উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত কবিয়াল নড়াইলের বিজয় সরকার'র ডুমদি গ্রামের সড়কটি আজও অবহেলিত। একুশে মিডিয়া - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Thursday 15 November 2018

উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত কবিয়াল নড়াইলের বিজয় সরকার'র ডুমদি গ্রামের সড়কটি আজও অবহেলিত। একুশে মিডিয়া


উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:
উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত চারণ কবি বিজয় সরকারের ডুমদি গ্রামের যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি আজও অবহেলিত। দীর্ঘকাল ধরে সড়কটি পাকাকরণের দাবি জানানো হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। যার কারণে বিজয় ভক্ত ও গ্রামবাসীর মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
নড়াইল সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউপির এক নিভৃত পল্লী ডুমদি গ্রাম। এ গ্রামেই আধ্যাত্মিক পুরুস কবিয়াল বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম নবকৃষ্ণ অধিকারী ও মায়ের নাম হিমালয় অধিকারী। দশ ভাইবোনের মধ্যে বিজয় ছিলেন সবার ছোট। বাল্যকাল থেকে কবিয়াল বিজয় ছিলেন ভাবুক প্রকৃতির।
প্রথাগত শিক্ষায় মাধ্যমিকের গ-ি না পেরোলেও কিশোর বয়স থেকেই গান রচনা করে নিজেই পরিবেশন করতেন। ১৯২৯ সালে তিনি কবি গানের দল গঠন করেন। ১৯৩৫ সালে কলকাতার এ্যালবার্ট হলে কবিয়াল বিজয় সরকারের গানের আসরে উপস্থিত ছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসিম উদ্দিন, কবি গোলাম মোস্তফা, শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহম্মেদ প্রমুখ। তাঁরা গান শুনে মুগ্ধ হন এবং তাকে আর্শীবাদ করেন। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতার ‘ভারতীয় ভাষা পরিষদ’ তাকে সংবর্ধিত করেন। এ অনুষ্ঠানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ডক্টর আশুতোষ ভট্টাচার্য, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর দেবীপদ ভট্রাচার্য উপস্থিত ছিলেন। তিনি একাধিকবার ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, দার্শনিক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, বিশ্ব নন্দিত চারুশিল্পী এসএম, সুলতানসহ অসংখ্য গুণীজনের সান্নিধ্য লাভ করেন। বিজয় সরকার প্রায় দুই হাজার বিজয়গীতি রচনা করেন। যার মধ্যে রয়েছে বিচ্ছেদী গান, লোকগীতি, ইসলামী গান, আধ্যাত্মিক গান, দেশের গান, কীর্তন, ধর্মভক্তি, মরমি গান। ভারতে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন অবস্থায় ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ২০১৩ সালে তিনি মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন। মহান এই শিল্পীর জন্মবার্ষিকীতে প্রতি বছরই কবির বসতভিটায় নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে। কিন্তু মাত্র দুই কিলোমিটার সড়কটি পাকা না হওয়ায় ভক্তসহ মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ডুমদি গ্রামের অধীর কুমার জানান, নড়াইল সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের সবচেয়ে অবহেলিত গ্রাম হলো ডুমদি।
এই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস বেশি। কবি বিজয় সরকারের এই বাড়িতে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভক্তদের আগমন ঘটে। কিন্তু সড়কের এই অবস্থা দেখে সবাই হতাশা প্রকাশ করেন। ডুমদি গ্রামের গৃহবধূ নিলীমা রায় জানান, বর্ষাকালে বিজয় সরকারের বাড়িতে যাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভক্তরা এসে সড়ক খারাপ দেখে ফিরে চলে যায়। ডুমদি গ্রামের ছেলে মেয়েরাও বর্ষার সময় স্কুলে যেতে পারে না। অনেকে নৌকা যোগে পারাপার হয়ে থাকে। পাশ্ববর্তী হোগলাডাঙ্গা গ্রামের ইন্দ্রোজিত বিশ্বাস বলেন, কবিয়াল বিজয় সরকারের বসতভিটায় যেতে দুই কিলোমিটার সড়ক কাচা রয়েছে।
সড়কটি চিকন এবং উঁচু নিচু হওয়ায় চলাচলে ভীষণ সমস্যা হয়। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলসহ গ্রামবাসী ভ্যান নিয়েও চলাচল করতে পারে না। বিজয় সরকার ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সম্পাদক আকরাম শাহীদ চুন্নু বলেন, ‘বিজয় সরকার একজন কণ্ঠযোদ্ধা। তিনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কবি গান গেয়ে যে টাকা পেতেন তা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খরচ করতেন। বিজয় সরকারের রচিত গানগুলি সংরক্ষণের পাশাপাশি তার গ্রামের বাড়িতে যাবার সড়কটি দ্রুত পাকাকরণ প্রয়োজন। প্রতিবছরই জন্ম ও মৃত্যুদিবসের কর্মসূচিতে সড়কের সমস্যার বিষয়টি উত্থাপন হলেও কেন যে পাকা হচ্ছে না তা বোধগম্য নয়। দ্রুত সড়কটি পাকাকরণের দাবি জানাই। বাঁশগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘চারণ কবি বিজয় সরকারের বাড়িতে যাবার রাস্তাটি পাকাকরণের জন্য ডিসিসহ এলজিইডি নড়াইল অফিসে যোগাযোগ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আশা করি কবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে দ্রুত সড়কটি পাকা করা হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ এলজিইডি নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী বিধান চন্দ্র সোমদ্দার বলেন, আমি কিছুদিন আগে নড়াইলে যোগদান করেছি। এখনও জেলা সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত হতে পারি নাই। কবি বিজয় সরকারের গ্রামের বাড়ির সড়কটি কি অবস্থায় আছে দেখে শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। নড়াইল জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, গুণীশিল্পী কবিয়াল বিজয় সরকারের গ্রামের বাড়ির সড়কটি এতোদিনেও পাকা না হওয়াটা খুবই দুঃখজনক। আমি গতমাসে নড়াইলে যোগদান করেছি। সড়কটি যাতে দ্রুত পাকাকরণের ব্যবস্থা করা যায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একুশে মিডিয়া/এমএ

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages