একুশে মিডিয়া, রাবি প্রতিনিধি:>>>
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়’ পাবলিক পরিবহনে যৌন হয়রানি বন্ধে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন স্থানে সচেতনতা বিষয়ক এ কর্মসূচি চালায় সংগঠনটির কর্মীরা।
তাদের কর্মসূচির মধ্যে ছিল যৌন হয়রানির বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে বিভিন্ন পাবলিক পরিবহনে স্টিকার লাগানো ও পরিবহন ব্যবস্থা কতটা নারীবান্ধব তা যাচাইয়ের জন্য একটি জরিপ পরিচালনা। জরিপে দেখা যায়, বেশিরভাগ নারীই পরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন, মহানগরীর ভদ্রা, রেলগেটসহ বেশ কয়েকটি স্থানের বাস, সিএনজি, অটো, লেগুনা সহ প্রায় সকল পরিবহনে ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’ স্লোগান সম্বলিত স্টিকার লাগানো হয়। যৌন হয়রানিকে ’না বলুন’ এবং আইনী সহায়তার জন্য ১০৯ নম্বরে কল করার কথাও স্টিকারে উল্লেখ করা হয়। জনসচেতনতার লক্ষ্যে যাত্রী, চালক, হেলপার, পথচারীদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন সংগঠনটির কর্মীরা।
‘পথের সাথী’ নামের বাসের চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, এটা একটা ভালো উদ্যোগ। অনেক সময়ই পুরুষেরা নারীদের ইচ্ছে করে ধাক্কা দেয়, শরীরে হাত দেয়, ঘেঁষে দাঁড়ায়। এটা খুব জঘন্য কাজ। এই কর্মীরা যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসনীয়। এসব লেখা দেখে পুরুষেরা নারীদের গায়ে হাত দিতে লজ্জাবোধ করবে। সারাদেশে এরকম কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা উচিত। কারণ সবারই বাড়িতে মা-বোন আছে। সবাই নিরাপদে থাকতে চায়।
এইচএসসি পরীক্ষার্থী শাহানা আক্তার নামের এক যাত্রী বলেন, অন্ধকারে যৌন হয়রানি তো চলছেই। আজকাল জনসম্মূখেও হয়রানির শিকার হচ্ছে নারীরা। গা ঘেঁষে দাঁড়ানো, একটু ভীড় হলেই গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা, ইচ্ছে করে ধাক্কা দেয়া, নোংরা বাক্য ব্যবহারসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এই উদ্যোগের ফলে পাবলিক স্থানে স্টিকার দেখে লজ্জায় অন্তত এসব কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকবে এতটুকু আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
‘ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়’ সংগঠনের সভাপতি এবং শারিরীক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নওরীন পল্লবী বলেন, পাবলিক ট্রান্সপোর্টে প্রায় ৯৪ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। বিভিন্ন পরিবহনে আমাদের লাগানো স্টিকারগুলো সাধারণ যাত্রী, পরিবহন কর্তৃপক্ষ এমনকি যৌন হয়রানির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের জন্য একটি বার্তা বহন করবে। একজন ভুক্তভোগী যখন দেখবে তার সমস্যার ব্যাপারে অনেকেই আলোচনা করছে এবং সজাগ আছে তখন সে নিজেও প্রতিবাদ করতে লজ্জাবোধ করবে না। সাহসের সহিত আওয়াজ তুলতে সামর্থ হবে। পাশাপাশি যারা এসব অপকর্ম বা নোংরা কর্মকান্ডগুলো ঘটায় তারা ভয় পাবে এবং পরিবহন কর্তৃপক্ষও এসব ব্যাপারে সজাগ থাকবে।
এর আগে সংগঠনটি রাজশাহীর প্রায় আটটি স্কুলে শিশুদের যৌন নিপীড়নের বিষয় নিয়ে কর্মশালা করে। সেখানে যৌন বিষয়ক সচেতনতা তৈরি ও নিপীড়িতদের আইনি সহায়তা দেয়া, যৌন হয়রানী বিষয়ক সচেতনতা তৈরি ও নির্যাতিতদের নিয়ে কাউন্সেলিং করা, আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা, বাল্যবিবাহ ও ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা তৈরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘সেইফ জোন’ প্রতিষ্ঠা এবং শিশু নিপীড়নের হার নির্ণয়ে জরিপ পরিচালনা, শিশুদের কে নিজেদের শরীরের ব্যক্তিগত অঙ্গগুলোর সাথে পরিচিতি এবং ভালো স্পর্শ ও খারাপ স্পর্শের পার্থক্য বুঝানো, কে বা কারা ব্যক্তিগত অঙ্গগুলো দেখতে/স্পর্শ (প্রয়োজনে) করতে পারবে তা বুঝিয়ে দেয়া, কেউ খারাপভাবে আদর করলে কি কি উপায়ে তারা নিজেকে রক্ষা করবে তার স্পষ্ট ধারণা দেয়া ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়। তাছাড়া চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীতে নিপীড়িতদের হার নির্ণয়ে জরিপ পরিচালনা করা হয়।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment