রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ দুুই গ্রুপে বিভক্ত ! - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Wednesday 4 September 2019

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ দুুই গ্রুপে বিভক্ত !


ডাঃ মোঃ হাফিজুর রহমান (পান্না) , রাজশাহী:>>>
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা। সভাপতি-সম্পাদকের বাকযুদ্ধ এখন প্রকাশ্যে, তুমোল পর্যায়ে।
এ নিয়ে তৃণমূল পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে কোন্দল। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেন তানোর-গোদাগাড়ী আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। আর সাধারণ সম্পাদক আসাদাজ্জামান আসাদ। এই দুই নেতার দ্বন্দে¦ মূলত জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিরাজ করছে অচলাবস্থা। তবে সাধারণ সম্পাদক একাই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে। এসব কর্মসূচিতে দেখা যায় না সভাপতিকে। উল্টো কর্মসূচি পালনকালে সভাপতি ফারুক চৌধুরীকে রাজাকারপুত্র বলেও সমন্ধন করেছেন সাধারণ সম্পাদক আসাদ। এ কারণে ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে রাজনীতি করা যায় না বলেও ঘোষণা দেন আসাদ।
অন্যদিকে পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক কর্মসূচির নামে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত। ওসব কর্মসূচি কিভাবে হয়, তা রাজশাহীর মানুষ সবই জানেন। এ কারণে তাঁর সঙ্গে সেসব কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করিনা। তিনি সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ তৈরী হয়েছে।’
এদিকে ফারুক চৌধুরীকে নিয়ে সম্প্রতি একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজশাহী-২ (সদর) আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশার সঙ্গেও প্রকাশ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে দুই এমপির মধ্যে। ফারুক চৌধুরী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালিন ফ্রিডম পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে মন্তব্য করেন। এর জন্য এমপি ফজলে হোসেন বাদশাকে আইনি নোটিশ প্রদানও করেছেন  এমপি ফারুক চৌধুরী। ওই নোটিশের পাশাপাশি ফারুক চৌধুরী তাঁর নির্বাচনী এলাকায় ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে দলের একটি অংশের নেতাকর্মীদের দিয়ে সমাবেশও করিয়েছেন।
দলীয় সূত্র মতে, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে কমিটি গঠনের পরপরই। ২০১৪ সালের ৬ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের পর থেকেই এই দ্বন্দ¦ চলে আসছে। এতে করে জেলা নেতাকর্মীরা দুটি ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে একটি বড় অংশই জেলা সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের দিকে অবস্থান নিয়েছেন।
গত সোমবার রাতে ফারুক চৌধুরি নগরীর একটি রেস্টæরেন্টে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। তবে তার ডাকে সাড়া দেন মাত্র ১০ নেতা। যদিও জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে আছেন ৭১ জন সদস্য।
এমনকি তানোর-গোদাগাড়ীর ত্যাগী বেশ কয়েকজন নেতাও রয়েছেন আসাদের গ্রæপে। ফলে নিজ নির্বাচনী এলাকেও এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী অনেকটাই কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছেন। এরই মধ্যে সম্প্রতি দলীয় একটি কর্মসূচিতে জেলা সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ অভিযোগ করেন, ফারুক চৌধুরী রাজাকার পূত্র। তাঁর কারণে জেলার নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। তিনি রাজনীতির নামে বিএনপি-জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছেন।’ এমন অভিযোগের পরে জেলা সভাপতি ফারুক চৌধুরির সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক আসাদের দূরুত্ব আরো বেড়েছে।
এদিকে গত উপজেলা নির্বাচনে ফারুক চৌধুরীর ইন্ধনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বদরুজ্জামান রবæর ওপরে হামলার ঘটনাও ঘটে। রবæ ওই সময় ফারুক চৌধুরির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন।
সংসদ নির্বাচনের পরে তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানিকে ফারুক চৌধুরির ইন্ধনে কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেওয়া হয় না । এমনকি দলীয় সভাতেও গোলাম রাব্বানীকে সভাপতিত্ব করতে দেন না ফারুক চৌধুরি। উপজেলা নির্বাচনে গোলাম রাব্বানীর ভাই চেয়ারম্যান পদে অংশ নিলেও তাকে জোর করে ফারুক চৌধুরির ইন্ধনে পরাজিত করা হয় বলেও অভিযোগ করেন গোলাম রাব্বানী। এর বাইরে নির্বাচনের পরে গোলাম রাব্বানীর সমর্থকদের বাড়ি-ঘরেও হামলা চালানো হয় এমপির নির্দেশে।
সর্বশেষ গত ২৮ আগস্ট রাতে তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় মামুনের ব্যক্তিগত গাড়িটিও ভাঙচুর করা হয়।
এই হামলায় এমপি ফারুক চৌধুরীর ডানহাত বলে পরিচিত উপজেল চেয়ারম্যান ময়না জড়িত বলেও অভিযোগ উঠে।
এদিকে ফারুক চৌধুরি ও আসাদাকে ঘিরে যখন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগে বিরাজ করছে অস্থিরতা, সেই আগুনে যেন ঘি ঢালেন রাজশাহী সদর আসনের এমপি ও ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। একটি জাতীয় দৈনিকের কাছে ফজলে হোসেন বাদশা মন্তব্য করেন, ‘ ছাত্ররাজনীতির সময় বঙ্গবুন্ধর খুনি ফারুক-রশিদের ফ্রিডম পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ফারুক চৌধুরি। ফ্রিডম পার্টির মিছিলকে লাঠ নিয়ে ধাওয়া করা হয়েছিল। ধাওয়া খেয়ে পালিয়েছিলেন ফারুক চৌধুরী। ফজলে হোসেন বাদশাও ধাওয়া করেছিলেন ফারুক চৌধুরীকে।
গত ১৮ আগস্ট ফজলে হোসেন বাদশার এই ধরনের একটি মন্তব্য প্রকাশের পর রাজশাহীর রাজনীতিতে এমপি ফারুককে ঘিরে নতুন বিতর্ক শুরু হয়। এই বিতর্কের হাত থেকে বাঁচতে ফারুক চৌধুরী আইনি নোটিশও পাঠিয়েছেন বাদশাকে। পাশাপাশি তাঁর এলাকায় নিজ সমর্থকদের দিয়ে করিয়েছেন প্রতিবাদ সমাবেশও। ফলে ফারুক চৌধুরিকে ঘিরে রাজশাহীর রাজনীতির উত্তাপ যেন দিন দিন আরো ব্যাপক আকার ধারণ করছে।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘গত ২০ মাস ধরে ফারুক চৌধূরির অস্মতির কারণে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের কোনো সভা করা যায়নি। আমাদের রাজনীতিতে অনেকটা অচল অবস্থা বিরাজ করছে। তাঁর বিতর্কিত কর্মকাÐ কেন্দ্রে অবহিত করা হয়েছে। তিনি যেহেতু আমাদের চেতনার পরিপন্থি, কাজেই তার সঙ্গে রাজনীতিও করা যায় না।
এদিকে আইনি নোটিশ প্রদান সম্পর্কে জানতে চাইলে এমপি ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, একটি পত্রিকার হয়ে আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল ফারুক চৌধুরির অতিত রাজনীতি সম্পর্কে। আমি সেই সময়কার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছি। কিন্তু তিনি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন আইনের বাইরে গিয়ে। আমাকে তিনি আইনি নোটিশ পাঠাতে পারেন না। পাঠাতে হলে ওই পত্রিকাকে পাঠাতে পারতেন।
এমপি ফারুক চৌধুরি অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি যখন জেলা সাধারণ সম্পাদক ছিলাম, তখন রাজশাহী আওয়ামী লীগে কোনো কোন্দল ছিল না। কিন্তু আসাদ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন। তিনি এমপি বাদশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাজশাহীর রাজনীতি কুক্ষিগত করার চেষ্টা করছেন। যেন লিটনকেও রাজনীতি থেকে সরানো যায়। এ কারণে তাঁরা গভীর ষঢ়যন্ত্রে লিপ্ত।’
ফারুক চৌধুরি আরো বলেন, ‘দলীয় কর্মসূচির নামে কিভাবে চাঁদাবাজি করা হয়, সেটা সবাই জানে। লক্ষীপুরের ব্যবসায়ীরা আসাদের কারণে অতিষ্ঠ। তাই আমার সম্মতি ছাড়াই তিনি দলীয় কর্মসূচীর নামে যাচ্ছে-তাই করে যাচ্ছেন। তিনি আমাকে বলেন, আমি নাকি রাজাকারপুত্র। অথচ একাত্তরে আমার বাবার লাশ পাওয়া গিয়েছিলো বাবলা বনে। আমি শহীদের পুত্র হয়েও আমাকে শুনতে হয় রাজাকারপুত্র।
আবার আমার মা দীর্ঘ একযুগ ধরে বিছানাগত। তাকে নিয়েও কোটুক্তি করেন আসাদ। এসব যন্ত্রণা আমি নিজেই বয়ে বেড়াচ্ছি। একজন বিচারকের কাছে বিচার দিয়ে রেখেছি। আর নেত্রীকে বিচার দিব। তাঁরাই এর বিচার করবেন।’
ফারুক চৌধুরি বলেন, ‘আমি ৮৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে এসেছি। এরপর ৮৮ সালে রাজশাহীতে ফ্রিডম পার্টির তৎপরতা শুরু হয়। এটা সবাই জানে। তাহলে আমি কিভাবে ওইসময় ফ্রিডম পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম? এটি কেবলই আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত। এর জবাব আমি চেয়েছি। জবাব না দিতে পারলে মামলা করবো।’





একুশে মিডিয়া/এমএসএ

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages