একুশে মিডিয়া, বিশেষ রিপোর্ট:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তফসিল দুই মাস পরে। তার আগেই গঠিত হতে পারে নির্বাচনকালীন সরকার। নির্বাচন নিয়ে সক্রিয় সব দলের মধ্যে চলছে তোড়জোড়। জোট-ঐক্য গড়ার হিড়িক পড়েছে। এই যখন অবস্থা, তখন দাবি আদায় আর নির্বাচন নিয়ে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি কতটা প্রস্তুত তা স্পষ্ট নয়। দলটির প্রধান নীতিনির্ধারক ও বাস্তবায়নকারী চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ৬ মাস ধরে কারাবন্দি। এরপর যার সিদ্ধান্তে ও পরামর্শে চলছে দল, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে। এই অবস্থায় দাবি আদায়ে আন্দোলন-সংগ্রাম এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে তৃণমূল নেতাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি তৃণমূল নেতাদের মতামত নিয়ে করণীয় নির্ধারণ করবে। এ জন্য দলের ৭৮ সাংগঠনিক জেলা কমিটির নেতাদের ঢাকায় ডেকেছে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা দুই দফায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক করবেন তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে। প্রথম পর্যায়ে আগামী ৩ আগস্ট নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং দ্বিতীয় দফায় ১০ আগস্ট ঢাকা, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা বিভাগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হবে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে। বৈঠকে থাকবেন জেলা ও মহানগর কমিটির ৫ জন করে নেতা। তারা হলেন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহ-সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক। বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে মোবাইল ফোনে জেলা নেতাদের ঢাকায় আসার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি চাচ্ছেন তৃণমূলের মতামতকে প্রাধান্য দিতে। নির্বাচনের বাকি আছে ৫ মাসের মতো। সামনে ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি। যা করার ঈদের পরেই করতে হবে বিএনপিকে। হাতে সময় কম। আমাদের সিদ্ধান্তগুলো ঈদের আগে চূড়ান্ত করে রাখতে হবে। তাহলে ঈদের পরেই তা আমরা বাস্তবায়নে যেতে পারবো।
জানা গেছে, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর দলের নেতারা কয়েক দফা তার সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন। তিনি নেতাদের বলেছেন, যে কোনো বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে। ইতোমধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা নির্বাচন ও আন্দোলন প্রশ্নে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সর্বশেষ ২২ জুলাই সম্পাদকমণ্ডলীর নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছে স্থায়ী কমিটি। বৈঠকে মূল এজেন্ডা ছিল আন্দোলন ও নির্বাচন। এতে প্রায় সব নেতাই চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে না বলে মতামত প্রকাশ করেন। তারা অগ্রাধিকার দিয়েছেন খালেদা জিয়ার মুক্তিকে। তাদের প্রায় অভিন্ন মতামত হলো-খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ার পর তিনিই সিদ্ধান্ত নিবেন নির্বাচনে বিএনপি যাবে কি যাবে না। তার মুক্তির জন্য রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। কারণ আইনি প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের আগে তার মুক্তি সুদূরপরাহত। আর আন্দোলনের জন্য কালক্ষেপণ করা ঠিক হবে না।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীরাই দলের প্রাণ। তাদের মতামতকে বিএনপি সবসময় গুরুত্ব দেয়। দাবি পূরণের কর্মসূচি ও নির্বাচনের বিষয়ে আমরা দলের সর্বস্তরের মতামত নিচ্ছি। আমরা নোট করছি। মাঠ নেতাদেরও মতামত নেওয়া হবে। সকলের মতামতের পর আমরা বসবো, তখন সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে। মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সবার বক্তব্য স্পষ্ট, খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোনো একতরফা নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। আমরা আগেই বলেছি, আগামী নির্বাচনের প্রথম শর্ত খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তাকে কারাগারে রেখে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না, জনগণ ওই নির্বাচন মেনে নেবে না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, মাঠ পর্যায়ের নেতাদের ডাকা হয়েছে। তাদের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন সিনিয়র নেতারা।
সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ভিত্তিহীন মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো তাকে মুক্ত করে আনা। সামনে আন্দোলন ও নির্বাচনের ব্যাপার আছে। সুতরাং এই বিষয়ে দ্রুত আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এজন্য তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামত নেওয়াটা জরুরি। ইত্তেফাক। একুশে মিডিয়া।’
No comments:
Post a Comment