![]() |
উজ্জ্বল রায়, জেলা নড়াইল প্রতিনিধি:>>>
নড়াইলের কালিয়ায় ইটভাটার এক শ্রমিককে অপহরণের পর আটকে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় কৃতদাসের মতো কোমড়ে শিকল বেঁধে ইট ভাটায় শ্রমিকের কাজ করতে বাদ্য করা হয়েছে। অপরদিকে রাতে পায়ে ও হাতে শিকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (১৯ জানুয়ারী) রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার বড়নাল গ্রাম থেকে শিকল বাঁধা অবস্থায় শ্রমিক সালাউদ্দিন গাজীকে (২৫) বন্দিদশা থেকে পুলিশ উদ্ধার করে। ওই শ্রমিককে ৫০দিন ধরে এভাবেই শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছিল। উদ্ধার হওয়া শ্রমিক খুলনার কয়রা গ্রাম ও থানার দেলবার গাজীর ছেলে।এ ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অপহরণের ৫০দিন পর নির্যাতিত শ্রমিকের পিতা দেলবার গাজী গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ছেলের সন্ধান পেয়ে কালিয়া থানার দ্বারস্থ হয়। খবর পেয়ে রোববার (১৯ জানুয়ারী) রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার বড়নাল গ্রামে এএসপি (সার্কেল) রিপন চন্দ্র সরকারের নেতৃত্বে ডিবি, থানা ও বড়নাল ফাঁড়ির পুলিশ যৌথঅভিযান চালিয়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় শ্রমিক সালাউদ্দিন গাজীকে বন্দিদশা থেকে উদ্ধার করে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ইলিয়াছাবাদ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মল্লিক মনিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসীর সুত্রে জানা যায়,তালিকাভূক্ত রাজাকার নুরুল হকের(নুরু রাজাকার) পুত্র,নব্য আ’লীগ নেতা ও ইলিয়াছাবাদ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মল্লিক মনিরুল ইসলাম গত ৩০ নভেম্বর’১৯ বরিশালের মুলাদী থেকে র্যাব পরিচয়ে শ্রমিক সালাউদ্দিনকে অপহরণ করে এনে শিকল দিয়ে বেঁধে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে নির্যাতন চালাতো।পুলিশের নিকট আটককৃত মল্লিক মনিরুল ইসলামের পরিবারের দাবি, শ্রমিক সালাউদ্দিনের শ্বশুরের নিকট ভাটার মালিক মল্লিক মনিরুল ইসলাম টাকা পেত।
ধূর্ধর্ষ প্রকৃতির মল্লিক মনিরুল ইসলাম উপজেলার বিলদুড়িয়া হাটখোলা বাজার এলাকায় স্থাপন করেছেন এসএমবি ব্রিকস। ইতিপূর্বে সাবেক এ চেয়ারম্যানের শর্টগানের গুলিতে নিহত যুবলীগ নেতা এনামুল হক হত্যা মামলার প্রধান আসামীও তিনি। প্রভাবশালী মনিরুল স্থানীয় বড়নাল দাখিল মাদরাসার জায়গা ও তোকন মল্লিকের জায়গা দখল করে মাদরাসার পাশেই অনুমোদন বিহীন এ ইটভাটা স্থাপন করেছেন।
ইটভাটায় দিনভর হাড়ভাঙা খাটুনির পরও পান থেকে চুন খসলেই শ্রমিকদের ওপর চলে অত্যাচার-নির্যাতন। নির্যাতিত সালাউদ্দিন গাজীর শ্বশুরের নিকট কতিথ পাওনা টাকার অজুহাতে মল্লিক মনিরুল ইসলাম তাকে দীর্ঘদিন ধরে বর্বর মধ্যযুগীয় কায়দায় শিকলে বেঁধে রেখে ভাটায় কাজ করাতে বাধ্য করাচ্ছিল।
কাজ করতে না চাইলে চলত শারীরিক নির্যাতন। ৫০দিন যাবত মনিরুল শ্রমিক সালাউদ্দিন গাজীকে আটকিয়ে শিকল দিয়ে বেঁধে তালাবদ্ধ করে রাখে। এই শিকলবদ্ধ অবস্থায় ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতে তাঁকে বাধ্য করা হয়েছে। অবশেষে এএসপি সার্কেল রিপন চন্দ্র সরকারের নেতৃত্বে শিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় সালাউদ্দিন গাজীকে মনিরুলের বড়নাল গ্রামের বাড়ীর পাশে আরেক বাড়ী থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়।
এ প্রসঙ্গে শ্রমিক সালাউদ্দিন গাজী যুগান্তরকে বলেন,‘দেড় মাস আগে মল্লিক মনিরুল ইসলামসহ অন্যান্যরা বরিশালের মুলাদী থেকে র্যাব পরিচয়ে আমাকে অপহরণ করে ভাটায় নিয়ে আসে। আমি পালিয়ে যেতে পারি,এ আশঙ্কায় ৫০দিন ধরে আমার ওপর নির্যাতন চালিয়েছে।অপরদিকে পায়ে,হাতে ও কোমরে লোহার শিকল বেঁধে তালাবন্ধ করে ই্টভাটায় আটকে রেখে কাজ করানো হয়। আমার শরীর থেকে একটি মুহূর্তের জন্যও শিকল খোলা হয়নি।’।
এ বিষয় এএসপি (সার্কেল) রিপন চন্দ্র সরকার বলেন,‘অপহৃত ও নির্যাতিত সালাউদ্দিন গাজীকে অভিযুক্ত সাবেক চেয়ারম্যান মল্লিক মনিরুল ইসলামের বাড়ীর পাশে থেকে শিকল বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
আটককৃত মনিরুলসহ অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জনকে আসামী করে কালিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment