একুশে মিডিয়া, বিশেষ রিপোর্ট:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল অক্টোবরে। নির্বাচন ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ না হলে জানুয়ারির প্রথম দিকেই। এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও অন্যতম প্রধনম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি।
তবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হচ্ছেন আওয়ামী লীগের অর্ধ শতাধিক সংসদ সদস্য (এমপি)। দলীয় বিশৃঙ্খলা, বিভিন্ন মামলায় দন্ডিত, তৃণমূল থেকে বিচ্ছিন্ন, বার্ধক্যজনিত ও নানা কাজে সমালোচনা কুড়িয়ে মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়তে পারেন। দলীয় একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সর্বশেষ গত ৫ জুলাই আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও এ ব্যাপারে এমপিদের সতর্ক করেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য মনোনয়নে পরিবর্তন আনা এবং বিতর্কিতদের সরিয়ে নতুনদের মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলায় দলের সর্বত্র বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। বর্তমান এমপিদের অনেকেই বাদ পড়ার আতঙ্কে রয়েছেন।
এদিকে আগামী নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি অংশ নেবে এটা ধরে নিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো কোনো কারণে আগামী নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলেও এবারের চিত্র অন্য রকম হবে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন।
তাদের মতে, খালেদা জিয়ার জামিন, নির্দলীয় সরকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিলেও নিতে পারে। তবে এই নির্বাচন বর্জন নিয়ে বিএনপির মধ্যে দ্বিমত তৈরি হবে। বিএনপির একটি অংশ নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত। বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করলে শেষ মুহূর্তে দলটির ওই অংশ বেরিয়ে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে— এটা অনেকটাই নিশ্চিত বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন।
এদিকে নির্বাচন যে ফর্মেই হোক বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে সেই নির্বাচন কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে এবং আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলে দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ ব্যাপারে দলীয় এমপিদের বারবার সতর্ক করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যেভাবেই হোক বিএনপি নির্বাচনে আসবেই। আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, অত্যন্ত কঠিন হবে। আমার কাছে জরিপ রিপোর্ট আছে, আরও জরিপ হবে। যাদের জনপ্রিয়তা আছে তারাই মনোনয়ন পাবেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, টানা দুই মেয়াদে দল ক্ষমতায় থাকায় বর্তমানে যারা এমপি রয়েছেন তাদের কারো কারো মধ্যে নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। কারো কারো বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, জনবিচ্ছিন্ন, নেতাকর্মীদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পাড়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট আছে। এরাই বাদ পড়বেন।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, নানাভাবে নেত্রী তথ্য সংগ্রহ করছেন। দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতার আলোকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। বিএনপি যে ফর্মেই হোক নির্বাচনে আসবে।
এ কারণেই নেত্রী বলেছেন যে বিজয়ী হয়ে আসার মত প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। নেত্রী এমপিদের আগে থেকেই বারবার সতর্ক করেছেন। কেউ যদি গণবিরোধী কাজ না করে তাহলে তার মনোনয়ন থেকে বাদ পড়ার আতঙ্কে থাকার কিছু নেই।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং দলের সংসদীয় বোর্ডের সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, এটা তো স্বাভাবিক যাদের কর্মকাণ্ড ভালো না তারা আগামীতে মনোনয়ন পাবেন না। আমরা তো নির্বাচন করবো বিজয়ের জন্য, দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য।
দলকে বিজয়ী করতে হলে যারা নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসতে পারবেন তাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী তো বারবারই স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যাদের পারফরমেন্স ভালো না তারা মনোনয়ন পাবেন না। কাজেই আতঙ্কিত হওয়াটা স্বাভাবিক।
তফসিলের পর জাতীয় রাজনীতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। নেত্রী তো কাউকে সরিয়ে দিতে চান না। কেউ যদি তার অবস্থান ধরে রাখতে না পারে তাহলে তো কিছু করার নেই। কারণ তাকে তো তার পার্টি চালাতে হবে। তা না হলে তো পার্টি দুর্বল হয়ে যাবে। একুশে মিডিয়া।
No comments:
Post a Comment