উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি■:
নড়াইল সদরের সাথে কালিয়া উপজেলার যোগাযোগ স্থাপনে নড়াইলবাসীর দীর্ঘ প্রতিক্ষিত ‘বারইপাড়া সেতু’র নির্মান কাজ ৪ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এ বছরের জুন মাসে বারইপাড়া ঘাটে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেতুর লে-আউট দেয়ার সময় স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি তাদের জায়গা দাবি করে কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে সংশ্লিষ্ট অফিসের সহায়তায় এক মাস পর পূনরায় কাজ শুরু হলেও নকশা জটিলতা ধরা পড়ায় কাজ আবার বন্ধ হয়ে গেছে।
জানা গেছে, বর্তমান নকশা অনুযায়ী সেতু নির্মান করলে বর্ষা মৌসুমে সেতুর দুই প্রান্তের দুই পার্শ্বের পিলারের সাথে পানির লেভেল কমে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এছাড়াও সেতু নির্মান পরিকল্পনায় কিছু ত্রুটি ধরা পড়েছে।
ঢাকায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রানলয়ে নকশা পরিবর্তন সংক্রান্ত এক মিটিং-এ পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানা যাবে। এদিকে সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে প্রতি মাসে ৭-৮ লাখ টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর নড়াইল-কালিয়া সড়কে নোয়াকগ্রাম ইউনিয়নের বারইপাড়া ও কালিয়া পৌরসভার পাঁচ কাউনিয়া অংশে নবগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মানের টেন্ডার উন্মুক্ত করা হয়। ৪টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশগ্রহন করে। পরে যাচাই-বাছাই শেষে এ বছরের ১৮ মার্চ মেসার্স এমডি জামিল ইকবাল এন্ড মোঃ মইনুদ্দীন বাশি জেভি ফার্ম এ সেতুর কার্যাদেশ পান। ৬৫১.৮৩ মিটার লম্বা এবং ১০.২৫ মিটার প্রস্থ সেতুর নির্মান ব্যয় ধরা হয় ৬৫ কোটি ৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এ বছরের জুন থেকে ২০১৯ সালের জুন (২৪ মাস) মাসের মধ্যে নির্মান কাজ শেষ হওয়ার কথা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কালিয়া শহর থেকে নড়াইল শহরে মাত্র ২৫ কিঃ মিঃ পথ আড়াই ঘন্টা সময় লাগে। কিন্তু ‘নবগঙ্গা নদী’ কালিয়া উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন এবং কালিয়া পৌরসভাকে সদরের সাথে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। ফলে জেলার সামগ্রিক উন্নয়ন বরাবরই বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ কালিয়া-নড়াইল সড়ক দিয়ে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালসহ বিভিন্ন কাজে যাতায়াত করলেও নদীর কারনে অতিরিক্ত সময় বেশী লাগে।
ব্যবসায়ী-কৃষক-মৎসজীবীদের পণ্য ওঠা-নামা করতে অনেক বেগ পেতে হয় এবং খরচ বেড়ে যায়। আইন-শৃংখলা বাহিনীও আইন-শৃংখলা রক্ষা করতে হিমসিম খায়। কোথাও আগুন ধরে গেলে জান-মাল রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। বারইপাড়া ঘাটে ফেরী ব্যবস্থাও যথেষ্ট দূর্বল।
সেতু নির্মাণ কাজের ঠিকাদার মইনুদ্দীন বাঁশি এ প্রতিনিধিকে জানান, বর্তমান নকসা অনুযায়ী কাজ করলে বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়লে সেতুর দুই প্রান্তের পিলারের পানির লেভেল কমে যেতে পারে। এ কারণে সেতু আরও ৩ মিটার উঁচু করতে হবে। এছাড়াও পাইল ক্যাপ পানির নীচে থাকবে না পানির ওপরে থাকবে তা বর্তমান নকশায় নেই। এসব কারণে সেতু নির্মানের ব্যয় বেশ কয়েক কোটি টাকা বাড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, নকশা জটিলতার কারনে প্রতি মাসে ২টি বার্জের ভাড়াসহ শ্রমিকদের পেছনে প্রায় ৭-৮ লাখ টাকা গচ্চা যাচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ নড়াইলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ বাসারুল আলম, নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে বলেন, বর্তমান নকশা অনুযায়ী সেতু নির্মিত হলে যদি বর্ষাকালে নদীতে পানির উচ্চতা অতিমাত্রায় বাড়ে তাহলে সেতুর দুই তীর এবং দুই পার্শ্বের পিলার প্লাবিত হতে পারে। সে কারনে সেতুর শুরু ও শেষের অংশে অর্থাৎ দুই প্রান্তে ৩ মিটার করে উঁচু করা প্রয়োজন। তবে সেতুর মাঝখানের উচ্চতা পূর্বের নকশা অনুযায়ীই হবে।
নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ফরিদ উদ্দীন, নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, সেতুর পাইল ক্যাপ পানির ওপরে থাকবে না পানির নীচে থাকবে সেটা নকশায় ধরা ছিল না। সোমবার (১২ নভেম্বর) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, ঢাকায় নকশা সংক্রান্ত এক মিটিং-এ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। নকশা পরিবর্তন হলে সেতুর ব্যয় কিছুটা বাড়তে পারে। এর জন্য ডেভোলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) কারেকশনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। আশা করছি এ মিটিং-এর পর সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু হবে।
একুশে মিডিয়া/এমএ
No comments:
Post a Comment