উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি■:
নড়াইলে ৪৭ বছর পরও নির্মাণ হয়নি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। এমনকি শহীদদের সমাধিস্থলগুলো সংরক্ষণে নেই কোনো উদ্যোগ।
এদিকে স্মৃতিস্তম্ভ না থাকায় ৮ডিসেম্বর নড়াইলের লোহাগড়ায় মুক্ত দিবসসহ বিজয় দিবস, স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করতে হয়।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মফিজুল হক বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের জন্মভূমি ও স্মৃতিধন্য নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলাতে রয়েছে বীর উত্তম, বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা। তাই ৮ ডিসেম্বর মুক্ত দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে লোহাগড়ার মুক্তিযোদ্ধা, তাদের পরিবারসহ সর্বস্তরের মানুষের মনেপ্রাণে অন্যরকম আনন্দ-আবেগ জাগ্রত হয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও লোহাগড়ায় কোনো স্মৃতিসৌধ নির্মিত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছুই থাকে না। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৩ মে নড়াইলের লোহাগড়ার ইতনা গ্রামে মুক্তিকামী ৩৯ জনসহ ৫৬ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা।
কিন্তু সরকারি উদ্যোগে কোনো স্মৃতি রক্ষা করা হয়নি। ইতিহাসের এই পৈশাচিক হত্যাকা-ের ঘটনা শুধুমাত্র বইয়ের পাতায় স্থান পেয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের কবর, কোনো বধ্যভূমি ও স্মৃতি সংরক্ষণ করা হয়নি। শহীদদের নাম ফলক না থাকায় স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, মুক্তিযোদ্ধাসহ লোহাগড়াবাসীর দাবি, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ নির্মাণসহ গণকবরগুলো চিহিৃত করে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এমএম গোলাম কবির বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীণ সময়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। নকশালদের বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি উপজেলায় স্মৃতিফলক ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানানো হলেও তা আলোরমুখ দেখেনি। বতর্মান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছেন। আশা করি আগামীতে সব শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণ, স্মৃতিফলক স্থাপন ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিবেন।
নড়াইলের লোহাগড়ায় নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শনিবার হানাদার মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। অপরদিকে মুক্ত দিবস উপলক্ষে থানা ভবন চত্বরে শহীদ হাবিবুর রহমানের কবর জিয়ারত এবং দেশ ও জাতির শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
লোহাগড়া হানাদার মুক্ত দিবস উদযাপন কমিটির আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স চত্বরে সকালে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। পরে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স চত্বর থেকে এ উপলক্ষে একটি র্যালি বের হয়। র্যালিটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে শেষ হয়। আলোচনা সভায় লোহাগড়া হানাদার মুক্ত দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক ফকির মফিজুল হকের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন প্রধান অতিথি নড়াইলের ডিসি আনজুমান আরা, বিশেষ অতিথি এসপি জসিম উদ্দিন পিপিএম, লোহাগড়া ইউএনও মুকুল কুমার মৈত্র, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এমএম গোলাম কবীর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ ওহিদুজ্জামান বাচ্চু, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল হামিদ।
একুশে মিডিয়া/এমএ
No comments:
Post a Comment