একুশে মিডিয়া, রাজনীতিক রিপোর্ট:
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটর প্রস্তুতি ও নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে মনোযোগ না দিয়ে জোটের দিকে নজর দিচ্ছে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো বড় দলের নেতৃত্বাধীন জোটে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগ্রহ অনেকের মধ্যে থাকলেও এর বাইরে জোট গঠন করার বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে কেউ কেউ। বাম ধারার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আটটি রাজনৈতিক দল নিয়ে গত বুধবার নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটানো হয়েছে।
এছাড়া ড. কামাল হোসেন ও সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজার নেতৃত্বে যুক্তফন্ট নামে আরও একটি জোট গঠন হয়েছে এর আগেই। অন্যদিকে ইসলামী দলগুলো আবার নিজেদের মতো করে সমমনাদের নিয়ে আলাদা জোট গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরেই। মূলত এসব জোট গঠন প্রক্রিয়া বর্তমানে নিজেদের মধ্যে বড় দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও দর-কষাকষির পর্যায়ে রয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে এটা অনেকটাই নিশ্চিত। তবে, এ জোট কেমন হবে, এর পরিধি কেমন হবে এসব নির্ভর করছে বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়ার ওপর।
যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসে, তবে আওয়ামী লীগ ১৪ দলগতভাবে নির্বাচন করবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি আলদাভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে, কিছু কিছু জায়গায় আসন ভিত্তিক সমঝোতা করা হবে জোটসঙ্গী ও অন্যদের সঙ্গে। আর যদি বিএনপি নির্বাচনে আসে সে ক্ষেত্রে ২০০৮-এর নির্বাচনের মতো মহাজোটগতভাবে নির্বাচন করার কথা ভাবা হচ্ছে।
এক্ষেত্রে ১৪ দলের সঙ্গে জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য কিছু দল নিয়ে এ মহাজোট হতে পারে। এরই মধ্যে ৯টি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট গঠনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। গত বুধবার ১৪ দলের সঙ্গে এসব দলের নেতাদের মতবিনিময়ও অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনার সার-সংক্ষেপ দ্রুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হবে এবং তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন বলে তাদের জানান ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তবে, এ দলগুলোকে ১৪ দলে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে শরিক দলগুলো আপত্তি দিয়েছে। তাদের দাবি ১৪ দল একটি আদর্শিক জোট। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাম
প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের স্প্রিটের সঙ্গে এসব দলের আদর্শ এক করা যাবে না। নির্বাচনকে সামনে রেখে মহাজোটের মধ্যে বা অন্য কোনোভাবে তাদের সঙ্গী করলে ১৪ দলের শরিকদের কোনো আপত্তি থাকবে না।
জানা গেছে, জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনীতিতে বিশ্বাসী ও ইসলামী দলগুলো মিলিয়ে যে ৯টি দল ১৪ দলের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে তারা আওয়ামী লীগের কাছে দুটি প্রস্তাব দিয়েছে জোট গঠনের জন্য। একটি হচ্ছে মহাজোটের মধ্যে এসে তারা সরকারের সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে।
অন্যটি হচ্ছে জাতীয়তাবাদী জোট হিসেবে আলাদা জোট গঠন করে আওয়ামী লীগের জোটকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে।
এ ৯টি দলের মধ্যে রয়েছে- ইসলামিক ফন্ট, তৃণমূল বিএনপি, কৃষক শ্রমিক পার্টি, সম্মিলিত ইসলামিক জোট, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, জাগোদল, একামত আন্দোলন।
জানা গেছে, আসন বণ্টনের আগেই জোট নিয়ে দর-কষাকষি চলছে ক্ষমতাসীন জোটের মধ্যে। ছোট ছোট কিছু দলকে জোটে রাখার পক্ষে আওয়ামী লীগ। তবে এতে আপত্তি জানিয়েছে ১৪ দলের শরিকরা।
এ প্রসঙ্গে জাসদ একাংশের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া ও ন্যাপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন প্রায় একই ভাষায় বলেন, ১৪ দল একটি আদর্শিক জোট, এটা কোনো নির্বাচনি জোট নয়, সুনির্দিষ্ট কর্মসূচিকে সামনে রেখে এ জোট করা হয়েছে। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাম প্রগতিশীল ঘরানার বাইরের আদর্শের কারও এ জোটে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তবে, নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনি জোট হলে তাতে যে কেউ আসতে পারে। এই সরকারের সঙ্গে থাকতে পারে সেখানে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
এদিকে বিকল্প ধারার চেয়ারম্যান একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে কয়েকটি দল বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গঠনের জন্য অনেক দিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছেন। গত বছর ডিসেম্বরে চারটি দল নিয়ে প্রকাশ ঘটায় যুক্তফন্ট। দলগুলো হলো সাবেক রাষ্ট্রপতি বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশ, আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য। বর্তমানে গণফোরাম সভাপতি ড. কামালও তাদের সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন।
আগামী দিনের আন্দোলন ও নির্বাচন নিয়ে বিএনপির বৃহত্তর ঐক্য গঠনের জন্য এ জোটটির সঙ্গে বিএনপি নেতারা যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন। একুশে মিডিয়া।’
No comments:
Post a Comment