একুশে মিডিয়া, মুক্তমত রিপোর্ট:
লেখক: রকিবুল হক সায়েম:
সম্প্রতি নারী যোনিচ্ছেদ প্রথা বিলুপ্ত নিয়ে বেশ আলোচনা, সমালোচনা হচ্ছে। ন্যক্কারজনক এ প্রথায় মেয়েদের যে সব অঙ্গ বা স্নায়ু যৌন লিপ্সা জাগায়, সঙ্গমের বাসনা তৈরি, জৈবিক চাহিদা বা উপভোগের কামনা সৃষ্টি করে সে সব স্নায়ু কেটে দেওয়া হয়। বর্তমান শতাব্দী ভীষণ মুক্তমনা এবং আধুনিকমনস্ক দাবি করলেও এরকম কিছু প্রচলিত এবং অযৌক্তিক, সমাজ স্বীকৃত (যেসব সমাজে প্রচলিত) ঘটনা আমাদের প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। আজও কি আমরা সভ্য? এই নৃসংসতা কিভাবে ডিজিটাইজেশনের যুগে চলতে পারে?
এ ঘৃণ্য প্রথার বিরুদ্ধে ভারতের বহরা মুসলমান নারীরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের তাদের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন কিছুদিন আগে। অবশ্য অনেকদিন থেকে এটি বিলুপ্তির জন্য আন্দোলন, সংগ্রাম, সমালোচনা চলে আসছে। এর বিরুদ্ধে জঘন্য এ কর্ম প্রচলিত সমাজের সাহসী নারীরাই সুপ্রিম কোর্টে যাওয়াকে অত্যন্ত ইতিবাচক ও একটি দৃষ্টান্ত বলা যায়। তবে মামলাটি সাংবিধানিক বেঞ্চে চলে যাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত আপাতত পিছিয়ে গেল। এরপর থেকে এই বর্বরতার বিলুপ্তির নতুন করে দাবি উঠে। অবৈজ্ঞানিক এবং অযৌক্তিক এই প্রথা ব্যক্তি পরিসরের স্বাধীনতায় আঘাত করে। আমেরিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেনসহ ২৭টি দেশ এই প্রথাকে অবৈজ্ঞানিক বিবেচনা করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। আবার এটাকে পালনকারীরা ধর্মীয় অনুশাসন মনে করে। যদি তা হয় তাহলে ধর্মের দোহাই দিয়ে প্রচলিত এমন প্রথা সমর্থনযোগ্য নয় যা মহিলাদের শারীরিক সম্পূর্ণতা বিনষ্ট করে। কেবল বিয়ে করে সংসার করা এবং স্বামীর জন্য নিবেদিত প্রাণ হওয়ার জন্য মেয়েরা বাঁচে না! কোনো মহিলার বিয়ে করা অপরিহার্য, এই অপযুক্তি পেশ করে যোনিচ্ছেদ প্রথা চলতে পারে না।
অঙ্গচ্ছেদ হলো, শৈশবে, ঋতুমতী হওয়ার আগে পাঁচ থেকে সাত বছর বয়সি বালিকাদের যোনির কিছু অংশ কেটে ফেলে দেওয়া হয়। তাদের বিশ্বাস যোনিচ্ছেদ করা হলে পরবর্তীকালে তারা মুক্ত হতে পারবে যৌন আকাক্সক্ষা থেকে; ফলস্বরূপ বৈবাহিক সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটবে না। সঙ্গমের কোনো ইচ্ছে মেয়েদের জাগবেনা, পর পুরুষের সাথে মিশবেনা, ফলে তাদের যারা বিয়ে করবে সে সব পুরুষ কুমারী বউ পাবে। ছেলেদের ভোগ উপাদেয় হবে।
কি ভয়ংকর! অমানবিক, মৌলিক চাহিদা বঞ্চিত, মানবাধিকার হরন, জৈবিক অধিকার কেড়ে নেওয়া।
পৃথিবীর প্রায় ৩০ টি দেশে যোনিচ্ছেদ নামক নারকীয়তার প্রচলন রয়েছে। এর অধিকাংশ আফ্রিকার। তবে ভারত, পাকিস্তান, ইয়েমেন, ইন্দোনেশিয়াতেও এই ভয়াবহতা বিদ্যমান। তবে এসব দেশের সবাই এই কুসংস্কার পালন করে তা নয়। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আছে দাউদি বহরা নামক গোষ্ঠীর মধ্যে। এরা শিয়া মতাদর্শী। শিয়া সম্প্রদায়ের একটি শাখা দাউদি বহরা গোষ্ঠী। যাদের মধ্যে দীর্ঘকাল প্রচলিত আছে বালিকাদের যোনিচ্ছেদ প্রথা।কেউ কেউ এটার সাথে ইসলাম ধর্মকে জড়িয়ে কথা বলে। যার কোনো সঠিক প্রমাণ নাই। এই প্রথা সম্পূর্ণ মনগড়া, অবৈধ এবং অবৈজ্ঞানিক। ইসলাম ধর্ম এমন নারকীয় প্রথা অনুমোদন করে না। শুধু ইসলাম ধর্ম নয়, কোনো ধর্মই এর পক্ষে বলতে পারেনা। যোনিচ্ছেদ প্রথা বিলুপ্ত করে, কুসংস্কারমুক্ত, সুস্থ সমাজ বিনির্মাণ হোক।লেখক পরিচিতি:
রকিবুল হক সায়েম
শিক্ষার্থী- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ (৪র্থ বর্ষ), চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম।
No comments:
Post a Comment