মোঃ
জাকির হোসেন, জেলা প্রতিনিধি:>>>
ঢাকার নবাবগঞ্জের শোল্লা ইউনিয়নের রূপারচর
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা পাঠদান করছেন একটি নড়বড় ঘরে।
বিদ্যালয়ের
ভবন হবে, শিক্ষার্থীরা সুযোগ পাবে এ আশায় বুক বেঁধে বিনা বেতনে শিক্ষকতা
করছেন বিদ্যালয়ের ৭জন শিক্ষক।জাতীয়করণের আশায় পাঠদান চালালেও আদৌ হবে কিনা
তা নিয়ে হতাশ শিক্ষক ও অভিভাবকরা। জীবনযাত্রার ঊর্ধ্বগতিতে বেতন না পেয়ে
মানবেতর জীবনযাপন করছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
জানা
যায়, নবাবগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল রুপারচরে ১৯৯১ সালে এলাকাবাসীর সহযোগিতায়
প্রতিষ্ঠিত হয় রূপারচর প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বাংলা মদের গ্রাম হিসেবে
পরিচিত রূপারচরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ হওয়ায় নিরক্ষরতার হাত থেকে
মুক্তি পাবে এমন আশার বুক বাঁধে এলাকার সাধারণ মানুষ। তবে ১৯৯৭ সালে হঠাৎ
বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যালয়টি। শিক্ষা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ছোট ছোট শিশুরা।
২০১২ সালের দিকে নবাবগঞ্জের রূপারচর ও পাশ্ববর্তী মানিকগঞ্জ জেলার
নিলম্বরপট্টিসহ আশেপাশের শিশুদের শিক্ষায় এগিয়ে আসে বেসরকারী সংগঠন
ব্র্যাক। ব্র্যাকের শিক্ষাকতা করতেন রূপারচরের বাসিন্দা রূপা আক্তার। ২০১৩
সালে রূপা আক্তার ও তার স্বামী জিয়াউর রহমান মিলে রূপারচর প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের পরিত্যাক্ত ভবনে পুনরায়-প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষা
কার্যক্রম শুরু করেন। তাদের কার্যক্রমে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন স্থানীয়
ইউপি সদস্য খালেদ রেজা ও দেওয়ান আবু সাঈদের মত সুশীল সমাজ। তবে এবারও
বাঁধার সম্মূখিন হতে হয় তাদের। তবে সব বাঁধা উপেক্ষা করে দেওয়ান আবু সাঈদকে
সভাপতি করে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ গঠন করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর
থেকে টিনশেডের স্কুল ভবনটি অর্থাভাবে আর সংস্কার করা হয়নি। ঘরটি ভাঙা। ফলে
শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পাঠদান কার্যক্রম চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এছাড়া
বিদ্যালয়ের আসবাবপত্রের চরম সংকট। চেয়ার-টেবিল-বেঞ্চগুলো নড়বড়ে।
শিক্ষার্থীদের জন্য নেই সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা।
এমনকি নেই বিদ্যুৎ সংযোগও। অধিকাংশ শিক্ষার্থী হতদরিদ্র পরিবারের হলেও
সরকারি উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত তারা।
বর্তমান
বিদ্যালয়ে প্রায় ২শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য ৭জন শিক্ষক কর্মরত আছে। ২০১৮
সালে প্রথম বার সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং পাশের হার শতভাগ। শিক্ষা
মান বৃদ্ধিতে কঠোর পরিশ্রম করলেও বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
অভিভাবক
জালাল উদ্দিন জানান, ‘আশপাশে কোনো বিদ্যালয় না থাকায় আমাদের ছেলেমেয়েরা এ
বিদ্যালয়ে পড়ে। শিক্ষকরা ভালো পড়ান। কিন্তু বিদ্যালয়ের ঘরটি ভাঙা এবং
টিউবওয়েল নেই।’
বিদ্যালয়ের
সহকারী শিক্ষক মনিরা ইয়াসমিন ও জিয়াসমিন আক্তার জানান, ঢাকার নবাবগঞ্জের
শেষ প্রান্তে রূপারচর প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অবস্থিত। রূপারচর ছাড়াও
মানিকগঞ্জের নিলম্বরপট্টি, চরফেতপুর, বান্দাইল গ্রামের ছেলে মেয়েরা পড়াশুনা
করে এই বিদ্যালয়ে। আশেপাশে প্রায় ৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোন বিদ্যালয় না
থাকায় দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা এখানেই পড়ে। তবে সরকারী না হওয়ায় অনেকে
তাদের সন্তানকে এ বিদ্যালয়ে দিতে চায় না।
বিদ্যালয়ের
প্রধান শিক্ষিক সাইফুল ইসলাম জানান, প্রায় ৭ বছর ধরে সম্পূর্ণ বিনা বেতনে এ
বিদ্যালয়ে কোমলমতি শিশুদের পাঠদান করে আসছি। বিদ্যালয়ের নানাবিধ সমস্যার
মাঝেও পাঠদান অব্যাহত রেখছি। আমরা সাতজন শিক্ষক অনেকটা মানবেতর জীবনযাপন
করছি। তবুও শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হতে দিব না। তবে জাতীয়করণের জন্য সরকারের
প্রতি দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে বিদ্যালয়ের বেঞ্চসহ নানা সমস্যা রয়েছে।
বিদ্যালয়ের
সভাপতি দেওয়ান আবু সাঈদ বলেন, বিদ্যালয়টির অবস্থা খুবই নাজুক। শোল্লা ইউপি
চেয়ারম্যান দেওয়ান তুহিনুর রহমান ও নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান
নাসিরউদ্দিন আহমেদ ঝিলু বিদ্যালয়টি সংস্কার জন্য কিছু অনুদান দিয়েছে। যা
দিয়ে আমরা আরেকটি টিনের ঘর নির্মাণের চেষ্টা করছি, কিন্ত অর্থের অভাবে শেষ
করতে পারছি না। শিক্ষকরা কোন পারিশ্রমিক ছাড়াই শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন।
বিদ্যালয়টি সরকারীকরণের দাবি জানাচ্ছি।
এব্যাপারে
নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিকা শিক্ষা কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বলেন,
বিদ্যালয়টি নবাবগঞ্জের সীমানাবর্তী এলাকায়। সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য
বিদ্যালয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সহযোগিতার জন্য বিদ্যালয়টিকে একটি
প্রকল্পের আওত্বায় আনা চেষ্টা করছি। এছাড়া বিভিন্ন সময় আমাদের পক্ষ থেকে
সার্বিক সহযোগিতা করা হয়।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment