একুশে মিডিয়া:
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় মনোনয়নে অনেক আসনেই এগিয়ে আওয়ামী লীগের তরুণ মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। নিজ নিজ সংসদীয় আসনের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং জনপ্রিয়তা অর্জনে নিয়মিত যাচ্ছেন এলাকায়, করছেন গণসংযোগ, চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার জরিপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক নেতাদের পর্যবেক্ষণে এসব প্রার্থীদের শক্তিশালী অবস্থান এবং জনপ্রিয়তার বিষয়টিও উঠে এসেছে। তবে তাদের কারো মনোনয়নের বিষয় নিশ্চিত না হলেও প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে রয়েছে তাদের নাম। তাদের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতা যেমন রয়েছেন, তেমনি আছেন অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের নেতাও। এই নেতাদের অনেকেই ইতিমধ্যে বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছেন নিজ এলাকায়। মনোনয়নের দৌড়ে পুরনো প্রার্থীদের সামনে বড় প্রতিদ্বন্দ্বীও হয়ে দাঁড়িয়েছেন তারা।
আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তারা কোনো ঝুকি নিতে রাজি নয়। এমপি, মন্ত্রী বা নেতা কারো ব্যক্তি দায়ই দল নেবে না। ফলে ব্যক্তি দেখে নয়, বিভিন্ন জরিপ ও মাঠ পর্যালোচনা করে ‘উইনেবল’ প্রার্থীদেরই দলীয় মনোনয়ন দেবেন তারা। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জরিপ সংস্থাসহ দলেও বিভিন্ন পর্যায়ের রিপোর্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আছে। তিনি নির্বাচনী মাঠ আরো গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিএনপির তৎপরতা দেখে প্রার্থী বাছাইয়ের চূড়ান্ত কাজটি সারবেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রায়ই বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে যারা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন না, যারা উইনেবল ক্যান্ডিডেট নন, তারা নিশ্চয়ই মনোনয়ন পাবেন না। মনোনয়ন পাবেন উইনেবল ক্যান্ডিডেটরা। যারা উন্নয়ন করেছেন, যাদের জনপ্রিয়তা আছে, তারাই নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন।
দলীয় সূত্রমতে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে এটা নিশ্চিত ধরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লী। ফলে এবার দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে বেশ পরিবর্তন আসতে পারে। সেক্ষেত্রে বড় সুযোগ তৈরী হতে পারে নতুনদের জন্য। এর আগে গণভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি সেসময় বলেছিলেন, চারদিকে নির্বাচনের হাওয়া বইছে, এটা ভালো কথা। কীভাবে প্রার্থী বেছে নিব সেটা সময়ই বলে দেবে। আমরা চাই শতফুল ফুটুক। এটা ভালো যে, অনেকেই আগ্রহী। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অনেকেই আগ্রহী হবে, এটাই তো কাম্য। আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এখানে অনেক নেতা আছেন দেশজুড়ে। তাদের সবাইকে সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে এদের মধ্য থেকে যে ফুলটি সবচেয়ে সুন্দর সেটি আমরা বেছে নেবো। একটাই কথা, শত ফুল ফুটতে দিন। এটা রাজনৈতিক অধিকার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মনোনয়নপ্রত্যাশী এসব আলোচিত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন-দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল (নেত্রকোনা-৩), সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম (শরীয়তপুর-২), কৃষি সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী (লক্ষ্মীপুর-৪) রেদওয়ান খান বোরহান (চাঁদপুর-৩), উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন (চট্টগ্রাম-১৫), কেন্দ্রীয় সদস্য এডভোকেট এ বি এম রিয়াজুল কবীর কাউসার (নরসিংদী-৫), অধক্ষ্য সুজাউল করিম বাবুল (ঠাকুরগাও-৩),নেত্রকোনা থেকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, সিলেট থেকে মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি (জামালপুর), নুরুল ইসলাম ঠান্ড প্রমুখ।
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন (গাইবান্ধা-৫), ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ (বাগেরহাট-৪), নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এ এইচ এম মাসুদ দুলাল, কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি রয়েছেন নাটোর-৪ আসনে। কুষ্টিয়া-৪ আসনে খোকসা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বিটু, নড়াইল-১ আসনে ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী, মাগুরা-১ আসনে সাইফুজ্জামান শিখর, ঝালকাঠি-১ আসনে মনিরুজ্জামান মনির, কিশোরগঞ্জ-২ আসনে ডক্টর জায়েদ মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ও কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে অজয় কর খোকন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (ভোলাহাট-গোমস্তাপুর-নাচোল) আসনে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম আনোয়ার, ফরিদপুর-২(নগরকান্দা-শালথা) আসনে সাবেক ছাত্রনেতা লায়েকুজ্জামান নৌকা প্রতীকের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
ঢাকার আসনগুলোতে নতুনদের মধ্যে আলোচিত মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন-প্রধানমন্ত্রীর সাবেক ব্যক্তিগত সহকারি ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ড. আওলাদ হোসেন, বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে ও ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মশিউর রহমান মোল্লা সজল (ঢাকা-৫), ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু (ঢাকা-৬), ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আকতার হোসেন (ঢাকা-৭), যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিনের সভাপতি ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাট (ঢাকা-৮), সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন (ঢাকা-১৪), যুবলীগ ঢাকা উত্তরের সভাপতি মঈনুল হোসেন খান নিখিল, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু (ঢাকা-১৫) আসন থেকে মনোনয়ন চান। এছাড়া নারী সংসদ সদস্য এডভোকেট নূরজাহান বেগম মুক্তা (চাঁদপুর-৫), মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৪), জহিরউদ্দীন মাহমুদ লিপটন (ফেনী-৩) থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের আশায় প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা-৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল বলেন, আমরা এই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। আমার বাবা এমপি। এলাকার প্রতি দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। মানুষের সুখে দু:খে পাশে আছি। এছাড়া পুরো এলাকায় আমাদের আত্মীয়-স্বজন ছড়ানো-ছিটানো। তাদের ভোট আমার জন্য প্লাস পয়েন্ট। দলের মনোনয়ন পেলে জয়লাভ করতে অসুবিধা হবে না। বর্তমান সরকারের যে পরিকল্পনা আছে তা বাস্তবায়ন ইতিমধ্যেই তৃণমূলে উন্নয়নচিত্র তোলে ধরে কাজ শুরু করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে ঢাকা-৬ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু বলেন, আমরা যারা ছাত্র রাজনীতি করে এসেছি, আমাদের তো প্রত্যাশাই থাকে। দেশের উন্নয়ন করতে গেলে সংসদ সদস্য হতে হয়। তা না হলে এলাকার উন্নয়ন সেভাবে করা যায় না। তিনি বলেন, এলাকায় যথেষ্ট প্রভাব ও জনপ্রিয়তা রয়েছে তার। এবার এলাকার জনগণ ও দলের নেতাকর্মীরা চায় এই আসনটিতে নৌকার প্রার্থী নির্বাচন করুক। এই এলাকার সন্তান হিসেবে সকলেই আমাকে চেনেন। দীর্ঘদিন আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত আছি। তাই জনগণ চায় আমি এমপি নির্বাচন করি। আশা করি দলের মনোনয়ন পেলে জয়লাভ করবো।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, দল তরুণ প্রার্থী বাছাই করলে আমার মনোনয়ন পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন থেকে আমি রাজনীতি করছি। ছাত্রজীবন থেকে নানা ত্যাগ, তীতিক্ষা, জেল জুলুম সহ্য করে আন্দোলন করে দলকে ক্ষমতায় এনেছি। এক-এগারোর সময় নেত্রীর মুক্তির দাবিতে রাজপথে সক্রিয় ছিলাম। নেত্রী যদি (ঢাকা-৭) আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি এই আসনটিতে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিত উপহার দেব।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী লীগ নেতা রেদওয়ান খান বোরহান বলেন, আমি চাদপুরের খেটে খাওয়া মানুষের পাশে সর্বদায় দাড়িঁয়েছি। আমি এই জনপদের খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করছি। তিনি বলেন, দলের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি শত ভাগ আশাবাদি।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট বলেন, তুমুল নেতাকর্মীরা চায় আমি ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচন করি। এই এলাকার মানুষের বিপদে আপদে সর্বদায় আমি এগিয়ে আসি। তাছাড়া একজন ক্লীন ইমেজের মানুষ হিসেবেই সবাই আমাকে চিনে। ইতিমপূর্বে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রকাশ্যেই বলেছেন, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট আজ সৌন্দর্যের আইকন, শৃঙ্খলার আইকন, তথা যুবলীগের আইকনে পরিনত হয়েছে। যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী যুবলীগের আইকন হিসেবে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট নাম ঘোষণা করেছেন।
এ বিষয়ে ড. আওলাদ হোসেন বলেন, এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ ও র্কর্মীসভার পাশাপাশি জলাবদ্ধতা দূরীকরণে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে ড্রেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানের মতো সামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আগামী নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন চাইবো। আশা করছি মাঠপর্যায়ে জনপ্রিতা দেখে নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন।
একুশে মিডিয়া |
No comments:
Post a Comment