জেল হত্যা দিবস আজ: ৩ নভেম্বর-একুশে মিডিয়া - একুশে মিডিয়া একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ গণমাধ্যম হিসেবে সংবাদ পরিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Friday, 2 November 2018

জেল হত্যা দিবস আজ: ৩ নভেম্বর-একুশে মিডিয়া


একুশে মিডিয়া, রিপোর্ট:

আজ ৩ নভেম্বর। বাঙালি জাতির ইতিহাসে আরেকটি কলঙ্কিত অধ্যায়, জেল হত্যা দিবস। ১৯৭৫ সালের এ দিনে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নিমর্মভাবে হত্যা করে স্বাধীনতাবিরোধীরা। এ দেশে যেন কোনোদিন স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি মাথা তুলে দঁাড়াতে না পারে সেই ষড়যন্ত্র থেকেই নিরাপদ স্থান জেলখানার অভ্যন্তরে এ হত্যাকাÐ সংঘটিত করে তারা।
নৃশংস সেই কালো রাতের বণর্না দিয়ে তৎকালীন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আমিনুর রহমান জানান, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা ববের্রাচিতভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর থেকে ঢাকা তখন অস্থিরতার নগরী। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে অভ্যুত্থান এবং পাল্টা অভ্যুত্থান নিয়ে নানা কথা শোনা যায়।
এরই মধ্যে ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে কারা মহাপরিদশর্ক টেলিফোন করে জেলার আমিনুর রহমানকে তাৎক্ষণিকভাবে জেলখানায় আসতে বলেন। তিনি কারাগারের মূল ফটকে গিয়ে দেখেন, একটি পিকআপে কয়েকজন সেনা 
সদস্য সশস্ত্র অবস্থায় আছে। তখন রাত আনুমানিক দেড়টা থেকে ২টা।
মূল ফটকের সামনে সেনা সদস্যরা কারা মহাপরিদশর্ককে একটি কাগজ দিলেন। সেখানে কী লেখা ছিল সেটি অবশ্য জানতে পারেননি আমিনুর রহমান।
মূল ফটক দিয়ে ঢুকে বাম দিকেই ছিল জেলারের কক্ষ। তখন সেখানকার টেলিফোনটি বেজে ওঠে। আমিনুর রহমান যখন টেলিফোনের রিসিভারটি তুললেন, তখন অন্য প্রান্ত থেকে বলা হলো প্রেসিডেন্ট কথা বলবেন।
২০১০ সালে সে ঘটনার বণর্না দিতে গিয়ে জেলার বলেন, ‘টেলিফোনে বলা হলো প্রসিডেন্ট কথা বলবে আইজি সাহেবের সঙ্গে। তখন আমি দৌড়ে গিয়ে আইজি সাহেবকে খবর দিলাম। কথা শেষে আইজি সাহেব বললেন, প্রেসিডেন্ট সাহেব ফোনে কথা বলেছেন, আমির্ অফিসাররা যা চায়, সেটা তোমরা কর।
মূল ফটকের সামনে কথাবাতার্ চলতে থাকে। একসময় রাত ৩টা বেজে যায়। আমিনুর রহমান বলেন, এক পযাের্য় তৎকালীন আওয়ামী লীগের চার নেতাকে একত্র করার আদেশ আসে। কারা মহাপরিদশর্ক একটি কাগজে চার ব্যক্তির নাম লিখে জেলার আমিনুর রহমানকে দিলেন।
সে চারজন হলেনÑ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামান।
আমিনুর রহমানের বণর্না অনুযায়ী সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং তাজউদ্দীন আহমদ কারাগারের একটি কক্ষে ছিলেন। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে অপর কক্ষ থেকে এখানে নিয়ে আসা হয়। সেখানে আসার আগে ক্যাপ্টেন মনসুর আলী কাপড় পাল্টে নিলেন।
আমিনুর রহমানের বণর্না করেন, ‘তাজউদ্দীন সাহেব তখন কোরআন শরিফ পড়ছিলেন। ওনারা কেউ আমাদের জিজ্ঞেস করলেন না তাদের কোথায় নেয়া হচ্ছে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেব হাত-মুখ ধুলেন। আমি বললাম আমির্ আসছে।
চারজনকে যখন একটি কক্ষে একত্র করার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগার কারণে সেনাসদস্যরা কারা কমর্কতাের্দর নোংরা ভাষায় গালাগাল করছিল, জানান আমিনুর রহমান।
‘মনসুর আলী সাহেব বসা ছিল সবর্ দক্ষিণে। যতদূর আমার মনে পড়ে। আমি মনসুর আলীর ‘ম’ কথাটা উচ্চারণ করতে পারি নাই, সঙ্গে সঙ্গে গুলি’- বলেন আমিনুর রহমান।
কারাগারের ভেতর এ নৃশংস হত্যাকাÐের খবর চার নেতার পরিবার সেদিন জানতে পারেনি। তাজউদ্দীন আহমদের পরিবার কারাগারে খোঁজ নেয়ার জন্য সারাদিন চেষ্টা করেও ব্যথর্ হয়েছে। পরের দিন অথার্ৎ ৪ নভেম্বর পুরান ঢাকার এক বাসিন্দা তাজউদ্দীন আহমদের বাসায় গিয়ে জানান যে, তিনি আগের দিন ভোরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গুলির শব্দ শুনেছেন।
প্রসঙ্গত, মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিবনগর সরকারের গুরুত্বপূণর্ পদগুলোতে থেকে জাতীয় চার নেতা ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ওই সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ, অথর্মন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, খাদ্য ও ত্রাণমন্ত্রী এএইচএম কামারুজ্জামান।
শুধু মুক্তিযুদ্ধ নয়, সব আন্দোলন-সংগ্রামে এই চার নেতা ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেছেন। বিভিন্ন সময় বঙ্গবন্ধুকে যখন কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে তখন আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়ে এই চার নেতা আন্দোলন-সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়েছেন।
তাই হয়তো ঘাতক চক্রের লক্ষ্য ছিল বাঙালিকে নেতৃত্বশূন্য করে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানের পদানত করে মুক্তিযুদ্ধের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়া। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানে আটক করে রাখার পর যে চার নেতা বঙ্গবন্ধুর হয়ে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনেন সেই চার নেতাকেও বঙ্গবন্ধুর মতো নিমর্মভাবে হত্যা করা হয়। একুশে মিডিয়া।

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages