![]() |
উপরে(বাম থেকে) মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, মুজিবুর রহমান সিঅাইপি, মাওঃ জহিরুল ইসলাম। নিচে(বাম থেকে) জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, লেয়াকত অালী, অাবু বকর ছিদ্দিকী, মাওঃ ফরিদ অাহামদ অানছারী। |
একুশে মিডিয়া, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
বহুল প্রত্যাশিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেছে অনেক অাগেই। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবং জাতীয় পর্যায়ে নাটকীয়ভাবে অপ্রীতিকর ও অনাকাংখীত কিছু না ঘঠলে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচনী তফশিল ঘোষনা এবং অাগামী বছরের জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহেই অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে চট্টগ্রাম-১৬ ( বাঁশখালী) অাসনে শুরু থেকেই চলছে দারুন ডাইমেনশন। অাসন্ন নির্বাচন হবে সুন্দর, সুষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ, এটা এখন চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার সর্বত্র সর্বস্তরের নাগরিকদের দৃঢ় বিশ্বাষ, চায়ের দোকানের অাড্ডা, বাজারের জটলা এমনকি বিয়ে মেজবান ও জানাজার মত সামাজিক ও ধর্মিয় অনুষ্ঠানাদীতেও অাসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রত্যেকের মুখে মুখে খৈ ফুটা অালোচনায় মুখর হয়ে উঠে পরিবেশ। দল-মত নির্বিশেষে সবার অালোচনায় স্পষ্ঠতঃ প্রতিয়মান হয়, অাগামী নির্বাচন হবে সুষ্ঠ, সুন্দর ও নিরপেক্ষ। জনগন নির্ধিদায় তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের পছন্দের প্রার্থির বিজয় নিশ্চিত করার ব্যাপারে অাশাবাদী। নাগরিকদের এমন অাশাবাদী হওয়ার পিছনে অারো একটি কারন হচ্ছে, রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বাঁশখালী উপজেলার রয়েছে স্বতন্ত্র ঐতিহ্য। বাঁশখালীতে রাজনৈতিক হানাহানি ও প্রতিহিংসা নেই বললেই চলে।
অাসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বাঁশখালীর বড় দলগুলোর সমর্থকদের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকন্ঠা অার অনিশ্চয়তার পারদ ক্রমেই উর্দ্ধমুখী হয়েই চলছে। যদিও সরকারের মহাজোট এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যজোট ছাড়াও অাসন্ন নির্বাচনে বাঁশখালী অাসনে বড় ধরনের অালোচনার বিষয় জামায়াত সমর্থিত সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অালহাজ্ব অধ্যক্ষ মাওলানা জহিরুল ইসলাম।
অাওয়ামীলীগ থেকে কে হচ্ছেন 'নৌকার" মাঝি তা এখনো নিশ্চিত নয়। বর্তমান সাংসদ এবং উপজেলা অাওয়ামীলীগের সভাপতি অালহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র অালহাজ্ব মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, দক্ষিন জেলা অাওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা অাব্দুল্লাহ কবীর লিটন এবং দক্ষিন জেলা অাওয়ামীলীগের অর্থ সম্পাদক, বিশিষ্ঠ শিল্পপতি দৈনিক পুর্বদেশ সম্পাদক অালহাজ্ব মুজিবুর রহমান সিঅাইপি সহ ৪ জন অাছে নৌকার মাঝি হওয়ার মনোনয়ন দৌঁড়ে এগিয়ে থাকলেও নিয়মিত গনসংযোগ সহ প্রচারনা নিয়ে মাঠ উত্তপ্ত রেখেছে মনোনয়ন দৌঁড়ে এগিয়ে থাকা বর্তমান সাংসদ অালহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। অন্যদিকে অাব্দুল্লাহ কবীর লিটন কিছুদিন অাগে মিটিং মিছিল নিয়ে মাঠে ময়দানে বেশ তৎপর থাকলেও সম্প্রতি সেই তৎপরতা তেমন অার চোখে পড়ছেনা। অারেক প্রভাবশালী নেতা দৈনিক পুর্বদেশ সম্পাদক অালহাজ্ব মুজিবুর রহমান সিঅাইপি নির্বাচনী ইস্যু ছাড়াও নিয়মিতই বাঁশখালীর সর্বত্র অনুদান প্রদান সহ বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা করেই চলছেন। বিশ্বস্থ সুত্রে জানা গেছে, দলীয় হাই কম্যান্ড থেকে মনোনয়নের ব্যাপারে সম্মতি থাকলেও নিশ্চিত সবুজ সংকেত না পাওয়া পর্যন্ত তিনি মাঠে প্রচার প্রচারনায় নামবেননা। মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পাটি বাঁশখালী অাসনটি জোটের পক্ষ থেকে পাবার ব্যাপারে জোর দাবী জানালেও এখনো নিশ্চিত হওয়ার মত কোন ঈংগীত মিলছেনা। অন্যদিকে বর্তমান সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমানের বিপক্ষে এখনো শক্তিশালী অবস্থানে অনড় রয়েছেন বাঁশখালী পৌরসভা মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী। এমতাবস্থায় মহাজোট থেকে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি তা নিশ্চিত জানতে দলীয় নেতাকর্মিসহ সকলকে অপেক্ষা করতে হবে অারো কিছু সময়। তবে মাঠের তৎপরতা এবং দলীয় নেতা কর্মিদের অাত্ববিশ্বাষে নৌকার টিকেট পেয়ে যেতে পারেন বর্তমান সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। অার এমনটা হলে মহাজোটের অারেক শক্তিশালী মনোনয়ন প্রত্যাশী জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য অালহাজ্ব মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর পরবর্তি সিদ্ধান্ত কি হবে তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে সবাইকে।
২০ দলীয় ঐক্যজোট এখন জাতীয় ঐক্যের প্লাটফরমে। সারাদেশে ঐক্যজোট জোটগত ভাবে নির্বাচন করলেও বাঁশখালীতে চুড়ান্তভাবে তার ব্যতিক্রম ঘটবেই এবার। অতীতে বার বার জামায়াতের সহযোগিতায় বিএনপি প্রার্থী সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও জামায়াতের সাথে বিশ্বাষ ভঙ্গের অভিযোগে এবার জামায়াতে ইসলামী বাঁশখালীতে অন্ততঃ বিএনপি'কে অার ছাড় দেবেইনা বলে চুড়ান্তভাবে জানা গেছে। ঐতিহ্যগত ভাবে বাঁশখালীকে এমনিতেই জামায়াতের ঘাঁটি হিসাবে উল্লেখ করা হয়। জামায়াত গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও সেটা প্রমান করেছে। অাওয়ামীলীগ, বিএনপি'র পাশাপাশি নাগরিক ঐক্যের ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে সবাইকে চমকে দিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সহ পুরো প্যানেলে। অাসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী জোটের কাঁছে বাঁশখালীর অাসনটি শুরু থেকে দাবী করে অাসছিল। যদি ঐক্যজোট বাঁশখালীর অাসনটি জামায়াতকে ছেড়ে না দেয়, তাহলে জামায়াত মনোনিত প্রার্থী বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা জহিরুল ইসলাম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মতই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করবে এটা নিশ্চিত। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় জামায়াতেরও অনুমোদন অাছে বলে জানা গেছে। জামায়াত মনোনিত প্রার্থী অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম প্রতিকুল পরিবেশেও বিগত ২/৩ বছর থেকে পরিকল্পিতভাবে নিয়মিত মাঠে ময়দানে নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপর রয়েছে, সম্প্রতি অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলামকে প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচনী গনসংযোগ সহ নির্বাচনী চুড়ান্ত প্রস্তুতিমুলক কার্যক্রমে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা যায়। জামায়াতের প্রার্থীতা নিয়ে বিএনপি'র সাথে অতীতে বারবার দর কষাকষিতে জামায়াত ছাড় দিলেও সম্প্রতি বাঁশখালী সফরে অাসা জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় হাই-কম্যান্ড সুত্রেও এবার জামায়াত বাঁশখালীতে অার কোনভাবেই বিএনপিকে ছাড় না দেওয়ার বিষয়টি চুড়ান্তভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অন্যদিকে বাঁশখালী বিএনপি'তে গ্রুপিং সংকট এখন চরমে। উপজেলা বিএনপি এখন শক্তিশালী দুগ্রুপে বিভক্ত। অালহাজ্ব জাফরুল ইসলামের পাশাপাশি দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশায় জোর লবিং চালিয়ে অাসছেন বাঁশখালী বিএনপি'র শক্তিশালী প্রতিপক্ষ গ্রুপ গন্ডামারা ইউপি চেয়ারম্যান লেয়াকত অালী। যদিও সাবেক মন্ত্রি ও জেলা বিএনপি'র সভাপতি অালহাজ্ব জাফরুল ইসলাম মনে করেন, তিনি ছাড়া দল থেকে অন্য কেউ মনোনয়ন পাওয়ার প্রশ্নই অাসেনা। তাছাড়া লেয়াকত অালীর বিরোদ্ধে গন্ডামারা কয়লা বিদ্যুৎ ( এস,এস,পাওয়ার প্ল্যান্ট) নিয়ে নেতিবাচক বিতর্ক রয়েছে এবং সে হত্যাসহ বহু মামলার অাসামী। সুতরাং জোট থেকে সাবেক মন্ত্রী ও সাংসদ অালহাজ্ব জাফরুল ইসলাম চৌধুরীই মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত বলা যায়। বাঁশখালীতে বিএনপির সাংঘঠনিক অবস্থান এমনিতেই দুর্বল। নির্বাচনের পুর্বমুহুর্তে বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটি গঠন নিয়ে সম্প্রতি সেই গ্রুপিং সংকট অারো প্রবল হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। দল থেকে মনোনয়ন যেই পাক, বাঁশখালী বিএনপি'র অভ্যন্তরিন সাফে-নেউলে সম্পর্ক গ্রুপিং শেষ পর্যন্ত প্রশমিত হওয়ার লক্ষন নেই।
এছাড়াও অাসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট যুদ্ধে মাঠে থাকতে পারেন, পীর সাহেব চরমোনাই মনোনিত ইসলামী অান্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হাফেজ ফরিদ অাহামদ অানছারী, লিভারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি'র (এলডিপি) কেন্দ্রিয় যুগ্ন মহাসচিব চট্টগ্রাম অাইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট কফিল উদ্দিন, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের চট্টগ্রাম মহানগর সেক্রেটারী এম,মহিউল অালম চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা জাতীয় পার্টির সহঃ সভাপতি অাবু বকর ছিদ্দিকী। তবে শেষ পর্যন্ত এদের ক'জন মাঠে থাকে তা এখনো নিশ্চিত নয়।
নানান চড়াই উতরাই, বিশ্বাষ-অবিশ্বাষ অার অভিযোগ-অাবদারের পরে জোট,মহাজোট ও দল থেকে যিনিই মনোনয়ন পাক, অাসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাঁশখালী অাসনে জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী অালহাজ্ব অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলামই হবেন বড় ফ্যাক্টর। বাঁশখালীতে তাঁদের রয়েছে বিশাল একটি রিজার্ভ ভোট ব্যাংক। শত প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও তাদের সেই ভোট ব্যাংকে কেউ ধাক্কা লাগাতে পেরেছ বলে মনে হয়না। অন্যদিকে জোট মহাজোটের শীর্ষ দলগুলোর অভ্যন্তরিন গ্রুপিং ও অবিশ্বাষের ফায়দাও পেতে পারেন তিনি। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দলীয় ব্যানার ও প্রতীকে নির্বাচন করতে না পারলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পুর্ন প্যানেলে জয়লাভ করে জামায়াত তাদের সেই শক্তিমত্তার দৃষ্ঠান্ত রেখেছে। তাই অাসন্ন নির্বাচনেও সম্ভাব্য সকল প্রার্থীর মুল বিবেচনার কেন্দ্রবিন্দু স্বতন্ত্র প্রার্থী অালহাজ্ব অধ্যক্ষ মাওঃ জহিরুল ইসলাম।
No comments:
Post a Comment