আজ ও সে কেওক্রাডং পর্বত চূড়ায় উঠার আনন্দ ভুলতে পারিনি-রাইডার্স রনি। একুশে মিডিয়া - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Sunday, 24 February 2019

আজ ও সে কেওক্রাডং পর্বত চূড়ায় উঠার আনন্দ ভুলতে পারিনি-রাইডার্স রনি। একুশে মিডিয়া




এম এ হাসান, কুমিল্লা:>>>
বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের জেলা বান্দরবান।পাহাড়ী এই জেলায় রয়েছে রকমারি ঐতিহাসিক পর্বতের নিদর্শন।বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলায় অবস্থিত কেওক্রাডং এদের মধ্যে অন্যতম।উল্লেখ্য কেওক্রাডং বাংলাদেশের ৩য় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ।
এই কেওক্রাডং পর্বত চূড়ায় মোটরসাইকেল নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও সাথে জাতীয় সংগীত এর কলি,একসঙ্গে কতিপয়  কন্ঠে উচ্চ স্বরে গেয়ে আসা এক রাইডার্স মঞ্জুর মোর্শেদ রনি।কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কৃতি সন্তানের সেই কেওক্রাডং পর্বত চূড়ায় বিজয়ের গল্প ভ্রমণ পিপাসুদের অনুপ্রেরণার লক্ষে প্রকাশ করলেন আমাদের মাধ্যমেঃ
ভ্রমণ মানেই প্রশান্তি । ভ্রমণ মানেই ক্লান্তি দূর করার প্রাকৃতিক ঔষধ। কিন্তু এমন কিছু ভ্রমণ আছে যা আপনার শরীরের ঘাম ঝড়াবে। আর তা যদি হয় বাইকে,তাহলে তো ঘাম ঝড়বেই। তবে এ নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, কষ্ট হলেও পর্বত চূড়ায় উঠার পর আনন্দটা হাজার গুনে বেরে যাবে। বলছি- কেওক্রাডং এর কথা। কেওক্রাডং, বাংলাদেশের তৃতীয় না পঞ্চম সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তা নিয়ে অনেক দ্বিমত রয়েছে।
এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা বান্দরবানে অবস্থিত। এক সময় এটিকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ধরা হত। তবে আধুনিক গবেষণায় এই তথ্য ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ সাকা হাফং।কুমিল্লা রাইডার্স এবং রোড রোলার্স এর এবারের মিশন কেউক্রাডং জয়। লিমন আজাদ ভাই ও ফাহিম হোসেন রনি ঢাকা থেকে ২০১৮ইং এর ডিসেম্বর ১৪তারিখ, রাত ১২টায় যাত্রাশুরু করে, কুমিল্লা হোটেল তাজমহলে পৌঁছায় রাত তখন প্রায় ২টা। যা আমার বাড়ির পাশেই।ছোট একটা বিরতির পর কুমিল্লা রাইডার্সের হয়ে আমি,বন্ধু মাসুম ও তানিম সহ আবার চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা করি। রাত তখন ৪টা, চট্টগ্রাম জিইসি মোড়।
আমাদের অপেক্ষায় আপেল মাহমুদ ভাই যাকে দেখলেই খুব নিরীহ মনে হয়,সালাহউদ্দীন ভাই যাকে আমি সালাহ ভাই নামে ডাকি, আর নতুন ভাবে পরিচিত রাশেদ জলিল ভাই। জানতে পারি,সে অনন্ত জলিলের কেউ হন না। ১৫মিনিটের চা বিরতি শেষে এবার গন্তব্য বান্দরবান। চাকমা শ্রাবণ ও সায়মন্ড মারমা আমাদের টিমের আরও দুইজন সদস্য। বান্দরবান, সিফাত ভাইয়ের হোটেলে সেই সন্ধ্যা থেকে আমাদের অপেক্ষায়। হাড় নাড়িয়ে দেয়া শীতে সারা রাত বাইক চালিয়ে ভোর ৬টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত সবাই একটু ঘুমিয়ে নিয়েছি। তারপর শুরু হচ্ছে আমাদের স্বপ্নের সেই যাত্রা। সাথে দশ জন টিম সদস্য এবং দশটি বাইক।
ঘন্টা খানিক বাইক চালিয়ে চলে আসি রুমা বাজার। এখানে, গাইড ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পুর্ন করে, সাপের মত করে আমরা ছুটে চলছি। আঁকা-বাঁকা, উঁচু – নিচু কোথাও দু পাশে পাহাড়। আবার কোথাও একপাশে পাহাড় অন্য পাশে নিচের দিকে খাড়া ঢাল। তাই মাঝে মাঝে গাঁ শিহরণ দিয়ে উঠে। পাহাড়ি রাস্তায় প্রায় আড়াই হাজার ফুট উঠে হঠাৎ সামনে যখন সুবিশাল জলরাশি হাজির হয়, তখন “স্তব্ধভাষা রুদ্ধশ্বাস বিপুল বিস্ময়ে স্তম্ভিত” হয়ে যেতে হয়। বলছি শান্তজলের হ্রদ বগা লেকের কথা,সময় তখন দুপুর ১২টা হবে। বগা লেকে সেনাবাহিনী ক্যাম্পে অনেক বলে, আকুতির পরেও বাইক নিয়ে কেউক্রাডং যাওয়ার অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত সবাই সে কি মজা ও আনন্দের সাথে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কাটিয়েছি।
মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিলো কেউক্রাডং মনে হচ্ছে আর যাওয়া হবে না। কিন্তু আমরা কেউ হাল ছাড়িনি। বাইক নিয়েই কেউক্রাডং যাবো। শেষ বিকালে যখন অনুমতি পেলাম,তখন কি যে আনন্দ সবার মাঝে। তবে, আজ আর যেতে পারবোনা। সবাইকে আজ বগা লেকেই থাকতে হবে। কটেজ সব বুকিং আমাদের কি হবে? না,চিন্তার কিছুই নেই। আমরা আমাদের তাবু করতে লেগে গেলাম। সে এক অন্য রকম অনুভূতি, তাবুতে থেকে সারা রাত বগা লেকের যত সৌন্দর্য আছে সব দেখবো।সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৭০০ ফুট উঁচু পাহাড়ে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট বগা লেক। ভূ-তত্ত্ববিদগণের মতে প্রায় দুই হাজার বছর আগে প্রাকৃতিক ভাবে পাহাড়ের চূড়ায় এই লেক তৈরি হয়। মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ কিংবা মহাশূন্য থেকে উল্কাপিণ্ডের পতনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। কেউক্রাডং এর কোল ঘেঁষে বান্দারবান শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার এবং রুমা বাজার থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে বগা লেক এর অবস্থান। পাহাড়ের উপরে প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে এই লেকের অবস্থান।
শান্তজলের হ্রদ আকাশের কাছ থেকে একমুঠো নীল নিয়ে নিজেও ধারন করেছে সে বর্নিল রং। পাহাড়ের চুড়ায় নীল জলের আস্তর, নীল আকাশের সাথে মিশে তৈরি করেছে সে অন্য এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। মুগ্ধ নয়নে দেখতে হয় আকাশ, পাহাড় আর জলের মিতালী। প্রকৃতি এখানে ঢেলে দিয়েছে একরাশ সবুজের ছোঁয়া। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে আসার ক্লান্তি হারিয়ে যায় হ্রদের অতলগহ্বরে। সবকিছু মিলে এ যেন এক সুন্দরের লীলাভূমি।
বগালেককে অনেকে ড্রাগনলেকও বলে থাকে। সকাল, সন্ধ্যা বা রাতে প্রতি বেলায়ই বগা লেক নতুন রূপে ধরা দেয়। সকালের উজ্জ্বল আলো যেমন বগা লেককে দেয় সিগ্ধ সতেজ রূপ। ঠিক তেমনি রাতের বেলায় দেখা যায় ভিন্ন এক মায়াবী হাতছানি। রাতের বগালেক দিনের বগা লেক হতে একেবারেই আলাদা। আর যদি রাতটি হয় চাঁদনী রাত তবে এটি হতে পারে আপনার জীবনের সেরা রাতের একটি। কি অসাধারণ সে রূপ। নিকষ কালো অন্ধকার রাতে পাহাড়ের বুক চিড়ে হঠাৎ একফালি চাঁদ মৃদু আলোর ঝলক নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে বগালেকের শান্তজলে। আমরা ঘাটের কাছাকাছিই ডুবাডুবি করছিলাম। খুব ছোট ছোট এক ধরণের মাছ আছে এখানে। ঘাটের সিড়িতে পা ডুবিয়ে বসলে কামড় দিয়ে যায়। 
দুপুরে ও রাতে বগা লেকের এক্সপেন্সিভ খাবার (ডিম ভাজি,আলু ভর্তা, ডাল-ভাত – ১২০ টাকা !!!)। রাত প্রায় ১১টায় বিজিবি এসে চুপ থাকার কথা বলার আগে পর্যন্ত সবাই আড্ডা,হাসি আর মজার মধ্যে ছিলাম। ১৫তারিখ সকাল,এখন সেই মাহেন্দ্র যাত্রা শুরু কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে। কেউক্রাডং এর রাস্তা বাংলাদেশের অনান্য রাস্তা থেকে সম্পুর্ন ভিন্ন। কোথাও কোথাও উপরের দিকে অনেক উঠতেই হয়,আবার কোথাও কোথাও অনেক নামতেই হয়। আর এই পথেই মাঝে মাঝে রয়েছে অনেক ঝিরি। যা আপনে একা পার হওয়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়। রাস্তাটি সম্পুর্ন কাঁচা, ভাংগা এবং অসম্পূর্ণ। আর তাই বাইক নিয়ে আমাদের ট্রেকিং করতে হয়েছে। সাধারণ দর্শনার্থীরা পায়ে হেটে যায়। কেউক্রাডং এর কোলে বম বসতি দার্জিলিং পাড়ায় নেয়া হল একটা চা বিরতি। তার কিছুক্ষন পরেই পৌঁছে যাই আমাদের কাংখিত গন্তব্যে। বগালেগ থেকে কেউক্রাডং এর দূরত্ব প্রায় ১৩কিলোমিটার।
দূর থেকে কেওক্রাডংয়ের চূড়াকে ধোয়াটে মনে হয়। সাদা মেঘে ঢাকা। হওয়ায় ঝাপটায় দাঁড়ানো দায়। বৃষ্টি–বাতাস-মেঘ সময় সময় দখল নেয় চূড়ার আশপাশ। যেখানে মেঘের দলের সঙ্গে মিতালী হয় সবুজে ঢাকা পাহাড়ের। কেউক্রাডং এর চূড়ায় উঠে সবাই ছবির ফ্রেমে বন্ধি হয়ে নিলাম। সময় তখন দুপুর গড়িয়ে বিকাল। সবাই সবার সুবিধা মত জায়গায় তাবু করে নিয়েছি।
সূর্য ডুবে গেলো পাহাড়ের ওপাশে। আমরা রাত কাটাবো ৩১৭২ ফিট উপরে কেওক্রাডং এর চূড়ায়। আলাপ হলো কেওক্রাডং পাহাড়ের “মালিক” লালা দা’র সাথে। তার পুরো পরিবার ওখানে বাস করে, একটা বোর্ডিং টাইপের ব্যাপারও সেখানে আছে। যা হোক, তার আশ্রয়ে পাহাড়ী মোরগের শক্ত গোশত-ভাত খেয়ে আমরা কাত। হটাৎ খুব বৃষ্টি,কনকনে ঠান্ডা আবহাওয়া আর ভেজা বাতাস। বৃষ্টি হওয়াতে খুব চিন্তায় সবাই। কারন,রাস্তা যদি ভেজা থাকা তাহলে আমরা আর নামতে পারবোনা। কিছুক্ষণ পরে অবশ্যই বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়। পাহাড় চূড়ায় ঘুমাতে যে এতো মজা তা কে জানতো !!! ১৬ডিসেম্বর,ভোরের নরম আলো কেওক্রাডং এর চূড়া দুধসাদা মেঘ কন্যারা ঘিরে আছে চারদিক। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে বিজয়ের প্রথম সূর্য দেখছি। আর সাথে সাথে সবাই এক সাথে গেয়ে উঠি,আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। সকালের নাস্তা সেরে ধোয়াটে মেঘের মধ্য দিয়ে ফিরতি যাত্রা শুরু। দার্জিলিং পাড়া হয়ে ফিরতি পথে আবারও বগালেক হয়ে রুমা বাজারে সাঙ্গু পেরিয়ে চলে এলাম বান্দরবান। সময়ের বড়ই টানাটানি, এ যাত্রা মারায়ংতং না দেখেই ফিরতে হচ্ছে। এই জায়গাগুলো আপনার আমার দেশের সৌন্দর্য্য। পর্যটন এলাকায় কোন আবর্জনা ফেলে এই সৌন্দর্য্যকে নষ্ট করবেন না। ট্রাফিক আইন মেনে ও হেলমেট পরে বাইক চালাবেন।
লেখক- (মঞ্জুর মোর্শেদ রনি)



একুশে মিডিয়া/এমএসএ

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages