একুশে মিডিয়া, রাবি প্রতিনিধি:>>>
মুক্তিযুদ্ধের সময় সংবাদ সরবরাহে নিয়োজিত থাকা মকবুল হোসেনের নাম নেই মুক্তিযোদ্ধা তালিকায়। সোমবার বিকাল ৩ টা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটিই অভিযোগ করছেন তিনি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় টেলিফোন অপারেটর হিসেবে চাকরি করতেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার মকবুল হোসেন । বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে তিনি ৭ নং সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। মূলত সে সময়ে তিনি ৭ নং সেক্টরের ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিনের অধীনে মুক্তিযোদ্ধাদের কাজ করতেন তিনি।
তাঁর অন্যতম কাজ ছিল খবর আদান প্রদান করা। একবার পাকবাহিনীর হাতে ধরাও পড়েছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালের ১৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুরে মিলিটারি বাহিনী তাকে আটক করে। এসময় মকবুল হোসেনের কাছে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া একটা ছোট চিরকুট। সেই চিরকুট তিনি মুখে জিহ্বার নিচে লুকিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু পাকবাহিনীরা তাকে বিভিন্ন জিজ্ঞাসাবাদ করে সেদিন বিকেল ৩টার দিকে তাকে ধরে নিয়ে যায় সে সময়ে পাকবাহিনীর ক্যাম্প বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুজ্জোহা হলে। এই ক্যাম্পে ধরে নিয়ে গিয়ে মকবুল হোসেনকে বন্দুক দিয়ে মারধর করে মিলিটারিরা। রাত ১২টার দিকে মকবুল হোসেনসহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা থেকে ধরে নিয়ে লোকদের নিয়ে যাওয়া হয় বধ্যভুমিতে। সেখানে সকল মানুষকে গলা কেটে হত্যা করে মিলিটারিরা। মকবুল হোসেনের গলাও কেটেছিল। সে যাত্রায় বেঁচে যান মবকুল হোসেন। কিন্তু গলায় কাটার দাগ এখনো আছে তাঁর।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘যুদ্ধ চলাকালে আমার বয়স ছিল ১৭ বছর। আমার কাজ ছিলো পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা কোথায় যাচ্ছে, কোথায় অপারেশন করবে তার খোঁজ খবর রাখা? কোন এলাকায় হামলা করেছে এরকম তথ্যগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌছে দিতাম আমি। কাজ ছিলো টেলিফোন লাইন উল্টোপাল্টা করে পাকিস্তানিদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা। মুক্তিযুদ্ধে ‘সংবাদ কর্মীর’ ভুমিকায় কাজ করার পরও আমাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। সরকার যখন মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন করে তালিকা করা শুরু করলো, অনেকের কথায় আমিও আবেদন করেছিলাম। আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে আমাকে ডাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি। সেখানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত হলে আমার কাছে কিছু টাকা চায় ‘প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি। কিন্তু আমার টাকা দিয়ে তালিকাভুক্ত হওয়ার সামর্থ নেই। তাই টাকা দিতে না পারায় মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আমার নাম আসলো না। বর্তমানে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় অনুষদের রেললাইনের পাশে চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছি।
মকবুল হোসেনের ছেলে আল-আমীন বলেন, ‘আমার বাবা ‘মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাচাই কমিটির’ কাছ থেকে চলে আসার পর তাদের সঙ্গে আবার যোগযোগ করেছিলাম। তারা বলেছিলেন, আমার বাবা তো বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করতো। আমাদের কিছু টাকা দিলে কাজ হবে। কিন্তু আমরা টাকা না দেয়ায় আমার বাবার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় উঠেনি।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment