একুশে মিডিয়া, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:>>>
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ভূল ডিগ্রি নিয়ে তৈরি হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। অভিযোগ রয়েছে কর্তৃপক্ষের সঠিক নজরদারির অভাবেই এক মাসের বেশী সময় ধরে জুনিয়র সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডাঃ ওহিদুজ্জামান আজাদ চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।
জানা যায়, জানুয়ারী মাসের প্রথম দিকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে বদলী হয়ে আসেন জুনিয়র সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডাঃ ওহিদুজ্জামান আজাদ। তিনি চিকিৎসা ক্ষেত্রে এমবিবিএস, এমসিপিএস এবং সার্জারীতে এমএস ডিগ্রি অর্জন করেছেন। কিন্তু সদর হাসপাতালে যোগদানের পর থেকেই দ্বিতীয় তলায় তার চেম্বারের নেম প্লেটে লিখে রেখেছেন এমবিবিএস, এফসিপিএস, এমএস (সার্জারী)।
এমনকি তার এফসিপিএস ডিগ্রি না থাকলেও শহরের হামদহ এলাকার ইউনাইটেড ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের মাধ্যমে শহরে মাইকিং করে প্রচারণা চালানো হচ্ছে এফসিপিএস বলে, এমনকি পোস্টারেও লেখা হয়েছে এফসিপিএস। অন্য দিকে তিনি জুনিয়র সার্জারী বিশেষজ্ঞ হলেও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে লেখা হচ্ছে বিশেষজ্ঞ, যেটা অত্যন্ত ভূল।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ডিগ্রিতে এমন বিড়ম্বনায় চরম বিড়ম্বিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিষয়টি নিয়ে সদর হাসপাতালের জুনিয়র সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডাঃ ওহিদুজ্জামান আজাদ জানান, যে পিয়ন আমার নেম প্লেট লিখেছেন সেই ভুল করে ডিগ্রিও ভুল লিখেছে। তাকে সংশোধন করতে বলা হয়েছিল। হয়তো সে করেনি বলে এমনটি হয়েছে। তবে ক্লিনিকের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথমে অনেক ডায়াগনোস্টিক চেম্বার আমাকে ডেকেছিল। কিন্তু আমি শুধু ইউনাইটেড ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে গিয়েছি পরিচিত থাকার কারণে। তারা প্রথমে ডিগ্রি ভুল লিখলেও পরে আমি ঠিক করতে বলেছি। কিন্তু তারা কেনই বা ঠিক করেনি আবার কেনই বা ভুল ডিগ্রি লিখে মাইকিং করেছে সেটা আমার জানা নেই। হতে পারে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এমনটি হতে পারে। তবে এ বিড়ম্বনার জন্য আমি অত্যন্ত দুঃখিত।
এ বিষয়ে ইউনাইটেড ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের অন্যতম কর্নধার হাবিব মোবাইল ফোনে জানান, আমরা সদর হাসপাতালে তার নেম প্লেটের ডিগ্রি দেখে লিখেছিলাম। সে অনুসারেই মাইকিং করা হয়েছিল। পরে ডাক্তার সাহেব নিষেধ করলে আমরা ডিগ্রি টা ঠিক করে দিয়েছি। হাসপাতাল কিভাবে ভুল করলো ? আগে তাদেরটা দেখেন তার পরে আমাদেরটা দেখেন। কারণ তাদেরটা দেখেই আমরা এটা লিখেছিলাম।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ অপূর্ব কুমার সাহা বলেন, আমিও জানতাম ওহিদুজ্জামান সাহেব এফসিপিএস ডিগ্রি করা। কিন্তু সেটা আসলে সঠিক না। তিনি মুলত এমসিপিএস ও এমএস ডিগ্রি করা। যাই হোক কোন কারণে হতে পারে এমনটি। তবে বিষয়টা ঠিক করে নিয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্তাবধায়ক ডাঃ আয়ুব আলীকে, ডাক্তার আয়ুব আলী বলে সম্বোধন না করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। গালমন্দ করেন এই প্রতিবেদককে। বলেন, পরে আসেন। এখন কিছু বলবো না।
তত্তাবধায়কের এমন আচরণ ও চিকিৎসকের ভুল ডিগ্রি লেখা বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য বিভাগের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ডাঃ রাশেদা সুলতানা জানান, ডাক্তারকে ডাক্তার বলে সম্বোধন করতেই হবে এমন কোন নির্দিষ্ট বিধান নেই। তবে নিজের জায়গা থেকে যে কেউ তার নিজের মত করে সম্মান দাবি করতে পারে। তত্তাবধায়ক আয়ুব আলী’কে ডাক্তার না বলায় তিনি যে খারাপ ব্যবহার করেছেন সেটি সঠিক হয়নি। তিনি জানান, চিকিৎসক ডাঃ ওহিদুজ্জামান আজাদ এর ডিগ্রিতে যে ভুলটি লেখা হয়েছে সেটি কাম্য নয়। কেন এমনটি হল বিষয়টা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
একই কথা বলেন, ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগম।তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর হাসপাতালের কয়েকজন মেডিকেল অফিসার জানান, স্যারের এমন ভুল ডিগ্রি লেখাতে আমরাও কিছুটা বিভ্রান্ত হয়েছি। রোগীরা তো হতেই পারে। এটা কোন ভাবেই ঠিক হয়নি।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment