আল আমিন মুন্সী:>>>
সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসবাস করার নামেই পরিবার। সন্তানদের নিয়ে তিল তিল করে একটি সুন্দর পরিবার গড়ে তুলেন মা-বাবা। পরিবারের প্রতিটি সদস্য সুখে-শান্তিতেই থাকতে চায়: কিন্তু সে সুখ সবার কপালে সইলেও কেউ কেউ পরিবারের সেই বন্ধনটা পায় না।
এজন্য নানা কারণে আপন নিবাস ছেড়ে যেতে হয় পরিবারের সবচেয়ে বয়সী মানুষটিকে। মরিয়ম বেগম। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। লাঠিতে ভর দিয়ে কোন রকমে হাঁটতে পারেন। বয়স প্রায় একশ’।
ছেলে-মেয়ে থাকার পরও স্বামীহারা এই বৃদ্ধা মার মাথা গোঁজার ঠাই হয়েছে অন্ধকার একটি ভাঙা টিনের ঘরে। ঘরের ভিতর একটি পুরোনো তোষক, আর দুই চারটি থালা বাসন ছাড়া আর কিছুই নেই। আর এই অন্ধকার ঘরেই একা একা দিন পার করছেন এই বৃদ্ধা মা। মনের ইচ্ছে ছিল ছেলে মেয়ে নাতি-নাতনি নিয়ে জীবনের বাকিটা সময় সুখে শান্তিতে পার করবেন। কিন্তু সেই সুখ যেন এই বৃদ্ধা মায়ের কপালে নেই।
একমাত্র ছেলের স্ত্রীর কথায় তাকে রেখে গেছে অন্ধকার একটি টিনের ভাঙা ঘরে। অথচ ওই ঘরের ৫০০ মিটার দূরেই রয়েছে ছেলের তিনতলা একটি বিশাল অট্ট্রালিকা। এই হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল ৩ নং ওয়ার্ডে। মরিয়ম বেগমের এক ছেলে এক মেয়ে। স্বামী প্রায় ২০ বছর পূর্বে মারা যায়।
বড় ছেলে কিরণ শিকদার স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা। এছাড়া সাজ ডেকারেটর নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার। পলাশ বাজার এলাকায় তিনতলা একটি নিজেস্ব ভবনে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি বসবাস করেন। গত রমজান মাসে নতুন বাজার এলাকার গফুর মিয়ার ভাঙা একটি টিনের ঘরে এই বৃদ্ধা মাকে রেখে যায় ছেলে কিরণ শিকদার। মাঝে মধ্যে এসে কিছু বাজার সদাই করে দিয়ে যায়। বৃদ্ধা মরিয়ম বেগমের প্রয়োজনীয় কাজ গুলো করে দিচ্ছেন পাশের ভাড়াটিয়ারা।
মরিয়ম বেগমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ছেলের বউ আমাকে তাদের সাথে রাখতে চায় না। তাই আমাকে এখানে রেখে গেছে। ছেলে মাঝে মধ্যে এসে আমাকে বাজার সদাই করে দিয়ে যায় তাই দিয়েই দিন পার করছি। একা একা এখানে থাকতে ভাল লাগে কি না জিজ্ঞাস করলে তিনি জানান, জীবনের শেষ মুহুর্তে এসে অনেক কিছু চাওয়া-পাওয়ার থাকলেও কিছুই করার নাই।
আমার অনেক ইচ্ছে ছিল জীবনের শেষ সময়ে ছেলে সন্তান, নাতি-নতনিকে নিয়ে হাসি খুশিতে দিন পার করবো। কিন্তু কি করার আছে আমার কপালে সেই সুখ নাই। আমার ছেলের ইচ্ছা থাকলেও সে তার স্ত্রীর জন্য পারে না। আমাকে তাদের সাথে রাখার কথা শুনলে তার স্ত্রী লিপি আক্তার ছেলের সাথে ঝগড়া করে। এখানে আসার আগে চলনা এলাকার গ্রামের বাড়িতে একা একা দিন পার করেছি। তারপর ছেলে বললো আমাকে তার কাছে নিয়ে আসবে।
ভাবছিলাম তার বাড়িতে তুলবে। পরে দেখি সে আমাকে এখানে ঘর ভাড়া করে দিয়েছে। এখানে ছেলে এসে খোঁজ-খবর নিলেও ছেলের বউ নাতি-নাতনিরা কেউ-ই আসে না। কোন খোঁজ-খবরও নেয় না। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর সেও তেমন কোন খোঁজ-খবর নেয় না। আমি এখন সন্তানদের মাঝে বোঝা হয়ে গেছি। মাঝে-মধ্যে অনেক একাকিত্ব লাগলে পাশের ভাড়াটিয়াদের সাথে কথা বলে সময় পার করি। মরিয়ম বেগম আরো বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছি। চিকিৎসা না করায় প্রায় ১০ বছর আগে বাম পাশের চোখটি নষ্ট হয়ে যায়। এখন ডান পাশের চোখটিও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। হয়তো এটিও নষ্ট হয়ে যাবে।
দিনা বেগম নামে পাশের এক ভাড়াটিয়া জানান, রমজান মাসে বৃদ্ধা মাকে তার ছেলে এখানে রেখে গেছেন। শুয়ার জন্য ঘরে ছোট একটি ভাঙা চৌকি দিয়েছিল। সেটিও ছাড়পোকার খাওয়া। তাই এটিও নাই এখন। মরিয়ম বেগম এখন মাটিতে বিছানা করে ঘুমায়। এমন একজন বৃদ্ধা মাকে এভাবে একা এই অন্ধকার ঘরে রাখা খুবই অমানবিক। শুনেছি ছেলের বউ নাকি তাদের কাছে রাখতে চায় না। বউয়ের কথায় এখানে বৃদ্ধা মাকে ফেলে গেছে। মরিয়ম বেগমের রান্নাবান্না, কাপড়চোপড় ধোয়া এসব আমরাই করে দেই।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment