বিকাশে প্রতারকের ফাঁদে পড়ে টাকা খোয়াচ্ছে গ্রাহকরা!-একুশে মিডিয়া - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Wednesday 1 August 2018

বিকাশে প্রতারকের ফাঁদে পড়ে টাকা খোয়াচ্ছে গ্রাহকরা!-একুশে মিডিয়া


একুশে মিডিয়া, বিশেষ রিপোর্ট:

বিকাশে ফাঁদে পড়ে টাকা খোয়ানোর ঘটনা নতুন নয়। এই ফাঁদ যেন কোনোভাবেই আটকানো যাচ্ছে না। জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং প্লাটফর্ম বিকাশ এর বিকাশে নতুন মাত্রা যুক্ত করা অ্যাপও সেই ফাঁদ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। প্রতারকদের কাছে এই অ্যাপ প্রযুক্তিও হচ্ছে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার নয়া ফাঁদ।
শত টাকা থেকে শুরু করে কয়েক হাজার- সবই যেন এই বিকাশ-এ মুহূর্তে হাতছাড়া হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষ একদিকে যেমন সতর্ক করা ছাড়া কিছু করতে পারছে না, তেমনি বাংলাদেশ ব্যাংক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেও মিলছে না সমাধান। 
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিকাশের কর্মী পরিচয় দেয়া এক প্রতারকের কাছে সাড়ে ৮ হাজার টাকা খোয়ান রাজধানীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রহমান (ছদ্মনাম)।
তিনি একুশে মিডিয়াকে ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, একটি ফোন নম্বর (01906264938) থেকে ওইদিন সন্ধ্যায় আমার বিকাশ নম্বরে ফোন আসে। ওই ব্যক্তি নিজেকে বিকাশ কাস্টমার কেয়ারের কর্মী পরিচয় দিয়ে বলেন, আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টে কিছু ইরফরমেশন গ্যাপ আছে। ইনফরমেশনগুলো যদি না দেন তবে কিছুক্ষণের মধ্যে আপনার অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে।
‘তখন আমি তার কথা বিশ্বাস করে প্রয়োজনীয় তথ্য দিই। ওই ব্যক্তির কথামতো আমার মোবাইল ফোনে আসা ভেরিফিকেশন কোড তাকে জানিয়ে দিই। এরপর ওই কোড ব্যবহার করে তিনি বিকাশের অ্যাপ দিয়ে টাকা ক্যাশ আউট করে নেন। সঙ্গে সঙ্গে ক্যাশ-আউটের ক্ষুদেবার্তাও আমার ফোনে চলে আসে। এভাবে তিনি আমার বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।’
রহমান বলেন, ‘আমি কোড দিতে চাইনি। কিন্তু তিনি বলের- আমি তো আপনাকে টাকা পাঠাতে বলছি না- জাস্ট কিছু ইনফরমেশন গ্যাপ আছে সেটা পূরণের জন্য বলছি। আর তার জন্য কোডটা দরকার।’
বিকাশের কাছে অভিযোগ করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনা ঘটার পর অভিযোগ করেছি। তারা শুধু ওই নম্বরটা টুকে নিয়েছেন। 
আরেক ভুক্তভোগী সিরাজগঞ্জের সলঙ্গার বাসিন্দা কায়সার আহেমদ। তিন মাস আগে তিনি বিকাশের ফাঁদে পড়ে ৬০ হাজার টাকা হারান।
তিনি আরটিভি অনলাইনকে বলেন, একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন করে আমাকে জানানো হয়, আমার বিকাশ অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অ্যাকাউন্ট সচল রাখতে হলে কিছু কাজ করতে হবে। প্রলোভন দেখিয়ে বলা হয়, আপনার বিকাশে যে টাকা আছে, তা উঠাতে চাইলে পর্যায়ক্রমে ৪টি নম্বরে ৬০ হাজার টাকা পাঠাতে হবে। এই টাকা আমার অ্যাকাউন্টে যোগ হবে। আমি তাদের কথা বিশ্বাস করে ৬০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিই। কিন্তু আমার ফোনে আর টাকা জমা হয় না।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে সলঙ্গা থানায় সাধারণ ডায়েরি করে তিন মাসেও কোনও ফায়দা হয়নি। পুলিশ উল্টো জানিয়ে দিয়েছে- এটা ফরিদপুরের একটি চক্র করেছে। এখন তাদের কাছ থেকে টাকা ফেরত পাইতে গেলে অনেক ঝামেলা। কিছু টাকা খরচও করতে হতে পারে।
শুধু রহমান বা কায়সার নন, বিকাশের শত শত গ্রাহকের এমন অভিযোগ আছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এক শ্রেণির প্রতারক চক্র কৌশলে এ ধরনের কাজ করছে। গ্রাহককে ফোন করে ফুসলিয়ে বা কনভিন্স করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। এ বিষয়ে গ্রাহককে সতর্ক করার জন্য বিকাশের প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে। সেইসঙ্গে বিকাশের ভেতরের কেউও এমন কাজে জড়িত আছে কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখতে হবে।  
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিকাশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা আরটিভি অনলাইনকে বলেন, মানুষকে কথার জালে ফেলে এক শ্রেণির প্রতারক কিছু প্রলোভন দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। এ বিষয়ে মূলত গ্রাহককে সতর্ক থাকতে হবে। তাকে সব সময় মনে রাখতে- যেহেতু বিকাশ অ্যাকাউন্ট ব্যাংক হিসাবের মতোই, তাই কাউকে গোপন পিন বা কোড দেয়া যাবে না। 
‘আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে গ্রাহকদের সতর্ক করার চেষ্টা করছি। মিডিয়ার মাধ্যমে প্রতারণা কৌশলের খবর জানতে পারছে সবাই। তারপরও গ্রাহকরা কেন সতর্ক হচ্ছে না তা বুঝে আসছে না। ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের কথা মাথায় রেখে গ্রাহককে বিষয়টি নিয়ে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে- এমন না, তবে বিষয়টিকে হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। বিকাশে প্রতিদিন অন্তত ৫০ লাখ ট্রানজেকশন হয়ে থাকে। এর মধ্যে ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ বা তার বেশি ট্রানজেকশন ওকে হয়ে থাকে। ফ্রড ট্রানজেকশনের হার খুবই কম।
‘এর অর্থ হলো বিপুল জনসংখ্যা এই সার্ভিস নিরাপদে ব্যবহার করছে। তবে এখানে ফ্রড শূন্য হওয়া উচিত ছিল। আর তার জন্য আমাদের গ্রাহকদেরই এগিয়ে আসতে হবে। তবে যারা প্রতারণার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে বা সংশ্লিষ্ট বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি’।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ একুশে মিডিয়াকে বলেন, প্রতারক চক্রের ফাঁদ থেকে রক্ষা পেতে সতর্ক হওয়ার বাইরে কিছু নেই। শুধু বিকাশ নয়, সব জায়গায় এই ধরনের প্রতারণার খবর পাওয়া যায়।  
এ বিষয়ে মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম রব্বানী একুশে মিডিয়াকে বলেন, বিকাশে লেনদেনটা সাধারণত একদিনে বেশি করা যায় না। লেনদেন ছোট হওয়ার কারণে ভুক্তভোগী গ্রাহকও শুধু অভিযোগ করে সরে পড়েন। এ কারণে অভিযোগের পর আর তদন্ত সামনের দিকে যায় না। তাছাড়া এখানে সিম নিবন্ধনে তথ্যে গরমিলও দায়ী। কারণ যে চক্র এ ধরনের প্রতারণা করে থাকে, তাদের ওই ফোন নম্বরগুলো সঠিক তথ্য দিয়ে নিবন্ধন করা নয়। সঠিক তথ্য দেয়া থাকলে তাদের ধরতে সুবিধা হতো। এই প্রতারণা বন্ধে সিম কোম্পানিকেও এগিয়ে আসতে হবে।
তবে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে গ্রাহককেই সবার আগে সতর্ক থাকবে হবে। লেনদেন করার সময় খেয়াল রাখতে হবে বা কাউকে নিজের অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ ওই চক্র প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণত এ ধরনের কাজ করে থাকে। একুশে মিডিয়া।’

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages