মোঃ
জাকির হোসেন, জেলা প্রতিনিধি:>>>
ঢাকার নবাবগঞ্জে কৈলাইলের একটি রাস্তা
মেরামতের জন্য কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ এর
অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগ নামমাত্র কাজ করে প্রকল্পের
টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন উপজেলার কৈলাইল ইউনিয়নের জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক
সম্পাদক নুর ইসলাম। প্রায়২ বছরেও রাস্তাটির কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ
করেছে এলাকাবাসী। অন্যদিকে প্রকল্পের সভাপতির দাবি কত টাকার প্রকল্প এসেছে
তা তিনি অবগত নন। নুর ইসলাম কৌশলে তার ছবি, আইডি কার্ড এবং স্বাক্ষর নিয়ে
প্রকল্পের টাকা উঠিয়ে নিয়েছে।
তবে অভিযুক্ত নুর ইসলাম জানান, তিনি প্রকল্পের প্রায় ৭০ ভাগ কাজ সম্পূর্ণ করেছেন। তবে মাটি না পাওয়ায় ৩০ ভাগ কাজ এখনো বাকি আছে।
এলাকাবাসীর
সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কৈলাইল ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের নয়াকান্দা
পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদ থেকে সবুরউদ্দিন শাহ পাগলার মাজার পর্যন্ত রাস্তাটি
মাটি ভরাট করে মেরামতের জন্য কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের
মাধ্যমে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য
(৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড) রহিমা বেগমকে সভাপতি করে প্রকল্পটি নেন জাতীয় পার্টির
নেতা নুর ইসলাম।
সরেজমিনে
গিয়ে দেখা যায়, নামমাত্র কাজ করেছে নুর ইসলাম। রাস্তাটির দুই পাশে কিছু
বাঁশ দিয়ে বাঁধ দেওয়া ও সামান্য কিছু মাটি ফেলে প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে
জাতীয় পার্টির নেতা নুর ইসলাম। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাটিতে জলাবদ্ধতা
সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এছাড়া রাস্তা মেরামতের কথা বলে
স্থানীয়দের কাছ থেকে নুর ইসলাম টাকা নিয়েছেন করেছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়
বাসিন্দারা। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখনো রাস্তাটি পূর্বে যে অবস্থায়
ছিল সেই অবস্থাই রয়েছে।
স্থানীয়
বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, রাস্তা করার জন্য আমার বসতবাড়ির
পাশ থেকে মাটি কেঁটে নিয়েছে নুর ইসলাম। এছাড়া রাস্তার কথা বলে ৬ হাজার
টাকাও নিয়েছেন তিনি। কিন্ত রাস্তাটি আর হলো না। আমরা কত কস্টে আছি তা
একমাত্র আমরাই জানি।
একই
এলাকার চাঁন মিয়া বলেন, ৯নং ওয়ার্ডের ৬০% বেশির ভাগ মানুষের বসবাস এখানে।
রাস্তাটির কারনে প্রায় ১০০টি পরিবারকে চরম দুর্ভোগে বসবাস করতে হচ্ছে।
এছাড়া সুবান পাগলার মাজারে প্রতিবছর ঔরসের সময় প্রায় ২০/৩০ হাজার
ভক্তবৃন্দের আগমন ঘটে এখানে। রাস্তাটির কারনে তাদেরকে দুর্ভোগে পড়তে হয়।
গৃহবধূ
হাসিনা বেগম বলেন, আমরা খুব কস্টে জীবন কাটাচ্ছে। বৃষ্টি এলে বাজারে যেতে
পারি না। পানিতে রাস্তাটি তলিয়ে যায়। বাঁশের পুল দেওয়া হলেও সেটি ভেঙে
অনেকে আহত হওয়ায় ঘটনাও ঘটেছে।
আসমা
নামে আরেক গৃহবধূ বলেন, শুনেছি রাস্তাটির জন্য প্রকল্প এসেছিল। কিন্ত
রাস্তাটি আর হলো না। রোদ উঠলে একটু যাওয়া যায়, তাছাড়া চলাচল অসম্ভব। সালমা
ইসলাম রাস্তাটি করে দিবে বলে কথা দিয়েছিলেন কিন্ত রাস্তা তো হলো না। তার
কথার প্রতিবাদ করে পাশ থেকে কয়েকজন বলে উঠেন, সালমা ম্যাডামের কি দোষ। তিনি
তো বরাদ্দ দিয়েছিলেন। কিন্ত নেতা কাজ না করলে ওনার কি করার আছে। আসলে এসব
নেতাদের কারনে সালমা ম্যাডামের দুর্নাম হয়েছে
স্থানীয়
বাসিন্দা কৈলাইল ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান ক্ষোভ
প্রকাশ করে বলেন, রাস্তা মেরামতের কথা বলে সরকারী প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ
করা খুব জঘন্য অপরাধ। রাস্তাটি এলাকাবাসীর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। অথচ নুর
ইসলাম পুরো প্রকল্পের টাকাই আতœসাৎ করে দিল। এছাড়া স্থানীয়দের কাছ থেকেও
রাস্তার কথা বলে টাকা উঠিয়েছেন তিনি। সাবেক ইউএনও তোফাজ্জল হোসেন এব্যাপারে
নুর ইসলামকে ডেকে কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য বললেও নুর ইসলাম সেই কথায়
কর্ণপাত করেনি।
প্রকল্পের
সভাপতি ইউপি সদস্য রহিমা বেগম বলেন, আমি প্রকল্পের সভাপতি এটা আমিই জানতাম
না। নুর ইসলাম আমার কাছে এসে ছবি, আইডি কার্ড আর স্বাক্ষর নিয়ে গেছে। কত
টাকার প্রকল্প এসব আমি কিছুই জানি না। আমি নুর ভাইকে বারবার কাজটি করার
জন্য বললেও তিনি কাজটি করেনি। ২০১৮ সালের রোজার ঈদের আগে নুর ভাই আমাকে কাজ
বাবদ মাত্র ৫ হাজার টাকা জোর করে দিয়েছিলেন।
এব্যাপারে অভিযুক্ত নুর ইসলাম বলেন, আমি প্রায় ৭০ ভাগ কাজ সম্পূর্ণ করেছি। রাস্তাটি পুরো পুকুর ছিল আমি মাটি ফেলেছি।
তবে
সাবেক ইউপি সদস্য তোতা মিয়া বলেন, যে রাস্তাটি মেরামতের জন্য প্রকল্প আনা
হয়েছে সেটি এক সময় হালট ছিল। ২০১৩/১৪ সালে মাটি ফেলে চলাচলের রাস্তাটা করে
দেই। এরপর রাস্তাটি আর প্রসারিত হয়নি।
এব্যাপারে
নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. হাসান আহমেদ বলেন, আমি
এখানে নতুন এসেছি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment