারধরসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে বরিশাল জেলা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার সাথে দেখা করেছেন চার মেয়র প্রার্থী। তারা হলেন- বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার, ইসলামী আন্দোলনের মেয়রপ্রার্থী ওবাইদুর রহমান মাহবুব, জাসদের মেয়রপ্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস এবং বাসদের মেয়রপ্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী।
সোমবার নগরীর কাশিপুর কার্যালয়ে গিয়ে তাদের অভিযোগ দেন। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেছেন, ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে তারপরও মেয়রপ্রার্থীদের অভিযোগ আমলে নিয়ে দেখবেন।
মেয়র প্রার্থী অভিযোগ করছেন, ভোটকেন্দ্র থেকে তাদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তাদেরকে মারধর ও তাদের মার্কায় সিল দেওয়া ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।
অভিযোগ পাওয়ার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘তারা অভিযোগ জমা দিয়েছে সেটা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তবে ভোট সুষ্ঠু ভাবে হচ্ছে।’
বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘এখানে ভোট হচ্ছে না দেখে মনে হচ্ছে হিরক রাজার দেশের রাজত্ব কায়েম চলছে। ৭০ থেকে ৮০টি ভোট কেন্দ্রে আমাদের কর্মীদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি।’
এদিকে বেলা ১২টার দিকে নির্বাচন বর্জন করেছেন বিএনপির প্রাথী মজিবর রহমান সরোয়ার, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ওবাইদুর রহমান মাহবুব ও সিপিডির মেয়র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ।
অন্যদিকে বাসদের মেয়রপ্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী ভোট প্রত্যাখ্যান করলেও বিকাল তিনটা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের শেষে ভোট বর্জন করবেন কি না তা জানাবেন। একুশে মিডিয়া।’
No comments:
Post a Comment