মোঃ শাহরিয়ার কবির আকন্দ, গাইবান্ধা প্রতিনিধি:>>>
ডাক্তারী পেশা একটি সেবামূলক ও সম্মানী পেশা, তবে অধিকাংশ ডাক্তারদের খাম খেয়ালীপনায় আজকাল জনসাধারণ ডাক্তারদের সেই প্রাপ্য সম্মান টুকু দেয় না। বরং জনসাধারণ কথায় কথায় ডাক্তারদের কসাই/ডাকাত বলে সম্বোধন করেন। তবে এর জন্য জনসাধারণ দায়ী নয় দায়ী সেই ডাক্তাররাই কারণ তারা তাদের কাজে কর্মে তাদের সম্মানটুকু ধরে রাখতে পারেনি।
অধিকাংশ ডাক্তার তাদের লোভ লালসায় নিজের আত্মা সম্মান গঙ্গায় ভাসালেও নিজের সম্মান ধরে রেখেছেন গাইবান্ধার কৃতি সন্তান ডাঃ এজাজুল হক এজাজ। তার কৃত কর্মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছে ডা: এজাজ। ডাঃ এজাজ দেশের সর্বোচ্চ মেডিকেল কলেজ ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ও নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত।উচ্চ পদস্থে দায়িত্বে থাকা একজন ডাক্তারের রোগী দেখার ফি ৮০০/১০০০ টাকা হওয়ার কথা থাকলেও ডাঃ এজাজ নেন মাত্র ৩০০ টাকা।তার এ রোগী দেখার নির্ধারিত ফি এর একটি সাইনবোর্ড গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই প্রশংসায় ভাসছে ডাঃ এজাজ।ডাঃ এজাজের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, সরকার থেকে একবার ৩০০ টাকা ফি নির্ধারণ করে দিয়েছিল সেটাই এখনও আছে। বাড়াতে পারিনি। কিন্তু আমার কাছে যারা আসেন তাঁদের মধ্যে ৬০ ভাগ মানুষ ৩০০ টাকা দেন। বাকি ৪০ ভাগের মধ্যে কেউ ২০০ টাকা কেউ ১০০ টাকা আবার কেউ কোনো ফি দেন না। আমার কোনো দাবি নেই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনি প্রশংসায় ভাসছেন এতে আপনার অনুভূতি কেমন?উত্তরে তিনি বলেন ভালো লাগে এছাড়া ফি কম নেওয়ায় এর আগে থেকেই সবাই আমাকে গরিবের ডাক্তার নামে ডাকে। গরিবের ডাক্তার হিসেবেই গাজীপুরে আমি পরিচিত। কারণ যাদের টাকা পয়সা নাই তারা জানে আমার কাছে এলে টাকা না থাকলেও তাদের চিকিৎসা হবে। সবাই এখন ডাক্তারদের কসাই বলেন। আল্লাহর রহমতে আমার নামের সাথে কসাই শব্দটা যুক্ত হয়নি।
ডাঃ এজাজের পেশা ডাক্তারী হলেও তিনি
একজন স্বনামধন্য অভিনেতাও বটে।
ডা. এজাজুল ইসলাম রংপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৮৪ সালে সেখান থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। এরপর বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি) থেকে নিউক্লিয়ার মেডিসিনে স্নাতকোত্তর করেন।
জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মাধ্যমে ডা. এজাজুল ইসলামের অভিনয় জীবন শুরু। হুমায়ূন আহমেদের একাধিক চলচ্চিত্রেও তিনি কাজ করেছেন। 'তারকাঁটা' চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন।
যেকোন নাটক সিনেমায় তার উপস্থিতি মানেই বাড়তি বিনোদন।জানা যায়,ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের স্বপ্ন দেখতেন এজাজুল ইসলাম। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ে প্রথম মঞ্চে অভিনয় করার সুযোগ পান, তার অভিনয়ে দর্শক হেসে উঠেছিল যা তাকে অভিনয় করার ব্যাপারে আরও আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়।
রংপুরে অবস্থানকালীন সময়ে ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত রংপুর রেডিওতে কাজ করেন এজাজুল ইসলাম। ১৯৮৫ সালে চাকরীর সুবাদে ঢাকায় চলে যান। চাকুরীর পাশাপাশি টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের তীব্র আগ্রহ থেকে ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের অভিনয় শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। কিন্তু থিয়েটারের কোন অভিজ্ঞতা না থাকায় তিনি কোন নাটকে অভিনয় করার সুযোগ পান নি।
রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রিধারী এজাজুল ইসলাম টেলিভিশনে অভিনয় চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আবারও পড়াশোনায় মনযোগ দেন এবং পিজি হাসপাতালে নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগে পোস্টগ্রাজুয়েশনে ভর্তি হন।
এসময় একদিন ঘটনাচক্রে সাহিত্যিক-নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের সাথে পরিচয় হয়। এজাজুল ইসলাম তার অভিনয় আগ্রহের কথা জানান তাকে। হুমায়ূন আহমেদ তখন গাজীপুরে তার ধারাবাহিক নাটক ‘সবুজ সাথী’র কাজ শুরু করছেন এবং এজাজুল ইসলামেরও চেম্বার গাজীপুরে। পরিচয়ের তিন চারদিনের মাঝেই হুমায়ূন আহমেদ তাকে ডেকে পাঠান এবং সবুজ সাথী ধারাবাহিকে কাজ করার সুযোগ করে দেন।
হুমায়ূন আহমেদের টিভি নাটক এবং চলচ্চিত্রের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করার পর এজাজুল ইসলাম বর্তমানে প্রায় সব ধরনের নাটক এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র শ্রাবন মেঘের দিন। এর পর তিনি দুই দুয়ারী (২০০১), চন্দ্র কথা (২০০৩), শ্যামল ছায়া (২০০৪) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি তারকাটা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ৩৯তম জাতীয় চলচিত্র পুরষ্কার পান। শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতার পুরস্কারে ভূষিত হন।
গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার রসূলপুর গ্রামে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি এখনো তার ডাক্তারি পেশা চালিয়ে যাচ্ছেন। গাজীপুর চৌরাস্তায় নিজস্ব চেম্বারে নিয়মিত রোগী দেখেন তিনি।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment