রবিউল ইসলাম, ঝিনাইদহ:>>>
যুদ্ধাপোরাধী মামলা করায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী এলাকার রাজাকার আব্দুর রশিদের পরিবার কর্তৃক মামলার বাদীসহ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকীর প্রতিবাদ ও আসামীদের ফাঁসির দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কোলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান মোশররফ হোসেন।
এ সময় ৭১ সালে রাজাকার কৃর্তক নিহত শহীদ আজিবর মন্ডলের ছেলে ও যদ্ধপরাধী মামলার বাদী আনোয়ার হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা আজিবরের স্ত্রী নবিরণ নেছা, যুদ্ধাপোরাধী মামলার সাক্ষি হাজিরণ নেছা, বাদীর চাচা হাজী মহিউদ্দীন মন্ডল, চাচি হাজেরা খাতুন, জহুরা খঅতুন, বাদীর বোন সুফিয়া বেগম, শাহারণ নেছা, মোমেনা খাতুন,ও সাবেক ইউপি মেম্বর আলমগীর হোসেন মন্ডলসহ শালিয়া, হলিধানী, রামচন্দ্রপুর, প্রতাপপুর, গ্যাড়ামারা, নাটাবাড়িয়া, বিনোদপুর, রাধাকান্তপুর, রতনপুর, সোনারদাইড়, সাগান্না বেড়াদি, গাগান্না, কাশিপুর, রাজনগর ও বাঁশেরদাইড় গ্রামের শাতাধীক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ৭১ সালে রাজাকার কর্তৃক হলিধানী ইউনিয়নের কোলা গ্রামের একটি মুক্তিযোদ্ধা আশির উদ্দীনের পরিবার নির্যাতনের শিকার হয়। তারা ওই পরিবারের ৩ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আজিবর মন্ডল, হবিবার মন্ডল ও আনসার মন্ডলকে ধরে নিয়ে নির্মম ও নির্দয়ভাবে হত্যা করে।
নিহত স্বজনরা লাশও খুজে পায়নি। পরিবারটির পক্ষ থেকে আর্ন্তজাতিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করায় গত ২১ অক্টোবর তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান রাজাকার আব্দুর রশিদ মিয়া ও রাজাকার সাহেব আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ সদর উপজেলার কোলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ও সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য মরহুম আশির উদ্দীন রাজাকারদের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। যার নং ঝি/সি ৭৯/০৯।
বিজ্ঞ আদালত মামলাটি প্রাথমিক অনুসন্ধান করে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসিকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন। কিন্ত সেই মামলা রাজনৈতিক চাপে তুলে নিতে বাধ্য হয়। ওই পরিবারের সন্তান আনোয়ার হোসেন পিতৃ হত্যার বিচার পেতে ঢাকার যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেন। মানবতা বিরোধী অপরাধ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রাজ্জাক খান (বিপিএম সেবা পিপিএম) তদন্ত করে খবরের সত্যতা নিশ্চিত হন। এরপর গ্রেফতার হয় রাজাকার রশিদ ও সাহেব আলী।
চিহ্নিত দুই রাজাকার গ্রেফতারের পর মামলার বাদীসহ পরিবারের লোকজন নিরাপত্তহীনতায় ভুগছি। ইতিমধ্যে আমাদের বাড়ির আশে পাশে অপরিচিত লোকজন চলাচল করছে। রাজাকারের সন্তানরা দল বেধে মটরসাইকেল মহড়া দিচ্ছে। মামলা তুলে নিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে খুন জখমের হুমকী দেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তহীনতার অভাবে ঝিনাইদহ সদর থানায় জিডি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকায় আজ আমাদের জীবন ও সম্পদ হুমকীর মুখে। ৭১ সালের মতো রাজাকাররা আবারো হলিধানী ইউনিয়নে হত্যার নেশায় মেতে উঠতে পারে। তাই আমরা গনমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে গ্রেফতার হওয়া রাজাকারদের দ্রুত ফাঁসি ও রাজাকার পরিবারের সন্ত্রাসী সন্তানদের গ্রেফতারের দাবী জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য ৭১ সালে পাকিস্থানী পক্ষ ত্যাগ করে জীবনের ঝুকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আশির উদ্দীন দেশ স্বাধীনের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগ দেন। এ খবর জানতে পেরে আব্দুর রশিদ ও সাহেব আলীসহ ৫০ জন রাজাকার কোলা গ্রামে আজিবর মন্ডল, হবিবার মন্ডল ও আনসার মন্ডলের বাড়ি ঘেরাও করে।
মুক্তিযোদ্ধা আশির উদ্দীন ও তার আরেক ভাই মহিরুদ্দীনকে না পেয়ে আজিবর মন্ডল, হবিবার মন্ডল ও আনসার মন্ডলকে ধরে নিয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ঘোড়ামারা গ্রামের ব্রীজের নিচে নির্মমভাবে হত্যার পর লাশ গুম করে।
আসামীরারা এ সময় আমাদের ৫টি ও পাশ্ববর্তী গ্রামের আরো ২৫টি বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বলিয়ে দেয়।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment