![]() |
একুশে মিডিয়া, রিপোর্ট:
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী আগামী সোমবারের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে। আর আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জোটের শরিকদের সঙ্গে বসে আসন ভাগাভাগি শেষ করার টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দুই-তিন দিনের মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে অ্যালায়েন্সের (জোট) সঙ্গে আসন ভাগাভাগির কাজ শেষ হবে। আমাদের বিশ্বাস, বিজয়ের মাসে আওয়ামী লীগের বিজয় হবে।’ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন জনপ্রিয় প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। হারের ঝুঁকি আমরা নেবো না। কারণ আমরা আমাদের প্রতিপক্ষকে এত দুর্বল মনে করছি না।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনশ’ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের জনপ্রিয়তার প্রকৃত চিত্র কেমন, এ বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জরিপ প্রতিষ্ঠান এবং দলের অভিজ্ঞ একাধিক টিমের মাধ্যমে কয়েক দফা মাঠ জরিপ চালানো হয়েছে। এসব জরিপের ফলাফল, তথ্য উপাত্ত এখন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার হাতে। শুধু তাই নয়, সব আসনে সম্ভাব্য একক প্রার্থীও ঠিক করে রেখেছেন দলের হাই কমান্ড। আন্তর্জাতিক চার প্রতিষ্ঠানের আসনভিত্তিক সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদনটি এসেছে গত মঙ্গলবার। এটিসহ আগের জরিপ প্রতিবেদনগুলো নিয়ে আসনভিত্তিক বিশ্লেষণ চালাচ্ছে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড। শেখ হাসিনা নিজেও শেষ মুহূর্তের জরিপ রিপোর্ট পর্যালোচনা করছেন।
দলীয় একটি সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো দিয়ে জরিপ চালানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেনসহ চারটি দেশের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে জরিপ চালানো হয়েছে।
এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে জন্য আবেদনপত্র সংগ্রহ করেছেন ৪ হাজার ২৩ জন। গত বুধবার গণভবনে তাদের ডেকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, এত প্রার্থীর মধ্যে ৩০০ জনকে বেছে নেওয়া কঠিন কাজ। মনোনয়ন বোর্ডে বসে যাচাই-বাছাই করে ঠিক করা হবে। তবে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তার পক্ষে সবার ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। মনোনীত প্রার্থীর বিরোধিতা করা হলে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে।
বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংসদীয় বোর্ডের দ্বিতীয় বৈঠক হয়। রংপুর বিভাগের পঞ্চগড় ও দিনাজপুরের আসনগুলো নিয়ে প্রার্থীদের জরিপ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নৌকার একক প্রার্থীদের এসএমএসের মাধ্যমে তাদের মনোনীত করার বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে। আগামী সোমবার থেকে এই এসএমএস পেতে পারেন নৌকার প্রার্থীরা। আর প্রার্থীর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র দাখিলের দুই দিন আগে। এতে একদিকে বিদ্রোহী দমন করা সম্ভব হবে, অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী দেখে শেষ মুহূর্তে প্রার্থী পরিবর্তনের সুযোগও থাকবে। এদিকে গতকাল শুক্রবারও সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে অনেক আসনের জরিপ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হয়েছে।
গতকাল ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, অতি সম্প্রতি করা আসনভিত্তিক জরিপের ফলাফলে আওয়ামী লীগই এগিয়ে আছে। ছয় মাস আগেও যেসব আসনে আওয়ামী লীগ কিছুটা পিছিয়ে ছিল, সেগুলোতে এখন ভালো অবস্থানে এসেছে। তিনি বলেন, ‘দেশি-বিদেশি সব সমীক্ষা ও জরিপে শেখ হাসিনা জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করছেন। এই মুহূর্তে সব জরিপে আওয়ামী লীগ এগিয়ে আছে। আমি পাঁচ-ছয়টি জরিপ রিপোর্ট স্টাডি করেছি। এই জরিপ আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা নিয়েই করেনি, আমাদের যারা প্রতিপক্ষ তাদের অবস্থান নিয়েও করা হয়েছে। আমরা যেসব জায়গায় পিছিয়েছি, সেসব নির্বাচনি এলাকাতেও আমরা গেছি। এসব আসনেও সর্বশেষ জরিপে আওয়ামী লীগ তার প্রতিপক্ষ থেকে এগিয়ে রয়েছে।’
ওয়ান ইলেভেনে কার কী ভূমিকা সেটিও জরিপে উঠে এসেছে:
একাধিক জরিপের ভিত্তিতে মনোনয়ন চূড়ান্তকরণ কার্যক্রম চলছে। একটি জরিপে ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সময়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কার কী ভূমিকা ছিল সেটিও উঠে এসেছে। এ ছাড়া দলে কার কী অবদান, সাংগঠনিক তত্পরতা, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তার ও পরিবারের ভূমিকা, নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক, জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে যোগসাজশ আছে কিনা, জরিপগুলোতে এ সব তথ্য উঠে এসেছে। বর্তমান এমপিকে এক নম্বরে ধরে বাকি আগ্রহীদের সার্বিক কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে তালিকায় ক্রম নির্ণয় করা হয়েছে। গত তিনটি নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দলের ভোট, প্রার্থীর নিজস্ব ভোট আছে কিনা তা এবং ভাসমান ভোট টানার ক্ষমতার বিষয়টিও জরিপ প্রতিবেদনে তুলে আনা হয়েছে।
১০টি আসন চায় সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোট:
আওয়ামী লীগের কাছে ১০টি আসন চেয়েছে সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোট। গতকাল শুক্রবার জোটের পক্ষ থেকে ১০টি আসন চেয়ে প্রস্তাব জানানো হলেও তাদের কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি আওয়ামী লীগ। জানা গেছে, সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের (একাংশ) আমির মাওলানা জাফরুল্লাহ খান। তিনিই একই সঙ্গে হেফাজতে ইসলামেরও শীর্ষ নেতা। গতকাল জাফরুল্লাহ খানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যদের প্রতিনিধি দল ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান। সেখানে তারা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে জোটের ১০ নেতার জন্য ১০টি আসন দেওয়ার প্রস্তাব দেন। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের প্রস্তাব আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হবে। প্রয়োজনে পরবর্তীতে ফের বৈঠকে করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে লিখিতভাবে সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের কাঙ্ক্ষিত আসনের তালিকা দেওয়া হয়। তালিকায় জোটের চেয়ারম্যান মাওলানা জাফরুল্লাহ খানের জন্য নেত্রকোনা-২ (সদর), জোটের মহাসচিব ও ইসলামিক মুভমেন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান খায়রুল আহসানের জন্য কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী), বাংলাদেশ জনসেবা আন্দোলনের চেয়ারম্যান মুফতি ফখরুল ইসলামের জন্য নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া), রিভারেল পার্টির চেয়ারম্যান মাওলানা ইরফান বিন তুরাব আলীর জন্য কুমিল্লা-৮ (বরুড়া), ইসলামী ডেমোক্রেটিক ফোরামের চেয়ারম্যান মাওলানা হারিসুল হকের জন্য নরসিংদী-৪, ন্যাশনাল উলামা ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মাওলানা রুহুল আমীনের জন্য ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল), বাংলাদেশ মুসলিম জনতা পার্টির চেয়ারম্যান মাওলানা আজিজুর রহমানের জন্য হবিগঞ্জ-৪, বাংলাদেশ পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান কাজী মাসউদুর রহমানের জন্য কুষ্টিয়া-১, বাংলাদেশ গণকাফেলা’র সভাপতি হাকিম গোলাম মোস্তফার জন্য শেরপুর-৩, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (একাংশ) মহাসচিব মাওলানা মুহিব্বুল্লা আশরাফের জন্য ঢাকা-২ (কামরাঙ্গীরচর) আসনের জন্য প্রস্তাব দেয়।
সাতটি দল নিয়ে ১৩ দিন আগে গত ৩ নভেম্বর বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের (একাংশ) আমির মাওলানা জাফরুল্লাহ খানের নেতৃত্বে এ জোট গঠিত হয়। পরবর্তীতে আরও দুটি দল এ জোটে যুক্ত হয়। দৈনিক ইত্তেফাক সূত্র একুশে মিডিয়া রিপোর্ট।
একুশে মিডিয়া/এমএ
No comments:
Post a Comment