নড়াইলের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠে আসা স্বর্ণকন্যা নমিতার হকি জয়। একুশে মিডিয়া - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Monday, 22 April 2019

নড়াইলের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠে আসা স্বর্ণকন্যা নমিতার হকি জয়। একুশে মিডিয়া


উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি■:>>>
নড়াইলের সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাত্র এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন নমিতা কর্মকার। লোহাগড়ার কচুবাড়িয়ার মেয়ে নমিতাকে এখন এলাকায় সবাই একনামে চেনে খেলাধুলায় তাঁর কৃতিত্বের জন্য।‘কোন খেলাটা বেশি ভালো লাগে? অ্যাথলেটিকস, না হকি?’ প্রশ্ন শুনে দ্বিধায় পড়ে গেলেন নমিতা কর্মকার। চোখের ওপর দুলতে থাকা বেয়াড়া চুলগুলো ঠিক করতে করতে বললেন, ‘এখন হকিই আমাকে বেশি টানে। এই খেলাকে ঘিরেই আমার সব স্বপ্ন।’ পল্টনের মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামের নীল টার্ফে দাঁড়িয়ে নমিতার জবাব।
গ্রামের আর দশটা মেয়ের মতোই দুরন্ত ছিলেন নমিতা। স্কুলে কখনো ফুটবল খেলতেন, কখনো অ্যাথলেটিকসে অংশ নিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আন্তস্কুল টুর্নামেন্টে ফুটবল খেলেছেন। জুনিয়র অ্যাথলেটিকসের জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিয়েছেন ঢাকায়। কিন্তু ফুটবল, অ্যাথলেটিকস বাদ দিয়ে নমিতা এখন হয়ে উঠেছেন জাতীয় নারী হকি দলের অন্যতম খেলোয়াড়।
নড়াইলের লোহাগড়া সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাত্র এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন নমিতা কর্মকার। লোহাগড়ার কচুবাড়িয়ার মেয়ে নমিতাকে এখন এলাকায় সবাই একনামে চেনে খেলাধুলায় তাঁর কৃতিত্বের জন্য।
বাবা মাখন কর্মকারের কোনো জমিজমা নেই। ৭ শতকের বসতভিটায় দুটি জীর্ণ ঘর। লোহাগড়া উপজেলার কচুবাড়িয়া গ্রামের এই কৃষক কাজ করতেন অন্যের জমিতে। মাখন কর্মকারের বয়স ছুঁয়েছে ৬০। কানে কম শোনেন। এক চোখে দেখেন না। কোমরে ব্যথা। একসময় কাঠুরিয়ার কাজও করতেন। কিন্তু নানা অসুখে এখন উপার্জন করতে পারেন না। তারপরও মাঝেমধ্যে পানের বরজে কাজ করতেন। কিন্তু প্রায় ছয় মাস হলো সেই কাজও নেই। মাখন কর্মকারের তৃতীয় সন্তান নমিতা। বড় দুই মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। এখন পাঁচজনের সংসার। ছোট মেয়ে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে। ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
মা চায়না কর্মকার গৃহকর্মীর কাজ করে মেয়েকে লেখাপড়া শেখান। মায়ের কষ্ট ভীষণভাবে ছুঁয়ে যায় মেয়ে নমিতাকে। গভীর রাতে আকাশের দিকে চেয়ে নমিতা ভাবেন, কী করা যায়? নিজের আনন্দের জন্য যে খেলা, তাকেই তিনি উপার্জনের আনন্দে বদলে ফলতে চান। একমাত্র এই পথেই পরিবারকে সহায়তা করতে পারবেন বলে ভাবেন তিনি।
অ্যাথলেটিকসে ২০১৪ সাল থেকে অংশ নিয়ে আসছেন নমিতা। একসময় শটপুটে অংশ নিলেও তাঁর প্রিয় ইভেন্ট জ্যাভলিন থ্রো (বর্শা নিক্ষেপ)। শটপুট ছেড়ে জ্যাভলিনে সব মনোযোগ দেন নমিতা। ২০১৭ সালে জাতীয় জুনিয়র পর্যায়ে অংশ নিয়ে এই ইভেন্টে জেতেন রুপা। সেবার ৩৩ মিটার দূরত্বে বর্শা নিক্ষেপ করেন তিনি। আর গত বছর জিতেছেন রেকর্ড গড়ে সোনা (৩৬.৩৬ মিটার)।
রেকর্ড গড়েই অ্যাথলেটিকসে আলো কেড়েছিলেন নমিতা। অথচ কোনো অনুশীলন করতে পারতেন না নমিতা। করবেন কীভাবে? সেই সুযোগ-সুবিধাই তো নেই তাঁর। কিন্তু নমিতার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) দুই বছর আগে চাকরি দেয় তাঁকে। বিজেএমসি থেকে পাওয়া টাকা এখন তাঁর মা-বাবার সংসারের বড় সম্বল।
মা-বাবার হাতে টাকা তুলে দিতে পেরে ভীষণ খুশি নমিতা, ‘আমি যে টাকাটা বিজেএমসি থেকে পাই, তা আসলে খুব বেশি না। কিন্তু সেটাই আমাদের সংসারের জন্য অনেক বড়।’
ক্যারিয়ারের শুরুতে কখনো ভাবেননি হকি খেলোয়াড় হবেন। স্কুলের ক্রীড়াশিক্ষক দিলীপ চক্রবর্তী মেয়েদের হকি দল গড়ার সময় তাঁর নাম পাঠিয়েছিলেন ফেডারেশনে। ২০১২ সালে মেয়েদের জাতীয় স্কুল হকি চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম স্টিক হাতে নেন নমিতা। এরপর থেকে জাতীয় মহিলা হকি চ্যাম্পিয়নশিপে খেলছেন। আর গত বছর নভেম্বরে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন গঠন করে ‘ঢাকা একাদশ’ নামে মেয়েদের হকি দল। সেখানে সুযোগ পান নমিতা। প্রথমবারের মতো বিদেশি কোনো দলের বিপক্ষে খেলতে নামে ঢাকা একাদশের আড়ালে গড়ে ওঠা মেয়েদের জাতীয় দলটা। ঢাকায় কলকাতা ওয়ারিয়র্স দলের সঙ্গে তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ জেতে ২-০ গোলে। দুটি গোলই করেন নমিতা। বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জেতে। নিজে গোল পেয়েছেন, অন্যকে দিয়ে গোল করিয়েছিলেন। এ জন্য ওই সিরিজ শেষে নমিতার হাতে ওঠে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার।
একটা সময় বাংলাদেশের মেয়েরা একাধিক খেলায় অংশ নিতে পারতেন। কিন্তু এখন দিন বদলেছে। একাধিক খেলায় অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ঘোর আপত্তি ফেডারেশনগুলোর। তাই হকিকেই বেছে নিয়েছেন নমিতা, ‘আমি হকি নিয়েই এখন বেশি স্বপ্ন দেখি।’
আগামী সেপ্টেম্বরে সিঙ্গাপুরে হবে এএইচএফ (এশিয়ান হকি ফেডারেশন) কাপ যুব মহিলা হকি টুর্নামেন্ট। সেখানে অংশ নেবে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ নারী হকি দল। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গড়া হয়েছে জাতীয় নারী দল। সেই দলের ৩৫ সদস্যের খেলোয়াড়ের অন্যতম নমিতা। ক্রিকেট-ফুটবলের মতো হকিতেও লাল-সবুজের জয়গান দেখতে মুখিয়ে নমিতা, ‘যখন ক্রিকেটের রোমানা আপু, ফুটবলের মারিয়া আপুদের খেলা টিভিতে দেখি, তখন মনে হয় আমরাও (হকি) যদি এভাবে খেলতে পারতাম।’
নমিতার খেলার হাতেখড়ি তাঁর বিদ্যালয়ের ক্রীড়াশিক্ষক দিলীপ চক্রবর্তীর কাছে। দিলীপ চক্রবর্তী বললেন, ‘হকিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। নিজের চেষ্টায় উঠে এসেছে নমিতা। নমিতাদের লালন করা গেলে তারা হবে এ দেশের বড় সম্পদ।’
নড়াইলের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠে আসা নমিতা যেন বাংলাদেশের মুখ। জীবনযুদ্ধ জয় করে নমিতা খেলে চলেছেন হকি। নমিতাদের হাত ধরেই হয়তো হকিতে আরেকটি রূপকথার জন্ম হবে বাংলাদেশের জন্য।




একুশে মিডিয়া/এমএসএ

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages