দুঃখ একটাই ‘জিয়ার’ বিচারটা করতে পারলাম না, ধানমন্ডিতে: প্রধানমন্ত্রী-একুশে মিডিয়া - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Wednesday, 1 August 2018

দুঃখ একটাই ‘জিয়ার’ বিচারটা করতে পারলাম না, ধানমন্ডিতে: প্রধানমন্ত্রী-একুশে মিডিয়া


একুশে মিডিয়া, ঢাকা রিপোর্ট:
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যায় জড়িত ছিল অভিযোগ করে তার বিচার না করতে পারার আক্ষেপের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জিয়াউর রহমান যেভাবে মারা গেছেন, সেটি তার অবধারিত পরিণতি ছিল বলেও মনে করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
শোকের মাস আগস্টের প্রথম দিন কৃষক লীগ আয়োজিত রক্তদান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে এই কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার বাসভবন প্রাঙ্গণে এই আয়োজন হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের জাতির জনককে সপরিবারে এই বাড়িতেই হত্যা করা হয়। তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় তারা বেঁচে গেছেন। আর ২১ বছর পর শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ফেরার পর তার পিতা হত্যার বিচার শুরু করেন। আর ২০১০ সালে আবার ক্ষমতায় আসার পর পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘তবে আমার দুঃখ একটাই, তার (জিয়াউর রহমান) বিচারটা করতে পারলাম না, তার আগেই সে মরে গেল।’
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়া জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯টি সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছিল। আর ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানে নিহত হন জিয়াউর রহমানও। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়ার যা পরিণতি হয়েছিল তা তার অবধারিত।’
বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততার প্রমাণ হিসেবে আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল ফারুক ও রশিদের বিবিসিতে দেয়া সাক্ষাৎকারের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
“তারা এটাও বলে, তাদের সাথে জিয়াউর রহমানের সম্পর্ক ছিল। এবং তারা জিয়াউর রহমানকে জানিয়েছিল এবং জিয়াউর রহমান বলেছিল, ‘এগিয়ে যাও’ এবং সম্পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিল, বলেছিল তোমরা সফল হলে আমরা আছি।’
প্রখ্যাত সাংবাদিক অ্যান্থনি মারসাকাহানস বিবিসির হয়ে এই সাক্ষাৎকার দেন। বঙ্গবন্ধু কন্য বলেন, ‘তাদের (ফারুক, রশীদ) জিজ্ঞেস করেছে কেন তাকে হত্যা করেছে। তারা বলেছে, জনগণের কাছে যাতে সে (বঙ্গবন্ধু) জনপ্রিয়তা হারায় সে জন্য বহু চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তার জনপ্রিয়তা পাহাড়সহ ছিল। কিছুতেই তার জনপ্রিয়তা কমানো যায়নি। কাজেই তাকে হত্যা ছাড়া নাকি ওদের আর কোনো পথ ছিল না।’
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বঙ্গবন্ধু হত্যার আইনি বৈধতা দিয়ে জারি করা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ এবং খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়ার কথাও তুলে ধরেন জাতির পিতার কন্যা।
‘একবার চিন্তা করে দেখেন আপনারা, বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বা দূতাবাসে চাকরি করে কারা? জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিরা। তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল জিয়াউর রহমান। কেন পুরস্কৃত করেছিল? জিয়া এই ঘটনায় সম্পূর্ণভাবে জড়িত ছিল বলেই এই খুনিদের পুরস্কৃত করেছিল।’
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বিচারের পথে আইনি বাধা দূর করে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জাতির পিতা হত্যার বিচারের কাজ শুরু করি। এ বিচারের কাজ করতে গিয়ে অনেক বাধা, অনেক ধামকি, অনেক হুমকি অনেক কিছুই আমাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।’
‘কিন্তু আমি জানি এই অন্যায়কে কখনও প্রশ্রয় দেয়া যায় না। আমি আর রেহানা বিদেশের মাটিতে ছিলাম বলে বেঁচে গিয়েছিলাম। তাই আমি মনে করি যে, এটা আমাদের কর্তব্য, এই খুনিদের বিচার বাংলার মটিতে করবই। আর সেই সাথে সাথে বাংলদেশকে গড়ে তুলব জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে।’
‘এখনও কিছু খুনি লুকিয়ে আছে বিভিন্ন দেশে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু এর মধ্যে যাদেরকে ধরতে পেরেছিলাম এবং দুই জনকে বিদেশ থেকে আনতে পেরেছিলাম তাদের সাজা কার্যকর করতে পেরেছিলাম।’
পাকিস্তানিরা ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে চাইলেও তারা পারেনি, অথচ এই মাটির মানুষ যাদের ওপর তার অগাধ বিশ্বাস ছিল তারাই হত্যা করেছে উল্লেখ করে আক্ষেপ করেন শেখ হাসিনা।
খুনিরা আগে থেকেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে। সে কথাই উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘কি দুর্ভাগ্য আমাদের! খুনি রশীদ, ফারুক, ডালিম, নুর, এরা কারা? এদের তো প্রতিনিয়ত আমাদের বাসায় যাতায়াত ছিল।’
‘ডালিম, ডালিমের শাশুড়ি তার বউ তার শালী তো দিন রাত ২৪ ঘণ্টা আমাদের বাড়িতেই পড়ে থাকত।’
‘নুর ছিল, কামাল যখন মুক্তিযুদ্ধে চলে যায়, সেই মুক্তিযুদ্ধে ট্রেইনিং নিয়ে সে যুদ্ধ শুরু করে, যখন আমাদের সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা হলো কর্নেল ওসমানী সাহেবের সঙ্গে কামলাকে এডিসি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হলো, সেই একই সাথে নুর ছিল এডিসি। দুইজন এক সাথে কর্নেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিল।’
‘খুনি মোশতাক তো আমাদের দলেরই একজন ছিল। বেঈমানি করেছিল। কিন্তু সে তিন মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারে নাই। মোশতাকের পতনের পরে প্রধান বিচারপতিকে রাষ্ট্রপতি করা হয়েছিল। আর জিয়াউর রহমান সায়েম সাহেবকে বঙ্গভবনে অস্ত্র ঠেকিয়ে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে।’
‘সায়েম সাহেবকে বাধ্য করেছিল তাকে (জিয়াউর রহমান) রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগে দিতে এবং সে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে ক্ষমতা দখল করে এবং ইতিহাস বিকৃতি শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নস্যাৎ করা হয়।’
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯টি সামরিক অভ্যুত্থানে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘সেনাবাহিনীর বহু অফিসার, বহু সৈনিককে, বিমান বাহিনীর অফিসারদের হত্যা করা হয়েছিল নির্বিচারে।’
‘মুক্তিযোদ্ধা অফিসার কেউ ছিল না, একে একে সবাইকে মেরে ফেলে দিয়েছিল, শুধু দুই চারজন যারা জিয়ার সাথে দালালি করেছিল, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দল গঠন করেছিল।’
‘এবং এই দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ধ্বংস করা, এ দেশে দুর্নীতিকে প্রতিষ্ঠা করা, ঋণখেলাপি সৃষ্টি করা, এই সমস্ত অপকর্মগুলো জিয়া করে যায়।’
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর পরিস্থিতি কেমন ছিল, সেটিও তুলে ধরেন জাতির জনকের কন্যা। বলেন, ‘আমাকে, রেহানাকে দেশে আসতে দেয়া হলো না। রেহানার পাসপোর্টটা পর্যন্ত রিনিউ করে দেয়নি জিয়াউর রহমান।’
‘আওয়ামী লীগ যখন আমাকে যখন সভানেত্রী নির্বাচিত করে (১৯৮১ সালে) এবং জোর করে আমি যখন দেশে ফিরে আসি, আমি কিন্তু দেশে ফেরার পর এই বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। এই বাড়িতে তালা দেয়া ছিল।’
‘এই রাস্তার ওপর বসে বাবা মা ভাই বোনের জন্য মিলাদ পড়েছিলাম এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের জন্য মিলাদ পড়েছিলাম।’
‘আমাকে অন্য বাড়ি, অনেক কিছু সেধেছিল। আমি কোনো কিছু চাইনি। খুনিদের কাছে আমার কিছু চাওয়ার নেই।’
বারবার হত্যা চেষ্টা নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘বারবার আমার ওপর আঘাত এসেছে, আরও হয়ত আসবে। কিন্তু আমি কখনও সেগুলোকে এটা পরোয়া করি না।’
‘মৃত্যুকে কখনও পরোয়া করিনি। আমি শুধু এটুকুই মনে করি, আমি বেঁচেই তো আছি আমার বাবার অধরা কাজগুলো সম্পন্ন করতে। বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে বাংলাদেশকে বিশ্বে একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে।’
‘আজকে ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ করতে সক্ষম হয়েছি, এখন আমাদেরকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে হবে। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদা ফিরে পেয়েছে। আমরা মহাকাশ জয় করেছি, সাগর জয় করেছি, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথে এগিয়ে চলেছি। আজকে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ।’
জাতির পিতা নিজের বুকের রক্ত দিয়ে গেছেন উল্লেখ করে এই ‘রক্তের ঋণ’ শোধ দেয়ার কথাও বলেন তার কন্যা। বলেন, ‘বাংলাদেশকে তার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গতে তুলেই আমরা তার রক্তের ঋণ শোধ দিতে পারব। আমরা তা পারব সে বিশ্বাস আছে। আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি, আরও এই দেশকে আমরা এগিয়ে নিতে পারব।’
বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে সে গতি যেন থেমে না যায় তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আরিফুর রহমান দোলনের রক্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্যা, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক রেজাসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় শোকের মাস আগস্টকে ঘিরে কৃষক লীগ প্রতিবছর স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করে। দলটির পরিচালনায় শোকের পুরো মাস সারা দেশে এ কর্মসূচি চলবে।  একুশে মিডিয়া।

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages