বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী, বীরের নাম শহীদ মৌলভী সৈয়দ আহমদ-একুশে মিডিয়া - একুশে মিডিয়া একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ গণমাধ্যম হিসেবে সংবাদ পরিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Sunday, 12 August 2018

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী, বীরের নাম শহীদ মৌলভী সৈয়দ আহমদ-একুশে মিডিয়া


লেখক: মোহাম্মদ খোরশেদ আলম:
একুশে মিডিয়া, মুক্তমত রিপোর্ট:
১১ই আগষ্ট ১৯৭৭ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী শহীদ মৌলভী সৈয়দ আহমদ এর ৪১তম শাহাদাত বার্ষিকী। এই বীরের গৌরব গাথা বর্ণাঢ্য দুঃসাহসী ও সংগ্রামী জীবনের ঘটাবলী নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম ও মিডিয়াতে অনেক প্রচার-প্রচারনা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় শৈশব থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁর সংগ্রামী জীবনের কিছু কথা পাঠকের উদ্দেশ্যে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।”

১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঢাকার ৩২ নম্বর ধানমন্ডি নিজ বাসভবনে স্ব-পরিবারে হত্যার পর চট্টগ্রামে গেরিলা বাহিনীর প্রধান (মুক্তিযুদ্ধকালীন) সময়ের সাহসী সন্তান শহীদ মৌলভী সৈয়দ আহমদ দারন ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন।”

প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে তিনি সে দিন চট্টগ্রাম শহরের উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে শেখ মুজিব রোডস্থ ভার মার্কেট সংলগ্ন সৈয়দ মাহমুদুল হকের বাড়িতে গোপন আস্তানা করেন। আন্দোলন সংগ্রামের জন্য তিনি প্রথমে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে তোলেন। বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোস্তাক সরকারের বিরদ্ধে বেশকটি সফল অপারেশন করতে সমর্থ হন। যারা আজ বলেন জাতির পিতা হত্যার পর দেশে কোন প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে উঠেনি। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, প্রতিবাদ হয়েছিল বলেই ১৯৭৭ সালে জুলাই মাসে তৎকালীন ভারতের সরকার প্রধান মুরারজী দেশাই ও খুনি স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের যোগ সাজসে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর মৌলভী  সৈয়দ তাঁর সাথে থাকা ক’জন সহযোগীকে ময়মনসিংহ সীমান্ত দিয়ে পুশব্যাক করান। সে সময় মৌলভী সৈয়দকে ঢাকা ক্যান্টেনম্যান্টে নিয়ে যাওয়া হয়।”

গ্রেফতারের পর অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়েও মৌলভী ছৈয়দ নিজের পরিচয় গোপন রেখেছিলেন। এক পর্যায়ে খুনীরা তার গ্রামের বাড়ি বাঁশখালীর শেখেরখীল ইউনিয়নের লাল জীবন গ্রাম থেকে তার বৃদ্ধ পিতাকে ধরে এনে সুকৌশলে তাকে সনাক্ত করেন। এর পর ১১ আগষ্ট প্রত্যুষে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মৌলভী সৈয়দ আহমদকে। বিচারের নামে সেই দিন প্রহসন হয়েছিল এই বীরের সাথে।”

মুক্তিযুদ্ধের এই গেরিলা সংগঠক ১৯৩৮ সালের ৪ মার্চ বাঁশখালী উপজেলা শেখেরখীল ইউনিয়নের লাল জীবন গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম একরাম সিকদার ও মাতা উম্মে উমেদা খাতুন। পরিবারের পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। পুইছড়ি ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে কৃতিত্বের সাথে দাখিল পাশ করেন। পরবর্তীতে ইজ্জতিয়া জুনিয়র হাই স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন। পরে তিনি চট্টগ্রাম শহরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সরকারী মুসলিম হাই স্কুলে আবারো সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন। এ স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে এস.এস.সি পাশ করেন। এরপর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সিটি কলেজে ভর্তি হন (বর্তমান সরকারী সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ) সেখান থেকে শুরু হয় তাঁর সংগ্রামী জীবন।”

১৯৬৭-৬৮ সালে প্রথমে ছাত্র সংসদের জি.এস ও পরবর্তীতে ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে রাজনৈতিক সংগ্রাম আন্দোলনে প্রথম কারাবন্দী হন। জেলে বন্দী থাকা অবস্থায় কৃতিত্বের সাথে ডিগ্রী পাশ করেন। ’৬৯ এর গণ-আন্দোলনে তিনি চট্টগ্রামের ছাত্র ও যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করেন। ’৭১ এ মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে ছিলেন মৌলভী সৈয়দ। এ সময় “জয় বাংলা বাহিনী” গঠন করেন তিনি।”

চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে এ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে পাকিস্তানের স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া সরকারের দুঃশাসনের বিরদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলেন। তিনি ছিলেন এ সংগঠনের প্রধান। ১৯৭১ সালে যখন পাকিস্তানিরা নির্বিচারে মানুষ হত্যায় মগ্ন এই বিপবী তখন চট্টগ্রামের হাজার হাজার ছাত্র ও যুব সমাজকে সাথে নিয়ে পশ্চিমা শাসক গোষ্টীর অত্যাচার-অনাচার ও জুলুমের বিরদ্ধে রাখে দাঁড়ানোর দীপ্ত প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।  মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ সরদার, মুক্তিযোদ্ধা ড.মাহফুজুর রহমান, সাখাওয়াত জামান মজনু, মেজর রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এই কিংবদন্তি নেতার সংগ্রামী জীবন কাহিনী নিয়ে বার বার এ কথাগুলো লিখেছেন।”

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষনের মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষনার ইঙ্গিত পেয়েই এ সাহসী সৈনিক চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে স্বাধীনতাকামী স্বশস্ত্র ছাত্র ও যুবকদের নিয়ে গড়ে তুললেন গেরিলা বাহিনী। মৌলভী সৈয়দ শহরের কেন্দ্রস্থলে স্থানীয়ভাবে বিশাল বাহিনী গড়ে তুলেন। ভারতীয় ট্রেনিং প্রাপ্ত গেরিলা গ্রাপের মিত্র বাহীনীরা অস্ত্র স্বস্ত্রে সজ্জীত হয়ে শএদের অবরদ্ধ করে রাখা শহরে  প্রবেশ করেন। রাজাকার, আল বদর, আল শামসদের অবস্থান জেনে সেখানে তিনি আক্রমন করতেন। এটাই ছিল তার নেতৃত্বের বিচক্ষণতা। দখলদার পাকিস্তানিদের হাত থেকে নিজ মাতৃভূমি এ চট্টগ্রাম শহরের অভ্যন্তরে থেকেই দেশ প্রেম, কর্মনিষ্ঠা, সাহসীকতার সাথে সাংগঠনিক তৎপরতা ও প্রবল মনোবলের কারনে মুক্তিযুদ্ধে এক বিশাল অবস্থান করে তুলেন। সে সময় তার প্রতিষ্ঠিত গেরিলা বাহিনীর শক্ত অবস্থানে ছিল উত্তর আগ্রাবাদ, পাঠানটুলী, মনছুরাবাদ, রামপুরা, গোসাইলডাঙ্গা ও হালিশহর সহ গ্রামীন জনপদে। তিনি স্থাপন করে ছিলেন শত শত মুক্তিযুদ্ধের আশ্রয়স্থল। এরকম একজন বীরের জন্ম বাঁশখালীতে হওয়ায় আমরা এলাকাবাসী গর্বিত।”

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট দেশের পটপরিবর্তনের পর ১৯৭৬ সালে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে তিনি আশ্রয় গ্রহণ করেন। সেখানে বসে তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরদ্ধে জাতীয় এবং আর্ন্তজাতিক ভাবে প্রতিরোধ আন্দোলনের ডাক  দেন। ভারতে অবস্থান কালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেই দেশের অভ্যন্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার সুবিধা ভোগিরা তার বিরদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে লাগলেন। সফলভাবে ভারতের আশ্রয় গ্রহণ প্রসঙ্গে মৌলভী সৈয়দ ও তার সহযোগীদের অবস্থান সম্পর্কে অবগত হন ষড়যন্ত্র কারীরা। সেদিন প্রতিরোধ সংগ্রামে চট্টগ্রামের যুবনেতা সৈয়দ মাহমুদুল হক, সৈয়দ আবদুল গণি, মোহাম্মদ জাকারিয়া, এ্যাডভোকেট সালাহ উদ্দীন, দিপেশ চৌধুরী, মুহাম্মদ ইউনুছ বাঁশখালীর সুভাষ আচার্য ও শফিকুল ইসলাম সহ অনেককে গ্রেপ্তার করা হয় এবং “চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র মামলা” শিরোনামে একটি মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন শহীদ মৌলভী সৈয়দ ও চট্টলবীর আলহাজ্ব এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরী। এ মামলার বেশিরভাগ আসামি হয়েছিলেন আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ”

এমনকি দেশ প্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের “রাষ্ট্রদ্রোহী” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল এই মামলায়। এটা ছিল জাতির জন্য অত্যন্ত দুঃখ ও লজ্জ্বাজনক ঘটনা। এভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা চট্টগ্রাম শহর গেরিলা বাহিনীর প্রধান মৌলভী সৈয়দ বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। নিজের রক্ত দিয়ে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসার প্রমান রেখে গেছেন তিনি। যা নতুন প্রজন্মের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা এ বীর শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং মহান আল্লাহ্ তালার কাছে এই ফরিয়াদ করছি তিনি যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করেন। আমীন”

লেখক : শ্রম সম্পাদক : চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ।

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages