এবিএস রনি, যশোর প্রতিনিধি:>>>
মেঝেতে ও দেয়ালের ছোট বড় খোপে সাজানো কাপড়ের স্তুপ। ডান-বামের দেয়ালেও ঝুলছে নানা রঙ ও নকশার তৈরি পোশাক। সেলাই মেশিনের একটানা খটখট আওয়াজ চলছে। এর মধ্যেই নেওয়া হচ্ছে নতুন পোশাকের মাপযোগ। একইসঙ্গে চলছে মাপ অনুয়ায়ী কাপড় কাটার কাজও।
যশোরের বেশ কয়েকটি দর্জিবাড়িতে ঘুরে এমন ব্যস্ততা দেখা গেছে। পোশাকের নতুন বৈচিত্র আর সাইজের হেরফের এড়ানো ছাড়াও নতুন পোশাক বানাতে জুড়ি নেই দর্জিবাড়ির।
বাহারি রঙের গজ কাপড় আর নানা নকশার সেলাইবিহীন থ্রিপিস নিয়ে পছন্দের পোশাক বানাতে ক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম টেইলার্সগুলো। তাই ঈদের আগের এ সময়টাতে ব্যস্ততা বেড়ে গেছে সেলাইঘরের ও ছিটকাপড় দোকানিদের।
ঈদুল ফিতরের নতুন জামা তৈরি করতে ছিট কাপড়ের দোকানে এখন মানুষের ভিড়। ছিট কাপড় কিনে তারা ছুটছেন দর্জিবাড়িতে। সবার আগে বানাতে হবে পোশাকটি। তাই চলছে নিজের পছন্দের ছিটটি আগে দেওয়ার। দর্জিরাও দিন-রাত বিরতিহীনভাবে পোশাক তৈরি করছেন।
যশোর কাপুড়িয়াপট্টিতে রয়েছে ছোট-বড় বহু ছিট কাপড়ের দোকান। তাই দূর-দূরান্ত তো বটেই, শহরের লোকেরাও কাপুড়িয়াপট্টিতে পছন্দের কাপড় খুঁজে ফিরছেন। পছন্দ হলে দাম-দর নিয়ে ভাবছেন না কেউ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই বাজারে এখন চরম ব্যস্ততা।
এক দোকান থেকে আরেক দোকানে তারা ছুটে বেড়াচ্ছেন পছন্দের কাপড় কেনার জন্য। কাপুড়িয়াপট্টির জিকো কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক আলী হোসেন জানান, আগের চেয়ে বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে। থ্রিপিস, পাঞ্জাবি,প্যান্ট ও শার্টের কাপড় বেশি বিক্রি হচ্ছে।
বিদেশি কাপড়ের দাম আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। তাই তাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। লতিফ ক্লথ স্টোরের বিক্রয় কর্মী বাবু শেখ বলেন, এবার বাজারে দেশি কাপড় বেশি রয়েছে। তাই দামও থাকছে সবার সাধ্যের মধ্যে। ক্রেতারা নিজের পছন্দ মতো কাপড় কিনতে পারছেন।
তবে ক্রেতারা বলছেন, কম নয়, বরং গত বছরের চেয়ে এবার ছিট কাপড়ের দাম চড়া। আছিয়া বেগম নামের এক গৃহিনী জানান, ছিট কাপড়ের দাম গত কয়েক বছরের চেয়ে বেশি। তার পরও এখনই ছিট কাপড় কিনে দর্জিবাড়িতে দিতে না পারলে ঈদের আগে পাওয়া কঠিন হবে। তাই সবাই চাচ্ছে আগে-ভাগে এসে নিজের কাপড়টি কিনে নিতে। এখন কিনতে না পারলে পরে আর দর্জিরা পোশাক তৈরি করতে চাইবে না।
কাপুড়িয়াপট্টির কাপড় ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক জানান, নতুন ডিজাইনের ছিট কাপড় সবাই চাইছে। ইতিমধ্যেই নতুন নতুন কিছু ছিট কাপড় এসেছে। এ বছর বাজারে নারীদের কাছে বিভিন্ন ডিজাইনের সুতির কাপড়, কম্পিউটার কাজ করা ফ্যাশানেবল জর্জেট, নেট, সিল্ক ও সুতির থ্রিপিসের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বাজারে বিদেশি কাপড়ের তুলনায় দেশি কাপড়ের দাম তুলনামূলক কম।
মর্ডান টেইলার্সের প্রোপাইটর রুহুল আমিন জানান, শবেবরাতের পর থেকেই পোশাকের অর্ডার আসছে। ভিড় বাড়ার আগেই ছিট কাপড় কিনে পোশাক বানানোর ঝামেলা সেরে ফেলতে চাইছেন আনেকে।
এবারের ঈদ বাজারে একসেট সুতি সালোয়ার কামিজের মজুরি ধরা হচ্ছে ৩শ’ থেকে ৩৫০ টাকা। শুধু সালোয়ার বানালে মজুরি ১৫০ টাকা। মেয়েদের অন্যান্য পোশাকের মজুরি ৪শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা। এদিকে পুরুষদের শার্টের মজুরি ৩৬০ টাকা, প্যান্ট ৪৬০ টাকা, পাঞ্জাবি ৩শ’ পাজামা ২শ’ ৫০ টাকা। কালেক্টরেট মার্কেটের আজিজ টেইলার্স এন্ড ক্লথ স্টোরের সত্ত্বাধিকারী আজিজুর রহমান জানান, তাদের এখানে শার্টের মজুরি ২৬০ টাকা প্যান্টের ৩৫০ টাকা। তবে একসঙ্গে দুটোর অর্ডার দিলে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা রাখা হচ্ছে।
কিছু শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ঈদের সময় সবাই চায় নিজের নতুন পোশাকে ঈদ করতে। নতুন নতুন ইস্টাইল, নতুন নতুন ডিজাইন, তাই রেডিমেড পোশাকের দোকানে একই নকশার অনেক পোশাক বানানো হয়ে থাকে। বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায়, সেখান থেকে কেনা পোশাকটির আর নিজস্বতা থাকে না।
এজন্য প্রতিবারই ঈদে নিজের পছন্দমতো টেইলার্স মালিকরা বলছেন, গ্রাহকদের থেকে তারা অর্ডার নিবেন ১৫ রমজান পর্যন্ত। তারা আরও জানান, পরিশ্রম একটু বেশি হচ্ছে, তবুও তারা খুশি। কারণ, ঈদের মৌসুমে বাড়তি কাজের অর্ডার হয়। এতে বাড়তি আয়ও করা যায়। রেডিমেট পোশাক অনেক সময় শরীরে ফিট হয় না।
এইচএম কথ স্টোরের বিক্রয় কর্মী লিটন বলেন , কাপড় ভেদে দামের তারতম্য আছে। এবছর সুতির কাপড়ের বেশী চাহিদা।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment