ছবি: ফাইল ফটো
একুশে মিডিয়া, ক্রীড়া রিপোর্ট:
উইন্ডিজ-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজের জন্য মাশরাফি যখন ক্যারিবীয় দ্বীপে আসলেন তখনি টেস্ট সিরিজে ভরাডুবির পর তার ছোঁয়ায় বদলে গেল পুরো ওয়ানডে দল।
সেন্ট কিটস ওয়ার্নার পার্কে শেষ ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৮ রানে হারিয়েছে মাশরাফি বিন মতুর্জার দল। তিন ম্যাচের সিরিজ জিতে নিয়েছে ২-১ ব্যবধানে। দীর্ঘ ৯ বছর পর দেশের বাইরে দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। দলের দুঃসময়ে সতীর্থদের প্রশংসা করতে যেমনি ভুলেন না, তেমনি সাফল্য হাতে ধরা দেওয়ার পরও মাশরাফি খুঁজে বেড়াচ্ছেন আরও উন্নতি করার জায়গাগুলো।
জয় শেষে মাশরাফি জানান, এই জয়ের জন্য কতটা উদগ্রীব হয়ে ছিল পুরো বাংলাদেশ দল, ‘আপনি যদি গত ৩-৪ মাসের দিকে তাকান, দেখবেন এই সিরিজ জেতাটা আমাদের জন্য খুব দরকার ছিল। বিশেষ করে এশিয়া কাপের আগে আমাদের জন্য ভালো হল।’
তবে জয়ের স্বস্তি নিয়েই ওয়ানডে ফরম্যাটের এবারের এশিয়া কাপের আগে মাশরাফি খুঁজে পাচ্ছেন কিছু উন্নতির প্রয়োজন, ‘তবে যেটা আমি আগেও বলেছি, কিছু জায়গায় এখনো উন্নতি করতে হবে। সিরিজ জেতা মানেই তো সব না। অনেক জায়গায় এখনো উন্নতির সুযোগ রয়েছে। অনেক উন্নতি করতে হবে।’
মাশরাফির ভাষ্য, ‘আজকে যেটা করেছি। আজকে দেখেন রুবেল ঠিক দলের প্রয়োজনমাফিক কাজটা করতে পেরেছে। এভাবে আমরা ছোট ছোট উন্নতি করছি। আরো কিছু উন্নতির জায়গা আছে। সবমিলিয়ে আমি বলবো যে এই জয়টা আমাদের জন্য খুব ভাল হল আরকি।’
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচের উইকেটে ৩০০ রানের মত সংগ্রহ খুব একটা বড় স্কোর নয়। ৩০১ রানের স্কোর দাঁড় করার পরও তাই জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারেনি বাংলাদেশ। বিশেষ করে স্বাগতিক দলের বিধ্বংসী দুই ওপেনার ক্রিস গেইল ও এভিন লুইস উইকেটে থাকাকালে তো না-ই। তবে দ্রুত উইকেট নেওয়ায় বাংলাদেশের ছুরে দেওয়া লক্ষ্যও বড় হয়ে গেছে উইন্ডিজের জন্য, এমনটাই মনে করেন মাশরাফি, ‘আমরা জানি যে উইকেট ভালো। প্রথম দিকে মনে হচ্ছিল যে আর ২০-২৫টা রান বেশি হলে হয়তো ভালো হতো। বোলিংয়ে দ্রুত উইকেট নেয়া প্রয়োজন ছিল। কারণ ওদের টপঅর্ডার বেশ শক্তিশালী। সৌভাগ্যবশত লুইস আগে আউট হওয়ায় গেইলের উপর চাপটা বেড়ে যায়। গেইলও ভালোভাবেই চালিয়ে যাচ্ছিল।’
৭ ওভার বল করা রুবেলের আঁটসাঁট বোলিং এই ম্যাচে বাংলাদেশকে দিয়েছে স্বস্তি। বিশেষ করে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা গেইলকে ফেরানোর মাধ্যমে তিনিই এনে দিয়েছিলেন সবচেয়ে কার্যকরী ব্রেক-থ্রু। তাই রুবেলের জন্য প্রশংসাবাণী থাকল অধিনায়কের কণ্ঠে, ‘আবারো রুবেলের কথা বলতে হয়। রুবেল এসে ওই জায়গাটাতে ব্রেকথ্রু দেয়াতে পরের বোলারদের জন্য সুবিধা হয়েছে।’
তবে এখনও ব্যাটিং-বোলিংয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিংয়ে কিছু উন্নতির প্রয়োজন মনে করছেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ খ্যাত এই ক্রিকেটার, ‘এছাড়া ফিল্ডিংটাও মনে হয়েছে কিছু উন্নতি প্রয়োজন। সাম্প্রতিক সময়ে আমি মনে করি যে ব্যাটিংয়েও কিছু জায়গা আছে, বোলিংয়েও কিছু জায়গা আছে।’
এ কথা সত্যি, ক্রিকেটে পারফরম্যান্সের পাশাপাশি প্রয়োজন হয় কৌশলেরও। মাশরাফি তাই একে আখ্যা দিলেন ‘মানসিক গেম’ বলে। তিন ম্যাচেই টাইগারদের লড়াকু পারফরম্যান্সে সেই রমানসিক গেম’র ছায়া দেখছেন মাশরাফি, ‘ক্রিকেট হচ্ছে একটা মানসিক গেম, তবে আমাদের ছেলেরা প্রথম ওয়ানডে থেকেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যদিও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আমরা হেরেছিলাম, তবে ওই ম্যাচের পুরোটা জুড়েই আমাদের আধিপত্য ছিল।’
সিনিয়ররা ভালো ফর্মে থাকায় এই সিরিজে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে টি-২০ সিরিজকে সামনে রেখে দলের তরুণ ও নতুন ক্রিকেটারদেরও দ্রুত জেগে ওঠা প্রয়োজন বলে মনে করেন বাংলাদেশের সেরা পেসার, ‘সবাই ভালো ফর্মে আছে, তবে তরুণদের জেগে উঠতে হবে। আমাদের বোলাররা তিন ম্যাচেই দুর্দান্ত বোলিং করেছে। এখন আমাদের টি-২০ সিরিজেও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলতে হবে। কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ টি-২০’তে বিশ্ব সেরা দল।’
ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষেও এই সিরিজে সিনিয়র ক্রিকেটাররা অসাধারণ খেলেছে। তিন ম্যাচে মাশরাফি বিন মুর্তজা সাতটি উইকেট নিয়েছেন। সিরিজের শেষ ম্যাচে ২৫ বলে ৩৬ রান করেন অধিনায়ক। এছাড়া তামিম ইকবাল দুইটি সেঞ্চুরি ও একটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ একটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। মুশফিকুর রহিম একটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। তিন ম্যাচে সাকিব আল হাসানের রান যথাক্রমে ৯৭, ৫৬ ও ৩৭। একুশে মিডিয়া।’’’
No comments:
Post a Comment