‘আমার স্বামীকে জীবিত ফেরত চাই’, অপহৃত আ’লীগ নেতা’র স্ত্রী-একুশে মিডিয়া

অপহৃত আওয়ামী লীগ নেতা পারভেজ হোসেন সরকার। ফাইল ছবি

একুশে মিডিয়া, কুমিল্লা রিপোর্ট:

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী এক নেতাকে অপহরণ করা হয়েছে রাজধানীতে।

লালমাটিয়ার বি ব্লকের মিনার মসজিদে জুমার নামাজ শেষে বের হওয়ার পর প্রকাশ্যে একটি গাড়িতে করে তুলে নেয়া হয় পারভেজ হোসেন সরকার নামে ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে।

পারভেজ মিল্লার তিতাস উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-২ (তিতাস ও হোমনা) আসনে ভোটের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, একটি পাজেরো গাড়িতে করে আসা কয়েকজন যুবক পারভেজকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। তবে কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা জানতে পারেনি মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।

সে সময় পারভেজ হোসেনের খালাতো ভাই ফাহাদ মোহাম্মদ জানান, মসজিদ থেকে জুমার নামাজ পড়ে লালমাটিয়ার সি ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কে নিজ বাসার দিকে আসছিলেন পারভেজ। এ সময় একজনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কুশল বিনিময় করেন। এরপরই একটি কালো রঙের জিপ গাড়ি আসে এবং দুজন মিলে জোরপূর্বক তাকে নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, এ ঘটনার পরপরই বিষয়টি মোহাম্মদপুর থানায় জানানো হয়। পরে তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করেন। সেখানে দেখা গেছে, একটি কালো রঙের গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৪২৫৭৭) বাসার সামনে এসে থামে এবং দুজন লোক জোর করে পারভেজকে ওই গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।

এদিকে স্বামীকে জীবিত ফেরত পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন অপহৃত আওয়ামী লীগ নেতা পারভেজ হোসেন সরকারের স্ত্রী তাহমিনা আফরোজ।

শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় লালমাটিয়া সি ব্লকের ৩০ নম্বর বাসার সামনে সাংবাদিকদের মাধ্যমে তিনি এ অনুরোধ জানান।

তাহমিনা আফরোজ বলেন, ‘পারভেজ ঢাকায় উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্যপদে রয়েছেন। তিনি নিক্সন চৌধুরী, ফজলে নুর তাপসসহ তরুণ নেতাদের সঙ্গে উঠাবসা করতেন। নমিনেশন পেলে সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে গেল। আমার স্বামীকে জীবিত ফেরত চাই।’

তাহমিনা আফরোজ অভিযোগ করে বলেন, ‘কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল শিকদার ও তার লোকজনই তুলে নিয়ে গেছে। পারভেজের আর কারও সঙ্গে শত্রুতা ছিল না। সোহেলের ভয়ে তিনি গত ১ বছর ২ মাস ধরে তিতাস এলাকায় যেতেন না।’

এর আগে সোহেল শিকদারসহ তার লোকজন পারভেজের ওপর হামলা চালিয়েছিল উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এক বছর আগে সোহেল শিকদারসহ তার লোকজন পারভেজকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে ও হামলা করে। কিন্তু গুলি গাড়িতে লাগায় বেঁচে যান পারভেজ। তখন থেকে তিনি আর ওই দিকে যাননি। ঢাকাতেই রেস্তোরাঁর ব্যবসা দেখাশোনা করেন। আমরা সোহেলদেরই সন্দেহ করছি। তাদের নামেই থানায় অভিযোগ করেছি।’

সন্ধ্যার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন র‌্যাব-২ এর সিওসহ একদল সদস্য। গোয়েন্দা পুলিশের লোকজনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছেন।

পারভেজ হোসেন সরকারের স্ত্রী তাহমিনা আফরোজ, দুই ছেলে আব্দুল্লাহ (৭) ও আহরারকে (২) সান্ত্বনা দিতে ছুটে আসেন আওয়ামী লীগ নেতা নিক্সন চৌধুরী, জেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর বলেন, ‘লালমাটিয়া এলাকা থেকে পারভেজ হোসেন সরকার নামে এক ব্যক্তিকে গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তিনি কুমিল্লার তিতাস উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন।’

‘আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে কাজ করছি’ বলে জানান ওসি। একুশে মিডিয়া।’