শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে নেমেছে যেসব তারকা!-একুশে মিডিয়া - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Wednesday, 1 August 2018

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে নেমেছে যেসব তারকা!-একুশে মিডিয়া


একুশে মিডিয়া, বিশেষ রিপোর্ট:
তিনদিন শেষে চতুর্থদিনের মতো রাস্তায় নেমেছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। রবিবার (২৯ জুলাই) বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রবি, সোম, মঙ্গলবার শেষে বুধবার (১ আগস্ট) সড়কে নেমে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। রবি ও সোমবার ভালো গেলেও মঙ্গলবার পথে নেমেই পুলিশের মুখোমুখী হতে হয় শিক্ষার্থীদের।
এরপর চতুর্থ দিনের মতো আন্দোলন অব্যহত রেখেছে শিক্ষার্থীরা।
সহপাঠির মৃত্যু কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছে না স্কুল-কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এমন অবস্থায় যেন ক্লাসে মনোযোগ থাকে না তাদের। শোক-ক্ষোভ উভয়ই কাজ করে তাদের ভিতরে। এর ফলে তৈরি হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার। আর এ প্রতিক্রিয়াই তাদের নিয়ে আসে পথের দ্বারপ্রান্তে!
দেশের এমন পরিস্থিতিতে চুপ করে নেই তারকারাও। নিজ নিজ অবস্থানে থেকে তারাও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন এই আন্দোলনের রেশ। শুধু তাই নয়, এবার তারা রাজপথেও নেমে আসছেন।
পরিবহন ব্যবস্থার অনিয়ম ও যাত্রী হত্যার প্রতিবাদে চলমান ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন বেশ কয়েকজন বিনোদন জগতের তারকা।
মূলত মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) থেকেই রাস্তায় আন্দোলনরত ছাত্রদের সঙ্গে যোগ দেওয়া শুরু করেন শিল্পীরা। এদিনই পুলিশ আটক করেন ইউটিউব সেলিব্রেটি ও অভিনেতা-নির্মাতা সালমান আল মুক্তাদিরকে। পরে অবশ্য তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এছাড়াও আজ এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন নির্মাতা এসএ হক অলীক, আব্দুল্লাহ রানা, অভিনয়শিল্পী মনিরা মিঠু, জ্যোতিকা জ্যোতি, রওনক হাসান, তৌসিফ মাহবুব, নওশাবা ও সংগীতশিল্পী প্রীতম হাসান।
এরমধ্যে এসএ হক অলীক, আব্দুল্লাহ রানা, রওনক হাসান, মনিরা মিঠু উত্তরায় আজ বেলা ১২টার দিকে অংশ নেন। তৌসিফ মাহবুব উত্তরা ও জ্যোতিকা জ্যোতি শাহবাগে অংশ নিতে রওনা হয়েছেন বলে জানান।
নওশাবা আন্দোলনকারীদের ব্যানার পোস্টার তৈরিতে সহযোগিতা করছেন।
মঙ্গলবার ঢাকার বেশ কয়েক জায়গায় লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেসব ঘটনার ছবি ও ভিডিও ঘুরে ফিরছে। মিরপুরে শহীদ স্মৃতি পুলিশ কলেজের ছাত্রদের অবরোধকালে পুলিশের লাঠিচার্জে মাথা ফেটে যায় এক শিক্ষার্থীর- এমন একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। একই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের ছবি ভাইরাল হয়।
শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন চিত্রনায়ক ওমর সানী।
তিনি আহবান জানান, ‘দয়া করে বাচ্চাদের গায়ে হাত দেবেন না।’ তারা কোন আসনের নমিনেশন পাবার জন্য পথে নামে নাই, তাদের দাবি পথের নিরাপত্তা কেবল।’
ওমর সানী মঙ্গলবার বিকেলে নিজের ফেসবুক হ্যান্ডেলে বাচ্চাদের মাথায় ভরসার হাত রাখার আহবান জানিয়ে লিখেছেন, ‘এই দেশের পরবর্তী কর্ণধার এই বাচ্চারাই। এখনো অনেক বাচ্চা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। বাচ্চাদের মাথায় লাঠির আঘাত নয়, ভরসার হাত রাখুন। মা-বাবাদের পথে নামতে বাধ্য করবেন না দয়া করে। ওরা আমাদের সন্তান। নাড়ি ছেঁড়া ধন! জারজ নয়!’
এছাড়া বেশ কয়েকজন শোবিজ তারকা রাস্তায় নেমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। স্লোগান দিচ্ছেন নিরাপদ সড়কের দাবিতে। এর মধ্যে আছেন, তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় অভিনেতা তৌসিফ মাহবুব, অভিনেত্রী মনিরা মিঠু, অভিনেতা আব্দুল্লাহ রানা, অভিনেতা ও ইউটিউবার সালমান মুক্তাদির, আরজে টুটুল, নির্মাতা এস এ হক অলিকসহ অনেকেই।
এছাড়াও প্রতিনিয়ত সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন স্ট্যাটাস ও পোস্ট দিয়ে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ জোগাচ্ছেন আরো অনেক তারকা। রয়েছেন জনপ্রিয় নির্মাতা মাবরুর রশীদ বান্নাহ, চিত্রনায়ক ওমর সানী, অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ, শাহনাজ খুশি, নাট্যকার মাসুম রেজা, নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, জ্যোতিকা জ্যোতিসহ অনেক তারকা।
নতুন প্রজন্মের অভিনয়শিল্পী তৌসিফ মাহবুব, তিনি বলেন, ‘আর চুপ থাকতে পারছি না। শুটিং থেকে অনুমতি নিলাম, দুপুরে নামছি তোমাদের সঙ্গে উত্তরায়। আমার কোনো সহকর্মী ভাইবোনেরা নামতে চাইলে খুশি হব।’
আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এভাবেই নিজের একাত্মতার কথা বললেন তিনি। আজ বুধবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন।
সংগীতশিল্পী মাকসুদ বলেন, ‘বন্ধুদের অনুরোধ করছি, বাচ্চা বা পোলাপান—এ শব্দগুলো ব্যবহার করা বন্ধ করুন। এই একুশ শতকে এসব এবিউসিভ শব্দ সোজা কথায় গালি। ওদের বয়স আমাদের চেয়ে কম হতে পারে। কিন্তু মেধা, মনন ও ব্যবহারে আমাদের চেয়ে ওরা অনেক উচ্চ মানুষিক মার্গে বসবাস করে, এ কথাটা ভুলবেন না। ওদের মনের ধারের কাছেও আমরা ভিড়তে পারব না। এমনকি স্বপ্নেও না। ওদের সম্মান পেতে হলে আগে আপনারা সম্মান দিতে শিখুন।’
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘বাচ্চা’ বলে মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘বাচ্চা মানে বাচ্চা না, ভাইবোনেরা আমার! বেশ কিছু ভিডিওতে আন্দোলনরত স্কুল-কলেজের ছোট ছোট বাচ্চাদের কথা শুনে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। আমি সব সময়ই বিশ্বাস করেছি কাহলিল জিব্রানের কবিতা। যেখানে লেখা হয়েছে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পূর্ববর্তী প্রজন্মের চেয়ে এগিয়েই থাকে। তোমরা এগিয়েই আছো ভাইবোনেরা! লাভ ইউ।’
অভিনয়শিল্পী শাহনাজ খুশি বলেন, ‘দয়া করে বাচ্চাদের গায়ে হাত দেবেন না। তারা কোনো আসনের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য পথে নামে নাই, তাদের দাবি কেবল পথের নিরাপত্তা। এই দেশের পরবর্তী কর্ণধার এই বাচ্চারাই। এখনো অনেক বাচ্চা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। বাচ্চাদের মাথায় লাঠির আঘাত নয়, ভরসার হাত রাখুন। মা-বাবাদের পথে নামতে বাধ্য করবেন না। ওরা আমাদের সন্তান। নাড়ি ছেঁড়া ধন!’
মেহের আফরোজ শাওন বলেন, ‘ওরা কিন্তু রাজনীতি বোঝে না, রাজনীতি করতে পথে নামেনি। কিন্তু রাজনীতির প্রতি, রাজনীতিবিদদের প্রতি কী পরিমাণ ঘৃণা জন্মে যাবে তাদের মনে, ভেবে দেখছেন! এই ছেলেরাই আগামী ২/১ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে, হয়তো ছাত্র রাজনীতিও করবে। আজকের এই ঘৃণা ওদের ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে দেবে? প্রধানমন্ত্রী, তিনি তো কোমল হৃদয়ের মানুষ, সারা জীবন সেভাবেই দেখে এসেছি তাঁকে। আজ কেন তাঁর কোমলতা দেখাতে দেরি করছেন? তাঁর সম্বন্ধে এই বাচ্চাগুলোর ধারণা কোন দিকে যাচ্ছে!’
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড বলেছেন, ‘রাষ্ট্র প্লিজ থামুন। ওরা বাচ্চা। ওরা সবেমাত্র স্কুলছাত্র। ওরা আমাদের সন্তান। ওরা ধান্দাবাজ রাজনীতিক না। ওরা ব্যাংক লুটেরাদের বাঁচানোর পক্ষের কোনো শক্তি না। ওরা ধর্ষকের রক্ষক না। ওরা ক্ষমতা দখলের লোভে রাস্তায় না। ওরা শুধু ওদের বন্ধু-সহপাঠীর নির্মম মৃত্যুকে মেনে নিতে পারেনি। ওরা বন্ধু হত্যার বিচার চায়। ওরা সড়কে জীবনের নিরাপত্তা চায়। এটা ওদের অপরাধ?’
নাট্যকার মাসুম রেজা বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করবেন না। দাবি মেনে নিয়ে ওদের নির্বিঘ্নে ঘরে ফেরান।’
অভিনয়শিল্পী জ্যোতিকা জ্যোতি বলেছেন, ‘আর ঘরে বসে থাকা যায় না, আমার মন উত্তাল তোমাদের সঙ্গে। আপনি আছেন তো?’
মৌসুমী হামিদ তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কী বলব আপনাদের? হাতে অস্ত্র, মাথায় হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, পায়েও হাঁটু পর্যন্ত গার্ড পরে আছেন। তারপরও কলেজ ড্রেস পরা নিরস্ত্র একটা বাচ্চাকে লাথি মারার জন্য মাথা পর্যন্ত পা তুলছেন। লজ্জা করে না আপনাদের? আপনার এত সাজ-পোশাকে জঙ্গি দমন করতে আসছেন? এতটুকু বাচ্চাদের এত ভয় পান? পুলিশ মানে তো আপনারা না! তাহলে আপনারা কারা?’
এ প্রজন্মের আরেক পরিচালক মাবরুর রশিদ বান্নাহ বলেছেন, ‘আজ না হয় শহরের স্কুল-কলেজের ছাত্রগুলো রাস্তায় নেমেছে, এতেই এই অবস্থা! কাল যদি সারা বাংলাদেশের স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা রাস্তায় নামে, তখন কেমন হবে!’
প্রসঙ্গত, ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে বিমানবন্দর সড়কে (র‌্যাডিসন হোটেলের উল্টো দিকে) বাসচাপায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়।
এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুও পরিবহন ব্যবস্থায় অনিয়ম নিয়ে এখন শহরজুড়ে চলছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। আজও প্রায় ঢাকার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা দখল করে রেখেছে ছাত্ররা। একুশে মিডিয়া।’

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages