একুশে মিডিয়া, দিনাজপুর রিপোর্ট:
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় বৃষ্টির আশায় ব্যাপক আয়োজনে ধুম-ধাম করে ব্যাঙের বিয়ে দেয়া হয়েছে। বিয়েতে গ্রামবাসীসহ প্রায় ৫ শত আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত ছিলেন। রং মেখে নেচে গেয়ে ব্যাঙের বিয়ে দেয়া হয়।
রবিবার (২২ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে রাত অবদি চলে এই বিয়ের অনুষ্ঠান। সকলের মনের বিশ্বাস ব্যাঙের বিয়ে দিলেই অনাবৃষ্টি কেটে যাবে। হিন্দু মুসলিম সবাই মিলে এ আয়োজন করা হলেও বিয়েতে পালন করা হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়ের নিয়ম কানুন।
এই ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করে খানসামা উপজেলার ভাবকী ইউনিয়নের কাচিনীয়া বাজার গ্রামের মানুষ। হিন্দুরীতি অনুসারে বিয়ের জন্য ছায়ামন্ডপ, মাড়োয়া, পুষ্পমাল্য, গায়ে হলুদ, আর্শিবাদের ধান-দূর্বা, খাওয়ার আয়োজন সব ধরনের ব্যবস্থাই ছিল বিয়েতে।
আয়োজকরা জানায়, শ্রাবন মাসের ৭ দিন। কিন্তু বৃষ্টি নেই। জমিতে পানি নেই। আমন চারা রোপন করা যাচ্ছেনা। আবার যে জমি গুলোতে চারা রোপণ করা হয়েছে, সে জমি গুলো পানির অভাবে চৌচির হয়ে গেছে। অনেকে শ্যালো মেশিন দিয়ে ক্ষেতে পানি দিচ্ছেন। এ কারণে যাতে বৃষ্টি আসে সে জন্য ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করা হয়।
বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন চলছিল ৭ দিন আগে থেকে। গ্রামের যুবরা ৭ দিন আগে থেকে গ্রামের বাড়ী বাড়ী গিয়ে নেচে গেয়ে অর্থ, চাল, মরিচ, পিয়াজ, রসুন, আদা তেল, ইত্যাদি সংগ্রহ করে। এ সময় প্রতিটি বাড়ীতে ব্যাঙের বিয়ে খেতে আসার দাওয়াত দেয়া হয়।
রবিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় ব্যাঙের বিয়ে। কলার গাছ ও ফুল দিয়ে সাজানো মাড়োয়ায় প্রথম থেকে গ্রামবাসী আসতে শুরু করে। বাঁজানো হয় মাইক। রং মেখে, কাঁদা মেখে শুরু হয় নাচ-গান। সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার সময় বরের পিতা রাজেন্দ্রনাথ রায় ও কনের পিতা নিপুন রায় বর কনে কে নিয়ে হাজির হয় মাড়োয়ায়। এ সময় পাশেই চলছিল রান্না-বান্নার কাজ। শুরু হয় নাচ-গান। গ্রামের মানুষ বর-কনেকে দেখে টাকাসহ বিভিন্ন প্রকার উপহার দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে যায়।
মাড়োয়ার আশে পাশে চলে লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ। শুকনার মধ্যে লাগানো হয় ধানের চারা। এ যেন এক অন্য রকম উৎসব। হিন্দু সকল সম্প্রদায়ের রীতিতে বিয়ে হলেও সকল ধর্ম বর্ণের মানুষের মিলন মেলায় পরিনত হয়।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, খরা থেকে মুক্তি পেতে এবং বৃষ্টির আশায় তাদের এই আয়োজন। অনাবৃষ্টির কবলে পড়লে তারা বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে দিয়ে থাকেন। আর এই রীতি শতবর্ষ আগে থেকেই চলে আসছে।
তাদের মতে, হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ রামায়ণে বর্ণিত বৃষ্টির দেবতাকে খুশি করার জন্য সেই সময়ে ব্যাঙের বিয়ের প্রচলন ছিল। ত্রেতা যুগের সেই ধারা অনুসারে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করে ওই এলাকার বাসিন্দারা। তাদের বিশ্বাস ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টির দেবতা খুশি হয়ে বৃষ্টি দেন। এই আশায় ব্যাঙের বিয়ে দেয়া হয়েছে।
দিনাজপুরে এখন চলছে অনাবৃষ্টি। ক্ষেতে পানি না থাকায় কৃষকের মধ্যে শুরু হয়েছে হা হা কার। মানুষ বিকল্প ব্যবস্থায় সেচ দিয়ে আমন চারা রোপন করছে। জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। বৃষ্টি না হলে জমিতে রোপিত আমন চারা জ্বলে যেতে শুরু করবে। অনেকে সেচ দিতে শুরু করেছেন । একুশে মিডিয়া।”
No comments:
Post a Comment