ধান চাষে আগ্রহ নাই কৃষকের লিজে দিচ্ছে পুকুর, অব্যধভাবে পুকুর খনন করছে প্রভাবশালীরা। একুশে মিডিয়া - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Thursday, 27 June 2019

ধান চাষে আগ্রহ নাই কৃষকের লিজে দিচ্ছে পুকুর, অব্যধভাবে পুকুর খনন করছে প্রভাবশালীরা। একুশে মিডিয়া


ডাঃ মোঃ হাফিজুর রহমান (পান্না), রাজশাহী:>>>
রাজশাহী জেলার পবা, মোহনপুর, গোদাগাড়ী, চারঘাট, দুর্গাপুর বাগমারা থানার প্রায় সব  বিলে অবৈধভাবে পুকুর খনন শুরু করেছেন অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
রাজশাহী জেলার প্রায় সব কয়টি থানার বিল গুলোতে কয়েকদিন থেকে দেখা গেছে, মোহনপুর থানার ধুরইলের বিলে এলাকার সদেরের ছেলে লিখন হোসেন, চান্দুর বিলে হাসান, পবা থানার পারিলা ইউনিয়নে রজব আলী, দারুশা বিলে আমিরুল ইসলাম  ভেকু মেশিনে বিলের প্রায় কেউ ২০ বিঘা থেকে শুরু করে ৭০ বিঘা পর্যন্ত ফসলি জমিতে পুকুর খনন করতে দেখা গেছে। জানা যায় স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মোহনপুর, পবা দারুশা, দুর্গাপুরের কোন বিলের জমিতে দুটি বা তার অধিক ভেকু মেশিনে দ্রুত পুকুর খননের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। জনাগেছে জেলা আওয়ামিলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন ধুরইল পিয়ার পুরের বিলে ও ধুরইল ডি এস কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক রাকিবুল ইসলাম ধুরইল পন্ডিত পাড়া বিলে, জয়নালের ছেলে রুবেল পিয়ারপুর বিলে ও কাঠ মিল বাবু ভড়ভড়িয়ার বিলে ও শরিফুল মাস্টার পিয়ারপুর বিলে, মোহনপুর থানার চান্দুর বিলে হাসান, দারুশা বিলে আমিরুল,  পুকুর খনন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এনিয়ে এলাকার কিছু কিছু কৃষক ও স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জমির বিভিন্ন মালিকের, কাছে প্রতিবছর বিঘা প্রতি ২০-২২ হাজার টাকা করে বছরে লিজ নিয়ে পুকুর খনন শুরু করেছেন।
একজন কৃষক নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, বিঘা প্রতি  ২০ থেকে ২২ মন ধান হয়, বছরে দুইবার ধান ধান উৎপান্ন হয়।  হিসাব করে দেখা যায় বিঘা প্রতি ৪০/২২ মন ধান উৎপাদন হয়। বর্তমান বাজার মূল্য ধরা হলে সর্র্বচ্চ ৬৮০ টাকা হলে আসে ২৭৬০০ টাকা নিজের মজুরি বাদ দিলাম খরচ হচ্ছে ৩৫/৩৬ হাজার টাকা তাহলে নিজের ঘর থেকে ৪/৫ হাজার টাকা লোকশান গুনতে হচ্ছে, তার পর শ্রমিক অভাব। প্রকৃতিক দুর্যোগতো আছে। তা হলে কি আমারদের বছরের ২২ টাকায় লিজে পুকুর দেওয়া অনেক ভাল। কোন চিন্তা করতে হচ্ছে না।
রাজশাহী জেলা মৎস্য দপ্তর হইতে জানা যায়, ২০১৭ সালে জেলায় মোট জলাশয়ের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ২৯৪ হেক্টর। এর মধ্যে বাণিজ্যিক মাছের খামার ছিল ৩ হাজার ৪৬২ হেক্টর। ২০১৮ সালে বাণিজ্যিক খামার গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৩০৯ হেক্টর। এখন জেলায় বাণিজ্যিক মাছের খামার ৪৩ হাজার ১৯৬টি।
রাজশাহী বিভাগীয় কর্মকর্তারা দপ্তর হইতে জানা যায়, ২০০৯ সালে জেলায় মাছের উৎপাদন ছিল ৫২ হাজার ১৭১ টন। ২০১৮ সালে তা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৮৯৯ টনে। এ ক’বছরে উৎপাদন বেড়েছে ৫৫ শতাংশের উপরে। চাষের পরিধি বৃদ্ধিসহ মৎস বান্ধব নানান কর্মসূচি বাড়িয়েছে উৎপাদন। তবে মাছ চাষের জন্য কি পরিমাণ আবাদি জমি কমছে সেই তথ্য নেই মৎস দপ্তরে কাছে। তবে হুহু করে বাড়ছে অপরিকল্পিত মাছের ঘের।
জমি লিজের টাকা পরিশোধ করে স্থানীয় প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে রাতের আধারে দ্রুত গতিতে পুকুর খনন কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিলের ফসলি জমি নষ্ট করে পুকুর খননের মহাউৎসবে মেতেছেন প্রভাবশালী ব্যাক্তরা।
স্থানীয় প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে এলাকার প্রভাবশালীদের যোগসাজোসে পুকুর খনন করছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। এর ফলে বিলে ফসলি জমি কমে যাওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ওপরও দীর্ঘমেয়াদি বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন স্থানীয় এলাকাবাসী। এলাকার লোকজন অবিলম্বে পুকুর খননকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
জানা যায়, অধিক লাভের আশায় গুটি কয়েক স্থানীয় প্রভাবশালী লোক পুকুর খনন করে মাছ চাষ করলেও কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করা হচ্ছে বলে স্থানীয়রা সচেতন ব্যাক্তরা অভিযোগ করছেন। শুধু রাজশাহীর মোহনপুরই নয়। গত দুই বছরে জেলার পবা, তানোর, দুর্গাপুর, পুঠিয়া, ও চাঘাট উপজেলাতে ও শত শত হেক্টও আবাদি জমি নষ্ট করে পুকুর খনন করা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের তেমন বড় ধরনের উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
এলাকার পুকুর খননকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। অবিলম্বে পুকুর খনন বন্ধের জন্য প্রশাসনকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
স্থানীয় কৃষিজীবীদের অভিযোগ, অবৈধ পুকুর খননের বিরুদ্ধে এলাকার ভুক্তভোগীরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না। আইনগত প্রতিকার পাচ্ছে না তারা।
উপজেলার জনসংখ্যা অনুযায়ী মাছের চাহিদার কথা জানতে চাইলে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রতি বছর অত্র উপজেলার মাছের চাহিদা ৩১০০ মেট্রিক টন। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন হয় ৪২০০ মেট্রিক টন মাছ। যা চাহিদার চেয়ে ১১০০ মেট্রিক টন বেশি। জনসংখ্যার চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত মাছ বিভিন্ন জেলায় যোগান দেয়া হয়।
মোহনপুর থানার ওসি মোস্তাক আহম্মেদ বলেন অবৈধ পুকুর খনন বন্ধের জন্য উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অতিরিক্ত পরিমাণ পুকুর খননের জন্য নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে এজন্য পুকুর খননের খবর পেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে বন্ধের নিন্দেশ দেয়া হলেও রাতের আঁধারে পুকুর কেটে শেষ করে। এছাড়াও পুকুর বন্ধ করলে কৃষকরা দাবী তুলে ভাল ফসল হচ্ছেনা, দাম পাচ্ছিনা এখানে পুকুর কাটতে দিতে হবে। আরো রয়েছে রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা।
মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সানওয়ার হোসেন বলেন, উচ্চ আদলতের রিট পিটিশন অগ্রাহ্য করে অবৈধভাবে পুকুর খনন বন্ধের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। খবর পেয়ে ইতোপূর্বে অনেক পুকুর খনন বন্ধ করা হয়েছে। নতুন কোনো পুকুর খননের অভিযোগ পেলে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সবশেষে বলতে চাই, রাজনৈতিক জবাবদিহিতা ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া এই অপরিকল্পিত পুকুরখনন কখনোই সম্ভব নয়। এছাড়াও জনসচেতনতা বৃদ্ধি খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। পুকুর খননে মাছের লাভের চেয়ে অনেক বেশী ক্ষতি হচ্ছে কৃষিজীবী ও পরিবেশের। স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের মদদেই অপরিকল্পিত পুকুর খননের মহোৎসব চলছে বলে জানিয়েছেন সচেতনমহল, পরিবেশবাদি ও ভুক্তভোগিরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের সমন্বয়কারি তন্ময় স্যানাল বলেন, প্রচলিত আইনে জমির শ্রেণি পরিবর্তনের সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সাপোর্ট করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ‘ওভাবে একতরফা কাউকে দোয়ারোপ করা যাবে না। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ নেতৃবৃন্দ ও সচেতন মহলের উচিত পুকুরখননের হাত থেকে এলাকাকে বাঁচানো। হাই কোর্টে রিট বিষয়ে তিনি তিনি বলেন ‘বিবাদীরা ভাল ভুমিকা রাখলে ভোক্তভোগিদের পক্ষেই রায় পাওয়া যাবে।





একুশে মিডিয়া/এমএসএ

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages