একুশে মিডিয়া, বিনোদন রিপোর্ট:
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার অভিনেত্রী কাজী নওশাবা দুই দিনের রিমান্ড শেষে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সোমবার (১৩ আগস্ট) বিকাল পৌনে ৪টার দিকে নওশাবাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়।।”
সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নাছের আহমেদ বলেন, নওশাবা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।।”
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে করা মামলায় নওশাবাকে দ্বিতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুইদিনের হেফাজত শেষে সোমবার আদালতে হাজির করার কথা ছিল।।”
কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাকে নিয়ে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত প্রাঙ্গণে পৌঁছালে নওশাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন।।”
আদালত সংশ্লিষ্ট পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই শওকত আকবর বলেন, অসুস্থ হয়ে পড়ায় নওশাবাকে আদালতে হাজির না করে সরাসরি হাসপাতালে নেওয়া হয়।।”
এদিকে নওশাবার জন্য তার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন জানালেও তা নাকচ করে দিয়েছেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর।।”
আদালত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুপুরের পর নওশাবাকে নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়েছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক মো. রফিকুল ইসলাম।।”
কিন্তু আদালত প্রাঙ্গণেই নওশাবা অসুস্থ বোধ করার কথা জানালে তাকে এজলাসে না নিয়ে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান তদন্ত কর্মকর্তা রফিকুল।।”
এদিকে নওশাবার অনুপস্থিতিতে বিকালে হাকিম আদালত তার জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী এ এইচ ইমরুল কাওসার।।”
তিনি বলেন, ‘আমি জামিন চেয়েছিলাম; বলেছি, তিনি (নওশাবা) অসুস্থ। যদি পুলিশ হেফাজতে কোনো অঘটন ঘটে? তাকে জামিন দিন আমরা বাইরে তার চিকিৎসা করাব।।”
কিন্তু শুনানি শেষে সেই আবেদন বিচারক আসাদুজ্জামান নূর নাকচ করেন বলে জানান এই আইনজীবী।।
এদিকে রিমান্ড শেষে নওশাবাকে আদালতে উপস্থিত না করে হাসপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রে আদালতকে না জানানোয় তদন্ত কর্মকর্তাকে বিচারক ভর্ৎসনা করেন বলে জানিয়েছেন উপস্থিত আইনজীবীরা।।”
নওশাবার আইনজীবীর ভাষ্য অনুযায়ী, তদন্ত কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আর হেফাজতের আবেদন করেননি।।”
এদিকে জামিনও নাকচ হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী এই অভিনেত্রীর কারা হেফাজতে যাওয়ার কথা।।
কিন্তু সন্ধ্যার পর জানতে চাইলে ঢাকার সিএমএম কোর্ট হাজতের ওসি মো. মোতালেব বলেন, ‘আমাদের কারাগারে পাঠানোর নিবন্ধন খাতায় তালিকায় নওশাবার নাম নেই।।”
অর্থাৎ নওশাবা কারাগারে যাননি। সেক্ষেত্রে তার তদন্ত কর্মকর্তার হেফাজতে থাকার কথা।
কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের মোবাইলে ফোনে রাতে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।।”
নওশাবার আইনজীবী ইমরুল কাওসার বলেন, ‘উনি অসুস্থ। তার কিছু পরীক্ষা প্রয়োজন। সম্ভবত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।।”
খবর নিয়ে জানা যায়, নওশাবাকে বিকালে ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। রাত ১০টার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।।”
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, ‘আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।।”
উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে নওশাবাকে আটক করে র্যাব। ওইদিন দুপুরে জিগাতলায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অন্য যুবকদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় ফেসবুক লাইভে এসেছিলেন অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ।।”
সে সময় নওশাবা বলেছিলেন, ‘আমি কাজী নওশাবা আহমেদ, আপনাদের জানাতে চাই। একটু আগে জিগাতলায় আমাদেরই ছোট ভাইদের একজনের চোখ তুলে ফেলা হয়েছে এবং দুজনকে মেরে ফেলা হয়েছে। আপনারা সবাই একসঙ্গে হোন প্লিজ। ওদের প্রোটেকশন দেন, বাচ্চাগুলো আনসেভ অবস্থায় আছে, প্লিজ। আপনারা রাস্তায় নামেন, প্লিজ রাস্তায় নামেন, প্লিজ রাস্তায় নামেন এবং ওদের প্রোটেকশন দেন।।”
‘সরকার প্রোটেকশন দিতে না পারলে আপনারা মা-বাবা, ভাইবোন হয়ে বাচ্চাগুলোকে প্রোটেকশন দেন, এটা আমার রিকোয়েস্ট। এদেশের মানুষ-নাগরিক হিসেবে আপনাদের কাছে রিকোয়েস্ট করছি যে, জিগাতলায় একটি স্কুলে একটি ছাত্রের চোখ তুলে ফেলা হয়েছে এবং দুজনকে মেরে ফেলা হয়েছে এবং ওদের অ্যাটাক করা হয়েছে। ছাত্রলীগের ছেলেরা সেটা করেছে। প্লিজ ওদের বাঁচান প্লিজ। তারা জিগাতলায় আছে।’
অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ফেসবুকজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে নওশাবার ফেসবুক লাইভের সেই ভিডিও।”
গ্রেপ্তারের পর নওশাবা জানিয়েছিলেন, তিনি একজনের ফোন পেয়ে ফেসবুক লাইভে আসেন। জিগাতলায় এরকম কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না সেটি যাচাই-বাছাই না করেই তিনি এ তথ্য লাইভের মাধ্যমে প্রচার করেছেন।।”
৫ আগস্ট নওশাবাকে আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম তাকে চারদিনের রিমান্ডে পাঠান।”
প্রথম দফায় রিমান্ড শেষে গত ১০ আগস্ট আবার দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে নেওয়া হয় নওশাবাকে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় শুক্রবার (১০ আগস্ট) বিকেলে ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। ঢাকা মহানগর হাকিম আমিরুল হায়দার চৌধুরী শুনানি শেষে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।। একুশে মিডিয়া।”
No comments:
Post a Comment