অবসান ‘গল্প’ নওমি - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Monday, 9 December 2019

অবসান ‘গল্প’ নওমি


একুশে মিডিয়া, মুক্তমত রিপোর্ট:>>>
লেখিকা-ফাতেমা আক্তার নওমি:
আজ আমার ৬৫ বছর বয়সী ফুপিমণির বিয়ে।না খুব জমকালো আয়োজন নয়৷খুব সাধারন সুন্নতীভাবে বিয়ের কাজটা সমাধান হলো। ফুপিমণির ছেলেমেয়ের সংখ্যা ৪ জন। ফুপা মারা যাওয়ার পর খুব কষ্টে মানুষ করেছেন এই ৪ ছেলেমেয়েকে।
বিগত ২০ বছর আগে একটা রোড এক্সিডেন্টে মারা যান ফুপা। ফুপিমণির সামান্য একটা স্কুলের চাকুরী ছিল। তা দিয়ে খুব টেনেটুনে সংসারটা বাঁচিয়ে সন্তানের লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন।ফুপা মারা যাওয়ার সময়ও ফুপি বেশ যুবতী দেখতে ছিল। সবচেয়ে যে জিনিসটি সবার নজর কেড়ে নিতো তা হলো ফুপির চুল। যেমনি লম্বা ঘন, তেমনি হতো তার লম্বা বেরুনী।
আমি অবশ্য ছোটবেলা থেকেই ফুপিকে চুল্লিফু বলে ডাকি। বড়দের ভাষায় ছিল কেশবতী।তখন কতো লোক যে ফুপিকে বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে তা হিসেব করা কঠিন। ফুপির সে বরাবরের মতোই এক উত্তর, "আমার ছেলেমেয়েকে নিয়েই আমার জীবন। আমি কখনওই দ্বিতীয় বিয়ে করার কথা চিন্তাও করি না।আর করবোও না এদেরকে মানুষের মতো মানুষ করাই আমার স্বার্থকতা। " অনেক চেষ্টার পরেও কেউ পারেনি রাজি করাতে। কতো লোকের যে মন ভেঙেছে বলা দুষ্কর। 
সন্তানদের মানুষ করেছেন বটে। সবাই উচ্চশিক্ষিত হয়ে পাড়ি জমিয়েছেন আমেরিকা, কানাডা,অস্ট্রেলিয়াতে।দুই ছেলে কানাডা ও আমেরিকাতে বউ নিয়ে বেশ সুখেই আছেন। মাঝে মাঝে সময় পেলে নাতি-নাতনিদের সাথেও কথা হয় ভিডিও কলে।ওদের ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য ফুপির এখনো হয়নি।আর রইলো বাকি দুই মেয়ে। বড় মেয়ে স্বামীর সুবাদে অস্ট্রেলিয়াতে বাধ্য হয়েই থাকতে হচ্ছে। এটাই তো মেয়েদের নিয়ম বর যেখানে রাখবে সেখানেই তার স্থায়ী নিবাস।ছোট মেয়ে এখনো পড়াশোনা করছে। তবে মায়ের সাথে থেকে নয় হলে থেকে। গ্রামে কি আর ভালো ইউনিভার্সিটি আছে? গ্রামেই ফুপি থাকে৷ বেশ গোছালো সুন্দর একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি।বই পড়ে,ফুল বাগানে পানি দিয়ে,ভিডিও কলে কথা বলে ফুপির জীবন বেশ কেটে যায়।এতো বড় বাড়িতে উনাকে দেখার জন্য মাত্র দুজন মানুষ। জলিল মিয়া আর হলো শাহীনী।এরা তো আর সারাদিন থাকে না টুকটাক যা কাজ করে দিয়ে নিজেদের গন্তব্যে চলে যায়৷ সবারই তো একটা সংসার থাকে তাই না? গত ঈদে পরিবার সমেত ফুপির বাড়িতে গিয়ে হাজির হলাম। আমাদের দেখে সে কি যে খুশি! বলে বোঝাতে পারবো না। আমার তো বাড়িটা আর চারিদিকের পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছিল ফুপির মতো সুখী মানুষ বোধহয় পৃথিবীতে ২য় টা আর হয় না। কিন্তু মানুষ হিসেবে সে খুব একা।খুব অসহায়। এ বিষয়টা বেশ উপলব্ধি করলো বাবা। ফুপির একজন সঙ্গী দরকার। কিন্তু, কে ই বা তাকে সঙ্গ দিবে? সে কারও বাড়িতে বেড়াতেও যেতে পারে না শুধুমাত্র একজন সঙ্গীর অভাবে। ফুপি বেশ কথাপটুও। আমরা চলে আসার দিন যে কিভাবে কান্না করছিলো। মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষটি ফুপি। এ বয়সে কাঁদলে ঠিক মানায় না! বুকের ভেতরটা কেমন নাড়া দিয়ে ওঠে। তাই বাবা-ই দ্বায়িত্ব নিয়ে আমার ফুপাতো ভাইবোনদের বুঝিয়ে ফুপির বিয়ে দেওয়ার সীদ্ধান্তটা নিলো। আত্মীয়-স্বজনের মানাতে মানাতেও বেশ কয়েক মাস লেগে গেছে।সবারই একটা কথা, "এ বয়সে বিয়ে! এ কেমন কথা? নতুন নতুন পাগলের কথা! কয়দিন পর কবরে চলে যাবে।
এ বয়সে আবার বিয়ে করার শখ কতো বুড়ির।" বাবা নিজেও বেশ কটুকথার সম্মুখীন হয়েছে। কেউ বিষয়টিকে সহজভাবে দেখতে চাইলো না। সবচেয়ে বেশি রাগ দেখিয়েছে, ফুপির ভার্সিটি পড়ুয়া ছোট মেয়ে রূম্পা আপু। সে বাবার সাথে কি রাগ! আর কতো কি বলেছে। বাবা নাকি মানসম্মান খাওয়ার ধান্দা করছে, এ বয়সে মায়ের বিয়ে মেনে নিতে পারে এতো বড় মেয়ে? তবে শত অপমান, আঘাত পাওয়ার পরেও বাবা থেমে থাকেনি। ঠিকই পাত্র দেখে যাচ্ছিল বাবা। অবশেষে সব বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে সফল হয়েছে বাবা।ফুপির মতোই একজন স্ত্রী-বিপত্নীক ব্যক্তিকে বিয়ের পাত্র হিসেবে পছন্দ করে। বিয়ের কার্য সমাধা করে বাবা। সেদিন বাবার প্রতি শ্রদ্ধাবোধটা খুব বেড়ে গিয়েছিলো। এ আধুনিক যুগেও পিছিয়ে থাকা মানুষগুলোকে হারিয়ে দিলো বাবা? কি আশ্চর্য! বাবা সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছে। 
নিঃসঙ্গ জীবনে বিয়েটা কোনো অন্যায় নয়। একাকীত্ব খুব খারাপ একটা জিনিস। একাকীত্বের জন্য কোনো বয়স লাগে না।হোক একটা ছোট বাচ্চা বা তরুণ-তরুণী কিংবা মধ্যবয়সী অথবা বৃদ্ধ। সবারই তো একটা মন বলে কিছু থাকে তাই না! আমরা যদি কখনও উপলব্ধি করতে পারি তার অবস্থানে গিয়ে? তাহলে হয়তো বুঝতাম নিঃসঙ্গতা কতটা কষ্টের। কতটুকু যন্ত্রনার! বিয়ে বলতেই আমরা সমাজের মানুষেরা কেন শুধুমাত্র সেক্সুয়াল ব্যাপারগুলো বুঝি? বিয়ে মানে সামাজিক বন্ধন, একটা সামাজিক স্বীকৃতি। নিঃস্বার্থভাবে পাশে থাকার সঙ্গী। প্রতিটি সকাল মানে একসাথে চা খেতে খেতে খবরের কাগজ পড়া।যে কোনো ব্যাপারে একসাথে স্বীদ্ধান্ত গ্রহণ করা। সারাদিনের জমে থাকা কথাগুলো শেয়ার করার মতো একজনকে পাশে পাওয়া।কিংবা পুরনো দিনের চাঁপা পড়ে থাকা স্বপ্নগুলোকে প্রকাশ করা। কতো স্মৃতি, কতো দুঃখ,বেদনা, আনন্দের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করার মতো শুধু একটা মানুষ।
একটা নিঃস্বার্থ সঙ্গী। প্রতিটি মানুষেরই খুব দরকার। এখন চাইলেই ফুপি আত্মীয়দের বাড়িতে বেড়াতে আসতে পারে।তার যে ভরসা করার মতো একজন মানুষ আছে।কারণ এটা বিশ্বাস। ফুপি পড়ে যেতে গিয়েও পড়বে না।কারণ তার ভরসার হাত হতে পারে তারই মতো বৃদ্ধ কিন্তু তাকে আগলে রাখবে ঠিকই। সে আর একা নয় পাশে তার অবলম্বন স্বামী আছে।বিশ্বাস,দ্বায়িত্ব, ভরসার মানুষ সে।যার সাথে নিঃসঙ্গ জীবনের অবসান ঘটিয়ে জীবনের শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করবেন একদিন।
আমরা আমাদের চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গিকে বদল করলেই তৈরি হতে পারে একটা সুখী সুন্দর সমাজ।কেটে যেতে পারে সমস্ত একাকিত্বের রেশ। ভালো থাকবে সমস্ত একা জীবন বয়ে বেড়ানো মানুষগুলো।

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages