‘৯ দিনের দুর্ঘটনায় ৭৩’ জনের মৃত্যু: নতুন সড়ক আইনে নয়, মামলা দণ্ডবিধিতে - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Saturday 23 November 2019

‘৯ দিনের দুর্ঘটনায় ৭৩’ জনের মৃত্যু: নতুন সড়ক আইনে নয়, মামলা দণ্ডবিধিতে


একুশে মিডিয়া, রিপোর্ট:>>>
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে স্বাধীন পরিবহনের একটি বাসচালকের বেপরোয়া গতিতে ৯টি তাজা প্রাণ ঝরলেও নতুন সড়ক আইনে মামলা দেয়নি পুলিশ। ১৮৬০ সালের পেনাল কোডের (দণ্ডবিধি) ২৭৯/৩৩৭/৩৩৮-ক/৩০৪-খ ধারায় মামলা হয়। =
এ ধারাটি জামিনযোগ্য এবং সর্বোচ্চ সাজা ৩ বছর বা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড। যদিও নতুন সড়ক আইন-২০১৮ অনুযায়ী, এ ধরনের অপরাধে ১০৫ ধারায় মামলার বিধান রয়েছে।=
এ ধারাটি জামিন অযোগ্য এবং সর্বোচ্চ সাজা ৫ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড। অথচ মামলার এজহারে চালক বেপরোয়া গতিতে বাসটি চালিয়ে মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিলে ৯ যাত্রীর মৃত্যু হয় বলে উল্লেখ করা হয়। এরপরও পেনাল কোডে মামলা করেছে পুলিশ।=
শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনশ্রীতে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় বৃহস্পতিবার এক নারী পথচারীর মৃত্যুতে শনিবার রাতে মামলার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই মামলাটিও পেনাল কোডে করার কথা জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা। পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, নতুন আইন কার্যকর করার কোনো আদেশ পাননি। এ কারণেই পেনাল কোডে মামলা করছেন। অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।=
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন আইন কার্যকর হওয়ার পর, ১৫ নভেম্বর থেকে ৯ দিনে অন্তত ৬২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৩ জনের প্রাণ গেছে সড়কে। নতুন আইনে মামলার জন্য পুলিশকে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। পুরনো আইনে মামলা করছেন তারা। পরিবহন নেতাদের চাপ ও আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) মোবাইল কোর্ট পরিচালনা শিথিল করেছে। অথচ এ সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা কমেনি। রাস্তায় গাড়ির নৈরাজ্য আগের মতোই রয়েছে। ফলে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো ও দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল তাতে অনেকটা ভাটা পড়ছে।=
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেন, পরিবহন নেতাদের চাপ ও আন্দোলনের মুখে সরকার পিছু হটেছে। এ কারণে নতুন আইনে দুর্ঘটনার মামলা হচ্ছে না। এতে দুর্ঘটনা কমেনি, কমেছে শুধু মামলার সংখ্যা। উল্টো সরকার পরিবহন নেতাদের দাবি মেনে নতুন আইনের ৯টি ধারা সংশোধনের আশ্বাস দিচ্ছে। এতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এর প্রমাণ গত কয়েক দিনে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির চিত্র।=
এ বিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের (নিসচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন যুগান্তরকে বলেন, ১ নভেম্বর থেকে পরিবহন খাতে যেসব মামলা হবে তা সড়ক পরিবহন আইনে হতে হবে। কিন্তু নতুন আইনে মামলা না করাটা দুঃখজনক। তিনি বলেন, পরিবহন শ্রমিকরা আন্দোলনের মাধ্যমে শক্তি প্রদর্শন করল। সরকার ও জনগণকে জিম্মি করল- এরপরও নতুন আইনের প্রয়োগ না হলে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। ফলে দুর্ঘটনা কমবে না, বাড়বে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মনে হচ্ছে, পরিবহন নেতাদের চাপের মুখে সরকার অসহায়ত্ব দেখাচ্ছে। পরিবহন খাত শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার লক্ষ্যে আইনটি পাস হলেও তা অর্জিত হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।=
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান ড. মো. কামরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, নতুন আইন কার্যকর করা হচ্ছে। তবে দু-একটি ধারা শিথিল করতে বলা হয়েছে। এতে হয়তো মামলা সংখ্যা কিছুটা কমতে পারে। তবে দুর্ঘটনাও কমেছে। যে দু-একটি দুর্ঘটনা হচ্ছে তা ট্রাফিক আইন ভঙ্গ ও চালকের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে হচ্ছে।=
এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শ্রীনগরে যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে সেই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, গাড়ির ধরন অনুযায়ী অর্থাৎ ভারি গাড়ির জন্য ভারি লাইসেন্সধারী চালক থাকার নিয়ম রয়েছে- সেই নিয়মটি ৩০ জুন পর্যন্ত শিথিল করা হয়েছে। এখন লাইসেন্স থাকলেই গাড়ি চালাতে পারবেন। এর কারণে দুর্ঘটনার দায় কার এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।=
জানা গেছে, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পাস হওয়ার ১৩ মাস পর ১ নভেম্বর কার্যকরের ঘোষণা দেয় সরকার। এরপর সচেতনতা বাড়াতে কার্যকরের মেয়াদ দুই দফায় ১৪ দিন মৌখিকভাবে পিছিয়ে দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যেও সড়ক আইনটি মোবাইল কোর্টের তফসিলভুক্ত হয়নি। ১৭ নভেম্বর সড়ক আইনটি তফসিলভুক্ত হলে ১৮ নভেম্বর মোবাইল কোর্ট শুরু করে বিআরটিএ।=
প্রথম দিনে ৮৮টি মামলা ও ১ লাখ ২১ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করেছে। ২টি গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠিয়েছেন বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেটরা। পরের দিন ৭৯টি মামলায় ১ লাখ ১৯ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এবং তিনটি মোটর যানের কাগজপত্র জব্দ করা হয়। এরপরই বিআরটিএর মোবাইল কোর্টকে অভিযান শিথিল করতে মৌখিকভাবে পরামর্শ দেয়া হয়। তবে পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।=
অপরদিকে পুলিশ নতুন আইনে মামলা করেনি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (প্রশাসন ও অপারেশন্স) নিশাত রহমান মিথুন যুগান্তরকে বলেন, নতুন আইনে আমরা মামলা করছি না। আমরা নতুন আইন মানতে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করছি।=
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৫ নভেম্বর থেকে আইন কার্যকরের দিনই দেশের ৮টি স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত হন। ১৬ নভেম্বর ৬টি দুর্ঘটনায় ৮ জন, ১৭ নভেম্বর ১১টি দুর্ঘটনায় ১০ জন, ১৮ নভেম্বর ৯টি দুর্ঘটনায় ১০ জন, ১৯ নভেম্বর ৫টি দুর্ঘটনায় ৪ জন, ২০ নভেম্বর ৮টি দুর্ঘটনায় ১০ জন, ২১ নভেম্বর ৭টি দুর্ঘটনায় ৮ জন এবং ২২ নভেম্বর ৮টি দুর্ঘটনায় ১৬ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে সড়ক দুর্ঘটনায়। ওই ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন খান বাদী হয়ে শ্রীনগর থানায় মামলা করেন।=
এজাহারে দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে বাস চালিয়ে মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিয়ে ৯ জনকে মারার অভিযোগ আনা হয়। মামলা করা হয় পেনাল কোড-১৮৬০-এর ২৭৯/৩৩৭/৩৩৮-ক/৩০৪-খ ধারায়। অথচ নতুন আইনের ১০৫ ধারায় এ দুর্ঘটনার মামলা হওয়ার কথা ছিল। এ ধারাটি জামিন অযোগ্য এবং ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে। পুলিশ নতুন আইনে না করে পেনাল কোডে মামলা করেছে।=
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শ্রীনগর থানার ওসি মো. হেদায়াতুল ইসলাম ভূঞা যুগান্তরকে বলেন, সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করার আদেশ পাইনি। তাই পেনাল কোডে মামলা করেছি। নতুন আইন কার্যকরের আদেশ পেলে সেই অনুযায়ী চার্জশিট দেয়া হবে।=
বৃহস্পতিবার সকালে হাঁটতে বেরিয়ে বনশ্রীতে কাভার্ড ভ্যানের চাপায় আনোয়ারা বেগম (৬৫) নামের একজন বৃদ্ধা মারা গেছেন। ওই ঘটনায় চালক গাড়ি রেখে পালিয়ে গেছে। দু’দিন পর শনিবার রাতে ওই ঘটনায় পুরনো আইনেই মামলার প্রক্রিয়া শুরু করে পুলিশ। এ বিষয়ে পুলিশের এসআই রেজাউল করিম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, কুমিল্লায় লাশ দাফন করে আত্মীয়-স্বজন আসতে সময় লাগায় মামলা করতে সময় বেশি লেগেছে। আমরা নতুন আইনে নয়, পুরনো আইনের (পেনাল কোড) ধারায় মামলা নিচ্ছি।=
 
 
 
 
একুশে মিডিয়া/এমএসএ=

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages