ছবিঃ সংগৃহীত
একুশে মিডিয়া, অর্থনীতি ১৮ জুলাই ২০১৮ ইং এএম রিপোর্ট:
সব রকম নিয়ম মেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ ব্যাংকের ভল্টের সোনা পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে বলে জানিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলনের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত স্বর্ণের মান কমে যাওয়ার বিষয়ে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার প্রতিবেদনটি একটি করণিক ভুলের ওপর নির্ভর করে লেখা হয়েছে।
এর প্রতিবাদও জানানো হবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
আজ মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিকটির প্রধান শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি তোলপাড় ফেলার পর আজ বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক রবিউল হোসেন বিষয়টির ব্যাখ্যা দেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা করণিক ভুল। শুল্ক গোয়েন্দা থেকে যখন স্বর্ণ নেয়া হয়, তখন পরিমাপ করা হয়। লিখতে বলা হয় ৪০, কিন্তু এটি ইংরেজিতে লেখার সময় বাংলা ৪০ কে ইংরেজিতে ‘80’ (৮০) লিখে ফেলা হয় এবং এতেই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।’
‘মানে ভুলে এটা রেকর্ড হয়েছে ৮০। শুল্ক গোয়েন্দারা যখন স্বর্ণ নিয়ে মাপে, তখন তারা কিন্তু সেখানে ৪৬ শতাংশ স্বর্ণ পায়। যেটা আমরা ৪০ শতাংশ লিখেছি সেটা শুল্ক গোয়েন্দারা পরিমাপ করে পায় ৪৬ শতাংশ।’
‘আপনাদের মাপে ৪০ পাওয়া গেলে, শুল্ক গোয়েন্দাদের মাপে ৪৬ শতাংশ কেমন করে হয়’ এমন প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এনালগ পদ্ধতিতে মেপেছিলাম, অনেক সময় ভেরি করে।’
সংবাদ সম্মেলনে ডিপার্টমেন্ট অব কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড পাবলিকেশন্স এর মহাব্যবস্থাপক জি এম আবুল কালাম আজাদ, কারেন্সি অফিসার আওলাদ হোসেন চৌধুরী এবং ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্টের মহাব্যবস্থাপক সুলতান মাসুদ আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘তদন্ত চলাকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের বিরোধ ছিল। তখন তারা তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে স্বর্ণের মান পরীক্ষা করাতে আণবিক শক্তি কমিশনের নাম প্রস্তাব করেন। তবে তাতে শুল্ক গোয়েন্দা রাজি হয়নি।’
প্রথম আলোর প্রতিবেদন ‘ভিত্তিহীন’
শুল্ক গোয়েন্দার বরাত দিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে তা সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ নয় বলেও মন্তব্য করেন রবিউল হোসেন। বলেন, ‘এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দৈনিকে প্রতিবাদ পাঠানো হবে।’
নির্বাহী পরিচালক রবিউল হোসেন আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা ধাতু বদলে যাবার কোনো সুযোগ নেই। তবে এখানে শুল্ক গোয়েন্দা অনুমতি নিয়ে তদন্ত পরিচালনা করে। ওই সময় তাদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ হয়।’
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট কাস্টম হাউসের গুদাম কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ গোলাকার কালো প্রলেপযুক্ত একটি সোনার চাকতি এবং একটি কালো প্রলেপযুক্ত সোনার রিং বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক ওই চাকতি এবং আংটি যথাযথ ব্যক্তি দিয়ে পরীক্ষা করে ৮০ শতাংশ বিশুদ্ধ সোনা হিসেবে গ্রহণ করে প্রত্যয়নপত্র দেয়। তবে দুই বছর পর পরিদর্শন দল ওই চাকতি ও আংটি পরীক্ষা করে তাতে ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ (১১ দশমিক ২ ক্যারেট) সোনা পায়। আংটিতে পায় ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ সোনা (৩ দশমিক ৬৩ ক্যারেট)।
ভল্টের সোনা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন
প্রথম আলো লিখেছে, ধারণা করা হচ্ছে ভল্টে রাখার পর এগুলো পাল্টে ফেলা হয়েছে। এতে সরকারের ১ কোটি ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা ক্ষতি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্ট খুবই সুরক্ষিত। সেখানে ছয় স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। চাইলেই কেউ সেখানে ঢুকতে পারেন না। এমনকি গভর্নরও প্রবেশ করতে পারেন না। একটি চাবি দিয়ে ভল্ট খোলা যায় না। ফলে এখানে স্বর্ণের চাকতি পাল্টে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটা অসম্ভব।
রবিউল হোসেন বলেন, ‘শুল্ক গোয়েন্দাদের প্রতিবেদন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তার প্রতিটি অংশ ব্যাখ্যা করে জবাব দেয়া হয়েছে। গত ১১ জুলাই তা এনবিআর চেয়ারম্যানকেও পাঠানো হয়েছে।
ভল্টের স্বর্ণ পরীক্ষায় স্বর্ণকার
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, তারা স্বর্ণের মান পরীক্ষা করান একজন স্বর্ণকারের মাধ্যমে। তিনিই যাচাই বাছাই করে সোনার মান নির্ধারণ করে দেন।’
‘কেন একজন স্বর্ণকারের ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশ ব্যাংক’ এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য, ‘এর আগে এমন পরিস্থিতি হয়নি। এখন বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করা হবে। তবে শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদন কতটা গ্রহণযোগ্য সেই প্রশ্ন রয়েছে।’
রবিউল বলেন, ‘শুল্ক গোয়েন্দারা ডিজিটালি সোনার মান পরীক্ষা করে জমা করতে আসেন। তবে আমরা ম্যানুয়ালি করি। ডিজিটাল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। জাপান থেকে একটি মেশিন চার কোটি টাকা দিয়ে আনা হয়। কিন্তু, সেটি অনেক সময় ভুল তথ্য প্রদান করেছিল। তাই মেশিনটি ফেরত দেওয়া হয়েছে।’
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার পরপরই শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, ‘ওনারা বললেন যে, এই অভিযোগ সত্য নয়। তাদের দাবি স্বর্ণ যেমন ছিল, তেমনই আছে। আরেকটা তারতম্য হতে পারে যে, আপনারা আধুনিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন আর তারা যখন নিয়েছে তখন সনাতনী পদ্ধতিতে পরীক্ষা করেছে (এনালগ)।’
শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের ডিজি সহিদুল ইসলাম। ছবি: ফাইল ফটো
তবে, দুইটি পরীক্ষার সময়ই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিজি সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টা কেমন হয়ে গেল না? ব্যাখ্যাটা উল্টো হয়ে গেল না?’
তিনি বলেন, ‘আইনি-বেআইনি সবকিছুই ব্যাখ্যা করে সংবাদমাধ্যম বুঝিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে তারা একটা উল্টো ব্যাখ্যা দিল। তারা যে এটা বললো, কোন হিসেবে কীভাবে ব্যাখ্যা দিল, সেটা বুঝলাম না।’ একুশে মিডিয়া ।
No comments:
Post a Comment