মোঃ আরিয়ান আরিফ, ভোলা:>>>
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল। ১৯৭১ সালের এ দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় দরুইন গ্রামে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শাহীদ হন তিনি।সেদিন তিনি একাই লাড়াই করে বাঁচিয়ে দিয়েছেন সহযোদ্ধাদের প্রাণ।
এ উপলক্ষে আলোচনা সভা, দোয়া মোনাজাত ও নানা কর্মসূচির আয়োজন কারা হয়েছে।পারিবারিকভাবে জানা যায়, ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার হাজিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মোস্তফা কামাল। পিতা হাবিলদার মো: হাবিবুর রহমান ও মাতামালেকা বেগম। ৫ ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।
তাঁর স্ত্রীর নাম ছিলো পিয়ারা বেগম। আশির দশকে মেঘনা নদীর ভাঙ্গনে দৌলতখান উপজেলার হাজীপুর গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের পৈত্রিক বাড়িটি বিলীন হয়ে যায়।
১৯৮২ সালে সরকার সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নে মৌটুপি গ্রামে কিছু সম্পত্তিসহ তার-পিতা- মাতার জন্য একটি পাকা বাসভবন নির্মাণ করে তাদের পুনর্বাসিত করে। বর্তমানে এ গ্রামের নাম পরিবর্তন করে বীরশ্রেষ্ঠ’র নাম 'মোস্তফা কামাল নগর’ রাখা হয়েছে।
এ গ্রামের বাড়িতেই বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের মা মালেকা বেগমসহ পরিবারের অন্যন্য সদস্যরা বসবাস করেন। বাড়ির পাশেই ২০০৮ সালে সরকারিভাবে নির্মাণ করা হয়েছে ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা গ্রন্থাগার ও স্বৃতি জাদুঘর’। মোস্তফা কামালের ছোট বেলা থেকেই স্কুলের পড়ালেখার চেয়ে ভালো লাগত সৈনিকদের কুচকাওয়াজ।
নিজেও স্বপ্ন দেখেন একদিন সৈনিক হওয়ার। ১৯৬৭ সালে কাউকে কিছু না বলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ক্রমশই স্বাধীনতার দাবিতে সারা দেশ উত্তাল হতে থাকে। ৭মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ শুনে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন বীরদর্পে মোস্তফা কামাল।
১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল সিপাহী মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে ১টি মুক্তিযোদ্ধাদের দল ব্রাম্মনবাড়িয়ার দিকে এগিয়ে আসা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে ঠেকানোর জন্য আখাউড়ার দরুইন গ্রামে অবস্থান নেয়। সংখায় বেশি ও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকাবাহিনীর সাথে মোকাবেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের ছিলো অদম্য
মনোবল। প্রচন্ড ঝুঁকির মধ্যেও মুক্তিযোদ্ধারা
শত্রুর জন্য প্রস্তত থাকে অস্ত্র হাতে।
১৮ এপ্রিল সকাল থেকেই আকাশে মেঘ
ছিলো। ১১টার দিকে শুরু হয় প্রচন্ড বৃষ্টি।
একইসাথে শত্রুর গোলাবর্ষণ। মুক্তিযোদ্ধারও
পাল্টা গুলি করতে শুরু করল। শুরু হলো সম্মুখ
যুদ্ধ। মেশিনগান চালানো অবস্থায় এক
মুক্তিযোদ্ধার বুকে গুলি লাগল। মুহুর্তের মধ্যে
মোস্তফা কামাল এগিয়ে এসে চালাতে লাগলেন
মেশিনগান। গর্জন করে উঠে তার হাতের
অস্ত্র।মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে কোন অত্যাধুনিক
অস্ত্র ছিলোনা। সংখায়ও অনেক কম ছিলো তারা।আর পাকিস্থানী সৈন্যরা সংখায় ছিলো অনেক বেশি ও ভারি অস্ত্র শস্ত্র সজ্জিত তারা। হয় সামনা সামনি যুদ্ধ করে মরতে হবে, নয় পিছু হটতে হবে। কিন্তু পিছু হটতে হলেও সময় দরকার।ততক্ষন অবিরাম গুলি চালিয়ে শত্রুদের আটকিয়ে রাখতে হবে। কে নেবে এই মহান দায়িত্ব?এমন সময় আরোএকজন মুক্তিযোদ্ধার বুকে গুলি বিধে। ততক্ষনে মোস্তফা কামাল সকল সহযোদ্ধাদের সরে যেতে বল্লেন। পরিখার
মধ্যে সোজা হয়ে চালাতে লাগলেন
স্টেনগান। মুক্তিযোদ্ধারা তাকে ছেড়ে
যেতে না চাইলে তিনি আবারো সবাইকে
নিরাপদে যেতে বলেন। অবিরাম গুলি চালাতে
থাকেন তিনি। তার গোলাবর্ষণে শত্রুদের
থামকে যেতে হয়েছে। মারা পড়েছে বেশ
কয়েকজন পাক সৈন্য। ততক্ষণে দলের অন্য সদস্যরা নিরাপদে পিছু হটেছেন। একসময় মোস্তফা কামালের গুলি শেষ হয়ে যায়। হঠাৎ করেই একটি গুলি এসে লাগে তার বুকে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। মারা যান মোস্তফা কামাল। তার এমন বীরত্বের কারণে সহযোদ্ধাদের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে। দরুইনের মাটিতে সমাহিত করা হয় জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তানকে।
একুশে মিডিয়া/এমএ
No comments:
Post a Comment