হুমকির মুখে কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য সম্পদ-একুশে মিডিয়া - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Thursday, 19 July 2018

হুমকির মুখে কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য সম্পদ-একুশে মিডিয়া


একুশে মিডিয়া, রাঙ্গামাটি রিপোর্ট:
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলধারা ও বাংলাদেশের প্রধান মৎস্য উৎপাদন ক্ষেত্র রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ। একটা সময় এ হ্রদকে মৎস্য প্রজাতির বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধশালী জলভাণ্ডার বলা হতো। কিন্তু ড্রেজিংয়ের অভাব, গভীরতা হ্রাস, পানি ও পরিবেশ দূষণের কারণে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এ হ্রদের বহু প্রজাতির মাছ। তাই মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য সম্পদ।
মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউটের তথ্য মতে, ১৯৬৪ সালে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে ২ প্রজাতির চিংড়ি, ১ প্রজাতির ডলফিন, ২ প্রজাতির কচ্ছপসহ ৭৬ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ ছিল। তার মধ্যে ৬৮টি দেশিয় ও ৮টি বিদেশি প্রজাতির মাছ।কিন্তু ক্রমাগতভাবে হ্রাস পেয়ে বর্তমানে তা নেমেে এসেছে মাত্র ২৩টি প্রজাতিতে।
এই ২৩ প্রজাতির মাছ কাপ্তাই হ্রদ থেকে বাণিজ্যিকভাবে আহরিত হলেও এখন বিলুপ্তি পথে আরও ৬ প্রজাতির মাছ। ইতোমধ্যে বিলুপ্তির তালিকায় শীল, দেশি সরপুঁটি, ঘাউরা, বাঘাইড়, মোহিনী বাটা, দেশি পাঙ্গাস, দেশিয় মহাশোল, মধু পাবদা, পোয়া, ফাইস্যা, তেলে গুলশা ও সাদা ঘনিয়ার নাম উঠেছে।

ক্রম হ্রাসমান মাছের মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, বাঁচা, পাতি পাবদা ও বড় চিতল রয়েছে। আরও কয়েক প্রজাতির দেশিয় মাছ এখন বিলুপ্তির পথে। কার্প মাছের তালিকাভুক্ত রুই, কাতলা, মৃগেল মাছের আহরণের পরিমাণও আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। তবে কাপ্তাই হ্রদে মাছের এই পরিবর্তনকে গুরুত্ব সহকারেই দেখছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা।
রাঙামাটি জেলা বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাজী বেলাল উদ্দিন জানান, রাঙামাটিতে র্দীঘ দিন ধরে হ্রদের ড্রেজিং না হওয়ায় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন হুমকির মুখে পড়েছে। কারণ, রুই জাতীয় মাছের প্রাকৃতি প্রজনন ক্ষেত্র ছিল কাসালং চ্যানেলের মাইনীমুখ, বরকল চ্যানেলের জগন্নাথছড়ি, চেঙ্গী চ্যানেলের নানিয়ারচর ও রীংকং চ্যানেলের বিলাইছড়ি। এ চারটি নদীর চ্যানেলে মাছের সুষ্ঠু প্রজনন হতো। কিন্তু বর্তমানে কাসালং চ্যানেলের মাইনীমুখ ও রীংকং চ্যানেলে পলি জমাটের কারণে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে ২টি চ্যানেলে স্বাভাবিক থাকলেও দ্রুত ড্রেজিং করা না হলে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।  
এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়াসিন জানান, বিগত সময়ে কাপ্তাই হ্রদের অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হলেও নতুন করে সংযোজিত হয়েছে ৯ প্রজাতির মাছ। সেগুলো হলো-গ্রাস কার্প, সিলভার কার্প, কার্পিও, রাজপুঁটি, তেলে নাইলোটিকা, তেলে মোজাম্বিকা, থাই মহাশোল, আফ্রিকান মাগুর ও থাই পাঙ্গাস। 

তিনি আরও বলেন, ২৫-৩০ বছর আগেই কাপ্তাই হ্রদে মাছের সুষ্ঠু প্রাকৃতিক প্রজনন ব্যাহত হয়ে পড়েছিল। তবে হ্রদে মাছের উৎপাদন বাড়াতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যাপ্ত পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে। ক্রিকের মাধ্যমে মাছ সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। 
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন অধিদপ্তরের রাঙামাটি জেলা কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান আসাদ জানান, হালদা নদীর চেয়েও কাপ্তাই হ্রদের রিসোর্স অনেক বড় এবং আকর্ষণীয়। কিন্তু সঠিক ব্যবহারের অভাবে এই হ্রদের সম্পদকে সমৃদ্ধশালী করা যাচ্ছেনা। 
তবে বিএফডিসি রাঙামাটির মারিশ্যার চরে একটি বিলা হেচারি স্থাপন করেছে। এ হেচারিতে মাছের প্রাকৃতিগতভাবে প্রজনন ঘটিয়ে পোনা মাছ উৎপাদন করা হচ্ছে। বিশেষ করে কার্প জাতীয় মাছের পোনা। অনেক মৎস্যজীবী এ হেচারি থেকে পোনা মাছ সংগ্রহ করে মাছ চাষ শুরু করেছে। অনেকে লাভবানও হয়েছে। তাছাড়া এ হেচারীর উৎপাদিত পোনা মাছ সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে কাপ্তাই হ্রদের মাছের ঘাটতিপূর্ণ করা সম্ভব হতে পারে বলে জানান কর্নেল আসাদ।

প্রসঙ্গত, ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধের কারণে সৃষ্ট দেশের এই বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদটিকে মৎস্য সম্পদের ভাণ্ডারে পরিণত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনকে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয়া হয়। তারপর ১৯৬৪ সাল থেকে হ্রদ থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মৎস্য আহরণ শুরু হয়। মাছের সুষ্ঠু ও প্রাকৃতিক প্রজনন, বংশ বৃদ্ধি এবং উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া প্রজনন ঋতুতে ৯ ইঞ্চি সাইজ পর্যন্ত পোনামাছ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে। একুশে মিডিয়া।’

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages