উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:>>>
নড়াইলে দালাল ও ঘুষ ছাড়াই প্রকৃত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরাই পুলিশে চাকরি পাবেন- এমন ঘোষণা দিয়েছেন নড়াইলের পুলিশ সুপার মোঃ জসিম উদ্দিন, পিপিএম (বার)। রবিবার (২৩ জুন) সকাল ১০টায় নড়াইল জেলা পুলিশ লাইন অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক ব্রিফিং এ একথা জানান তিনি।
এ ব্রিফিং এ অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ শরফুদ্দীন, নড়াইলের চারটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাবৃন্দ, নড়াইল জেলা গোয়েন্দা শাখা ও বিশেষ শাখার কর্মকর্তাবৃন্দসহ নড়াইল জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যবৃন্দ।
জানা গেছে, চাকরির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আর সততার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। চলতি মাসে শুরু হতে যাওয়া প্রায় ১০ হাজার পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণভাবে ঘুষ-দুর্নীতিমুক্ত রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। কেবল যোগ্যতার ভিত্তিতেই ৩ টাকা মূল্যের একটি ফরম ও ১০০ টাকার ব্যাংক ড্রাফট করলেই সোনার হরিণের মতো মিলবে পুলিশ কনস্টেবলের চাকরি।
এ কনস্টেবল নিয়োগে প্রক্রিয়ায় সততা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখার লক্ষ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে একাধিক বৈঠকসহ সারা দেশের সব জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। ইতোপূর্বে পুলিশে চাকরি মানেই লাখ লাখ টাকার ঘুষ লেনদেনের বিস্তর অভিযোগ ছিল।
দালালচক্র, কিছু প্রভাবশালী বা রাজনীতিকদের তদবির এবং এক শ্রেণির পুলিশ সদস্যরাও কনস্টেবল নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্যে লিপ্ত থাকে বলে প্রায় অভিযোগ উঠেছে। তবে এবারে সাধারণ মানুষের মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে ধারণা পাল্টে দিতে ঘুষ ও তদবিরবিহীন চাকরির দৃষ্টান্ত স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করেছে নড়াইলের পুলিশ সুপার।
ইতোমধ্যেই নড়াইলের পুলিশ সুপারের উদ্যোগে মাইকিংসহ নানা প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। চাকরির নামে ঘুষ লেনদেন হলে গ্রেফতারের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। এমনকি চাকরি দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়কারী দালাল ও প্রতারকদের ধরতে চাকরিপ্রার্থী সাজিয়ে ফাঁদ পাতা হচ্ছে। যে বাহিনীতে নিয়োগ, বদলিসহ যেকোনো কাজেই ঘুষ-দুর্নীতি অতি পরিচিত শব্দ সেখানে সম্পূর্ণ ঘুষমুক্ত চাকরির উদ্যোগের বিষয়টি ইতোমধ্যেই সাড়া ফেলেছে বলে জানা গেছে।
এ ছাড়াও এই নিয়োগ পর্বে পুলিশ সদর দফতর থেকে জেলায় জেলায় একটি করে পর্যবেক্ষক দল পাঠানো হবে। এ ব্যাপারে নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, পিপিএম (বার) বলেন, বাংলাদেশ পুলিশকে জনবান্ধব বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে এবারে নড়াইলে কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়াটি শতভাগ স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করতে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নড়াইল জেলা পুলিশকে এ বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়াও হয়েছে। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। তিনি আরও বলেন, বিনা পয়সায় চাকরি হবে পুলিশে। কোনো ঘুষ চলবে না। শতভাগ স্বচ্ছতার মাধ্যমে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ দেওয়া হবে। কোনো দালাল, সিন্ডিকেট চক্র, পুলিশ সদস্য, ভায়া কিংবা কারও মাধ্যমে পুলিশে নিয়োগের ব্যাপারে আর্থিক লেনদেন হলে আমাকে (এসপি) জানাবেন। তাৎক্ষণিক তাদের গ্রেফতার করব। ৩ টাকা মূল্যের একটি ফরম ও ১০০ টাকার ব্যাংক ড্রাফট করলেই মিলবে পুলিশ কনস্টেবলের চাকরি। যারা পুলিশে চাকরি নিতে আসেন তারা প্রান্তিক ও গরিব।
তাদের পারিবারিক অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। অন্যদিকে ঘুষ ও তদবির ছাড়া শুধু সরকার নির্ধারিত ফি ১০০ টাকায় পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগের প্রচারণা চলে আসছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ চাকরির নামে টাকা আদায়কারী দালাল-প্রতারকদের ধরতে নানা ধরনের ফাঁদ পাতা হয়েছে। আমরা কিছু চাকরিপ্রার্থী সাজিয়ে দালালদের ধরতে বা শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে ধরতে পারিনি।
এ ছাড়াও সাংবাদিকসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষদের এ বিষয়ে সজাগ ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। কোথাও এমন কোনো খবর পেলে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। ঘুষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা চাচ্ছি পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment