এম এ হাসান, কুমিল্লা:>>>
প্রায় ৪ বছর ধরে ছিলেন পলাতক। ৩০০ কোটি টাকার ও বেশী অর্থ নিয়ে হয়েছিলেন নিখোঁজ। দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক ও বিভিন্ন গ্রাহকের করা মামলার পরিমাণ ২৮ টি।
বলতেছিলাম কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাসিন্দা শামীম কবির এর কথা।এফআইসিএল শামীম নামে সর্বজন পরিচিত এই শামীম কবির কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম সহ বিভিন্ন জেলায় ধর্মকে পুঁজি করে কতিপয় ধর্মভীরু ও স্বল্প শিক্ষিত লোকজনকে আল্লাহর বাণী শুনিয়ে এবং পবিত্র কোরআন শরীফসহ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে সুসজ্জিত অফিসে দাওয়াত দিয়ে তাদের সমিতিতে টাকা বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করেন।
এমনকি পাড়ায় পাড়ায় ওয়াজ-মাহফিল করে নিজেকে ধর্মের বরপুত্র হিসেবে দাবি করতেন ফারইস্ট ইসলামী মাল্টি কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের (এফআইসিএল) চেয়ারম্যান এবং মালিক শামীম কবির।তিনি বিনিয়োগকৃত প্রতি এক লাখ টাকায় প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা, কোন কোন ক্ষেত্রে দুই হাজার পাঁচশ টাকা হারে মুনাফা দেওয়ার কথা বলে লিফলেট প্রচার করেন এবং পত্র-পত্রিকায় লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে অধিক সংখ্যক গ্রাহক সংগ্রহ করতে থাকেন।
মানি লন্ডারিং সহ ২৮টি মামলার পলাতক এই আসামিকে চার বছর পর আটক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ফারইস্ট ইসলামী মাল্টি কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান শামীম কবির মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে তা আর ফেরত দেয়নি।তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং সহ ২৮টি মামলা রয়েছে। সে চার বছর ধরে পলাতক ছিল।
৯ জুলাই সিলেটের জৈন্তাপুর থানা এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।মোল্যা নজরুল বলেন, শামীম কবির ফারইস্ট ইসলামী মাল্টি কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি. (এফআইসিএল) নামে একটি সমিতির আবেদন করে কুমিল্লা জেলা সমবায় কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে অনুমোদন নেন।অনুমতি পাওয়ার পর তিনি তার নিকট আত্মীয়সহ স্থানীয় কিছু যুবকদের নিয়ে কুমিল্লা জেলার অর্ন্তগত নিজ উপজেলার চৌদ্দগ্রামের মুন্সিরহাট বাজারে একটি অফিস খুলে কার্যক্রম শুরু করেন।
পরবর্তীতে সমিতিটি মুন্সিরহাট অফিসের নিবন্ধন সংশোধন করে থানা থেকে জেলা পর্যায়ে এবং পরে চট্রগ্রাম বিভাগের অনুমোদন নিয়ে কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন জায়গায় শাখা অফিসের অনুমোদন নেন।তিনি মূলত ধর্মকে পুঁজি করে কতিপয় ধর্মভীরু ও স্বল্প শিক্ষিত লোকজনকে আল্লাহর বাণী শুনিয়ে এবং পবিত্র কোরান শরীফসহ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে সুসজ্জিত অফিসে দাওয়াত দিয়ে তাদের সমিতিতে টাকা বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করেন।
এমনকি পাড়ায় পাড়ায় ওয়াজ মাহফিল করে নিজেকে ধর্মের বরপুত্র হিসেবে দাবি করেন।সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, শুরুর কয়েক বছর ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ওয়াদা অনুযায়ী মুনাফা পরিশোধ করে গ্রাহক সংগ্রহ করেন। কয়েক বছর লাভজনক মুনাফা পেয়ে সাধারণ মানুষ নিজের বহু কষ্টে অর্জিত টাকা ফারইস্ট ইসলামী মাল্টি কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডে এ জমা রাখতে শুরু করেন।
বেশী মুনাফার আশায় কেউ কেউ অন্য জায়গা থেকে টাকা পয়সা ধার করে এনে, জমি জমা বিক্রি করে সমিতিতে টাকা রাখতেন। কোন কোন সরকারি-বেসরকারি কর্মচারী পেনশনের টাকাও দ্বিগুণ-তিনগুণ করার প্রলোভনে সমিতিতে জমা রাখেন।বিভিন্ন রকম ছলচাতুরি করে শামীম ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকায় প্রায় ২৫টি অফিস খুলে আমানত সংগ্রহ করেন।
এতদিনে প্রায় প্রায় ২০ হাজার গ্রাহকের কাছে তিনশ কোটি টাকা তুলে তা আত্মসাত করেন।২০১৩-১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে কৌশলে আত্মগোপন করেন। এরপর আবার কৌশলে দেশে আত্মগোপনে থেকে প্রচার করেন যে সমিতির চেয়ারম্যান মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন।
শামীম কবিরের দেয়া তথ্য মতে, আত্মসাতকৃত বিপুল পরিমান অর্থ দিয়ে তার নিজ গ্রাম ও সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকায় প্রাসাদসম বাড়ি এবং কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, সদর দক্ষিণ, নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজার, গাজীপুরের কালিগঞ্জ, কক্সবাজার জেলার উখিয়া, চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ডসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে প্লট, ফ্লাটসহ বিপুল পরিমান ভু-সম্পত্তি ক্রয় করেছেন।
সবমিলিয়ে যার পরিমাণ প্রায় চার হাজার শতাংশ বা ৪০ একর; যা নিজ নামে কিনে স্থানান্তর বা রুপান্তরের মাধ্যমে হস্তান্তর করেছেন।
২০১৫ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ১৩টি মামলা রুজু করে যা বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment