একুশে মিডিয়া, ঢাকা রিপোর্ট:
বিমানবন্দরে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীসহ সারাদেশে চতুর্থ দিনের মতো চলা আন্দোলনে বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গায়ে কাটা দেওয়ার মত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে ঘুরছে। সেই ভিডিওটি শেয়ার করে সবাই গাড়ি চালকের অমানবিকতা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শনির আখড়ায় একটি পিকআপ ভ্যান থামায়। লাইসেন্স না থাকায় ছাত্ররা গাড়িটি ভাঙতে থাকে। এ সময় হঠাৎই চালক দ্রুত বেগে এক ছাত্রের উপর দিয়ে গাড়ি উঠিয়ে দিয়ে চলে যায়।
ভিডিওটি যারা দেখেছেন, তারা সবাই হয়তো মনে মনে একটাই কথা বলেছেন, এই ছেলে আর বাঁচবে না। বিভিন্ন মহলে এমন গুঞ্জনও উঠেছিল যে আন্দোলনরত ছেলেটি আর বেঁচে নেই।
ঘটনায় উপস্থিত মো. শামীম নামে একজন বলেন, ‘পিকআপ ভ্যানটি নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের ছাত্র ফয়সাল মাহমুদের পেটের ওপর দিয়ে গিয়েছে। বৈধ কাগজ আছে কি না তা চেক করতে যাত্রাবাড়ি থেকে শনির আখড়ার দিকে আসা পিকআপ ভ্যানটি থামানো হয়। কাগজ চাইতেই গাড়ির সামনে ও পাশে থাকা ছাত্রদের ধাক্কা দিয়ে চলে যায় চালক। এসময় ফয়সাল মাহমুদ গাড়ির নিচে পড়েন এবং পিকআপটির চাকা তার পেটের ওপর দিয়ে চলে যায়।’
তবে পেটের উপর দিয়ে গাড়ির চাকা চলে গেলেও অলৌকিকভাবেই বেঁচে গেছে সেই ছেলেটি। মুখে ও পায়ে গুরুতর আঘাত পায় ফয়সাল। পড়ে তার সহপাঠিরা প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি করে। প্রথমদিকে এ হাসপাতালের চিকিৎসক ফয়সালকে আশঙ্কামুক্ত বলে জানালেও বুধবার (১ আগস্ট) রাত পৌনে ১০টায় তাকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে।
ঢামেক সূত্র জানায়, জরুরি বিভাগে নিয়ে আসার পর ফয়সালকে ইউরোলজি বিভাগে পাঠান কর্তব্যরত চিকিৎসক। তার মূত্রথলিতে রক্ত জমেছে –এমন আশঙ্কা থেকে তাকে ইউরোলজি বিভাগে পাঠানো হয়।
ইউরোলজি বিভাগের দায়িত্বে থাকা ডা. মাসুদ জানান, ‘আমরা তার সমস্যার কথা শুনে আল্ট্রাসনোগ্রাম করিয়েছি। কিন্তু কোনও সমস্যা পাইনি। লিভার বা অন্য কোনও সমস্যা থাকতে পারে। তাই পরে সার্জারি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।’
এর আগে প্রো-একটিভ ইউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. নাছির উদ্দিন কাজল জানান, মুখে আঘাত লাগায় ঠিকমত কথা বলতে পারছে না ফয়সাল। পায়ের একটি অংশ ভাঙা। এছাড়া তার পেটেও প্রচণ্ড আঘাত লেগেছে। আল্ট্রাসনোগ্রাম করে দেখা গেছে তার মূত্রথলীতে কিছু ব্লাড জমে আছে। এগুলো দেখে মনে হচ্ছে তার গার্ড বা ব্লাডার ইনজুরি হয়ে থাকতে পারে।
বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শনির আখড়া বাসস্ট্যান্ড এর পাশে পিকআপ ভ্যানের চাপায় আহত হন নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজে উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ুয়া ফয়সাল মাহমুদ। গাড়ি চাপার ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে মানববন্ধন করে আন্দোলনকারীরা। মানববন্ধন চলাকালে দুই পাশ দিয়ে চলাচল করা গাড়িগুলো বৈধ কাগজ চেক করছিল শিক্ষার্থীরা। সাড়ে ৯টার দিকে যাত্রাবাড়ী থেকে শনির আখড়ার দিকে আসছিল একটি পিকআপ ভ্যান। এই ভ্যানটির লাইসেন্স দেখতে চাইলেই হুট করে টান দেয় চালক। গাড়ির চাপায় পড়ে ফয়সাল।
আহত হওয়ার পর তাকে খুব দ্রুত সাইনবোর্ড এলাকার প্রো অ্যাকটিভ মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যায় বন্ধু ও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা শিক্ষার্থীরা। হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডের এক নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন ফয়সাল। পরবর্তীতে রাত পৌনে ১০টা দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে স্থানান্তর করা হয়।
ফয়সালের বাবা শামসুল জানান, আমার ছেলের বড় কোনও ক্ষতি হয়নি, এতেই আমি খুশি। বিচার চেয়ে আর কী হবে? আমরা নিরীহ মানুষ। ঝামেলায় যেতে চাই না।
শনির আখড়া বাসস্ট্যান্ডে ফয়সালকে চাপা দেওয়ার ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানায় ওই এলাকায় অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা। দুই পাশের সড়কে অন্তত ১৫টি গাড়ি ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। বাসগুলো ভাঙচুরের পর ছাত্রদের ধাওয়া দেয় স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও বাস শ্রমিকরা।
দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অন্তত ১৫ জন ছাত্র দাবি করেন, স্থানীয় ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগসহ অন্য কর্মীরা ছাত্রদের ওপর হামলা করে। ছয় সাতজন ছাত্রকে মেরে আহত করেছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ জুলাই দুপুরে বিমানবন্দর সড়কে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় গত তিন দিন ধরে লাগাতার রাজপথ আটকে বিক্ষোভ করছে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা। বুধবার সারাদিন রাস্তা আটকে প্রতিবাদ জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এই বিক্ষোভে অংশ নিতে এসে গাড়ি চাপায় আহত হন ফয়সাল। একুশে মিডিয়া।’
No comments:
Post a Comment