মধ্যপ্রাচ্য জয় করেছে রংপুরের টুপি। একুশে মিডিয়া - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Monday, 3 June 2019

মধ্যপ্রাচ্য জয় করেছে রংপুরের টুপি। একুশে মিডিয়া


রেখা মনি, রংপুর:>>>
ওমান, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, বাহরাইনসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে রংপুরের টুপি। প্রতিটি টুপি তৈরিতে খরচ পড়ছে  ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকা, বিক্রি ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকা।

সুঁই-সুতা থেকে চোখ যেন সরছেই না আরজিনাদের। আপন মনে টুপির ওপর নকশা তৈরি করছেন তাঁরা । ঈদকে ঘিরে নিপুণ হাতের স্পর্শে কারুকাজখচিত দৃষ্টিনন্দন টুপি তৈরিতে ব্যস্ত আরজিনার মতো দরিদ্র পরিবারের নারীরা। তারা টুপিতে সুঁই-সুতায় নানা আলপনা এঁকে ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনছেন। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার শহীদবাগ ইউনিয়নের সাব্দি গ্রাম ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
এখানকার বাড়িতে বাড়িতে নারীরা তৈরি করছেন বাহারি নকশার কারুকাজখচিত টুপি। দামি কাপড়ে বাহারি ডিজাইনে তৈরি এসব টুপি বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
এ অঞ্চলে বর্তমানে বেকার দুস্থ নারীদের নিয়ে সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা ছাড়াই বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে ছোট ছোট কারখানা দিয়ে চালাচ্ছেন টুপি শিল্পের এই বৃহৎ কর্মযজ্ঞ। এতে করে কর্মসংস্থানে যুক্ত হয়েছে এক সময়ের বন্যাকবলিত তিস্তাপারের হতদরিদ্র হাজার হাজার নারী। এখন কাউনিয়া, পীরগাছা ও গঙ্গাচড়া উপজেলার নারীরা টুপির কারিগর হিসেবে বেশ পরিচিত। পিছিয়ে নেই রংপুর অঞ্চলের অন্য জেলার নারীরাও।
হরিশ্বর গ্রামের মরিয়ম, মোর্শেদা, ফুলচানসহ অনেকেই বলেন, ‘একটা টুপির গুটির সেলাইয়ের কাম করলে পাওয়া যায় ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা, এ্যালা হামাক আর না খ্যায়া থাকা নাগে না।’ একইভাবে কাউনিয়ারচর ঢুষমারা, চর হয়বত খাঁ, নাজিরদহ চর, পল্লীমারী চর, গদাই, পাঞ্জর ভাঙ্গার চর, গোপীভাঙ্গা, প্রাণনাথ চরসহ তিস্তা নদীর কোলঘেঁষা ২৪টি চরের হতদরিদ্র পরিবারের নারীরা অবসরে টুপি তৈরির কাজে বাড়তি আয় করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন, পেয়েছেন সুখের ঠিকানা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০২ সালে প্রথম মধ্যপ্রাচ্যে হস্তশিল্পের কারুকাজখচিত টুপি রপ্তানি শুরু করেন চট্টগ্রামের হালিশহরের আব্দুল খালেক ভূঁইয়া। তাঁরই প্রেরণায় টুপি তৈরির কাজে এগিয়ে আসেন কাউনিয়ার খোপাতি গ্রামের বাসিন্দা হাফেজ আব্দুল আউয়াল। জমি বন্ধক রেখে লেগে পড়েন তিনি টুপি তৈরির কাজে। চট্টগ্রামের হালিশহর এবং ফেনীর রাজাপুর থেকে রেশমী ও গুটি সুতা কিনে এনে নিজ বাড়িতে ৯-১০ জন নারীসহ স্বল্প পরিসরে টুপি তৈরি শুরু করেন। ২০০৬ সালে হাফেজ আব্দুল আউয়াল কাউনিয়ায় এমএমসি টুপি তৈরির কারখানা স্থাপন করেন। বর্তমানে ওই টুপি কারখানায় রয়েছে বেশ কয়েকটি সেলাই মেশিন। কারখানায় ৭৯ জন কর্মী আছেন। এ ছাড়া পরোক্ষভাবে টুপিতে গুটির সেলাইয়ের কাজে নিয়োজিত থেকে অভাবের সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন প্রায় ১৫ হাজার নারী।
মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে পাকিস্তানি টুপি শীর্ষস্থান দখল করে রাখলেও  রংপুর অঞ্চলের দৃষ্টিনন্দন বাংলাদেশি টুপি ওমান, কুয়েত, কাতার, সৌদি ও বাহরাইনসহ বিভিন্ন দেশে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি করেছে। রপ্তানিযোগ্য এ শিল্পের বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্য নিয়ে কাউনিয়ার সাব্দি গ্রাম থেকে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমিয়েছেন অনেকেই। তাঁদের একজন জহিরুল ইসলাম জহির, যিনি ওমানে থেকে তাঁর স্ত্রীকে নিয়মিত দিকনির্দেশনা দিয়ে টুপি রপ্তানির ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।
জহিরের স্ত্রী ফারজানা শারমিন বলেন, ‘কর্মী ও এজেন্টদের মাধ্যমে আমরা টুপি তৈরি করে নিচ্ছি। কর্মীদের বাড়ি বাড়ি সুতাসহ টুপি দিয়ে আসি নকশা করার জন্য। প্রতি পিস টুপিতে নকশা করার জন্য তারা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পেয়ে থাকেন। প্রতি মাসে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টুপি ওমানে পাঠানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি জানান, মান, আকার ও প্রকারভেদে একেকটি টুপি তৈরিতে খরচ পড়ছে ৭০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এসব টুপি ৯০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এই টুপিশিল্পের সঙ্গে জড়িতরা মনে করছেন সরকারিভাবে সহায়তা পেলে হস্তশিল্পের আরো সম্প্রসারণ করতে পারবেন তাঁরা। একই সঙ্গে রপ্তানি খাতে বাড়বে আরো বেশি বৈদেশিক অর্জন।
কাউনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মায়া বলেন, এখানকার তৈরি টুপি বিদেশে রপ্তানি হয় বিষয়টা ভাবতে ভালো লাগে। টুপি তৈরি করে এলাকার হতদরিদ্র পরিবারগুলোর সচ্ছলতা ফিরে আসছে।




একুশে মিডিয়া/এমএ

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages